1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পথঘাটের বিকট শব্দ মানুষের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে

৯ মার্চ ২০২০

পিলে চমকানো বিকট শব্দ শোনার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ-ভারতের মতো দেশের মানুষের কাছে নতুন নয়৷ ইউরোপেও অনেক মানুষ এই সমস্যায় কাতর৷ ধ্বনিবিজ্ঞানীরা শব্দের মাত্রা, ফ্রিকুয়েন্সি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অনেক গবেষণা চালাচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/3Z5bq
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Thomas

আপাতদৃষ্টিতে আওয়াজ বিপদের কারণ না হলেও আমাদের শরীর বিকট শব্দকে বিপদের কারণ হিসেবেই গণ্য করে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ইউরোপের এক পঞ্চমাংশ মানুষকে এমন বিকট শব্দ সহ্য করতে হয়, স্বাস্থ্যের উপর যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে৷ বাকি বিশ্ব সম্পর্কে যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য তথ্য না থাকলেও এই সমস্যা যে শুধু ইউরোপের নয়, তা বলাই বাহুল্য৷

ঠিক কোন মাত্রায় শব্দ বিকট মনে হয়, ড্রেসডেন শহরের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সে বিষয়ে গবেষণা করছেন৷ প্রোফেসর এরচান আল্টিনসোই এক কম্পিউটারের মাধ্যমে গাড়িতে করে এক ভারচুয়াল যাত্রার নকল করছেন৷ স্বেচ্ছাসেবীরা কোন ধরনের শব্দ শুনলে সংবেদনশীল হয়ে পড়েন, এভাবে তা বোঝার চেষ্টা চলছে৷

এই শব্দরোধী গবেষণাগারের দেওয়াল বা মেঝে ভেদ করে কোনো শব্দ আসে না৷ গবেষকরা একটি জালের উপর হাঁটতে পারেন৷ সে কারণে ল্যাবের ভিতরে কোনো শব্দতরঙ্গের প্রতিফলন ঘটে না৷ ফলে গবেষকরা অত্যন্ত নিখুঁতভাবে শব্দের পরিমাপ করতে পারেন৷ কিছু বৈশিষ্ট্য যে আমাদের বিশেষভাবে বিরক্ত করে, তাঁরা সে বিষয়ে সচেতন৷ ধ্বনিবিজ্ঞানী হিসেবে প্রোফেসর এরচান আল্টিনসোই মনে করিয়ে দেন, ‘‘উচ্চ মাত্রার ফ্রিকুয়েন্সি সব সময়ে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে বলে সমস্যা হয়৷ সময়ের পার্থক্য অনুযায়ীও আমাদের প্রতিক্রিয়া বদলে যায়৷ আমরা এ বিষয়ে অত্যন্ত স্পর্শকাতর৷ বিকট আওয়াজের মধ্যে বার বার পরিবর্তন হলে এবং সেটি লাগাতার না হলেও আমাদের বেশি সমস্যা হয়৷ যেমন কোনো ট্রেন যদি প্রতি পনেরো মিনিট পরপর চলাচল করে, তাহলে এমনটা হয়৷’’

ডেসিবেলের মাধ্যমে শব্দের পরিমাপ করা হয়৷ শব্দের চাপ যত বাড়ে, আওয়াজের মাত্রাও তত বেশি মনে হয়৷ যেমন একটি মোমবাতির শিখা নিভিয়ে দিতে ৯০ ডেসিবেল মাত্রাই যথেষ্ট৷ লাউডস্পিকারও শব্দতরঙ্গ সৃষ্টি করে৷ দশ ডেসিবেল পার্থক্য হলেও আমাদের কাছে সেই শব্দের তীব্রতা দ্বিগুণ অথবা অর্ধেকের বেশি বলে মনে হয়৷

তবে শুধু শব্দের চাপ নয়, তার ফ্রিকুয়েন্সিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ পর পর কত দ্রুত গতিতে শব্দ তরঙ্গের নির্গমন হচ্ছে, ফ্রিকুয়েন্সি তা নির্দেশ করে৷ প্রোফেসর আল্টিনসোই বলেন, ‘‘মানুষ হিসেবে আমরা উচ্চ ফ্রিকুয়েন্সির ক্ষেত্রে অত্যন্ত সংবেদনশীল৷ বিশেষ করে এক থেকে পাঁচ কিলোহার্ৎস মাত্রায় আমরা অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়ি৷''

সে কারণে আওয়াজের মূল্যায়নে পার্থক্য দেখা যায়৷ ডিবিএ নামের স্কেল বা মানদণ্ড মানুষের শ্রবণের অনুভূতি বিবেচনা করে৷ যে ফ্রিকুয়েন্সিতে শব্দ ভালো শোনা যায়, সেটি আমাদের বিশেষভাবে বিরক্ত করে৷

সড়ক পরিবহণের ক্ষেত্রে ডাব্লিউএইচও-র স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৫৪ ডিবিএ-কে ২৪ ঘণ্টার জন্য গড় মাত্রা হিসেবে ধরা হয়৷ রাতে সেই মাত্রা ৪৫ ডিবিএ-র বেশি হলে চলবে না৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী ইউরোপের অনেক সড়ক সেই মানদণ্ড ছাড়িয়ে যায়৷ ড্রেসডেন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো. আন্দ্রেয়াস সাইডলার বলেন, ‘‘এই হিসেব অনুযায়ী প্রায় চার শতাংশ করোনারি হৃদরোগ, অর্থাৎ হার্ট অ্যাটাকের মতো অবস্থার জন্য সড়ক পরিবহণের আওয়াজ দায়ী৷ অর্থাৎ বছরে প্রায় ৫০,০০০ মানুষের হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর জন্য রাজপথের শব্দকে দায়ী করা যেতে পারে৷’’

অর্থাৎ সড়ক পরিবহণের ক্ষেত্রে শব্দের উচ্চমাত্রা বেঁধে দেবার সময় এবার এসে গেছে৷

মানুয়েল গ্যার্বার/এসবি