1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পথের শেষে আঙ্গেলা ম্যার্কেল

১ জানুয়ারি ২০২০

দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে জার্মানির ক্ষমতায় আছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ সম্প্রতি নানা কারণে তার সম্ভাব্য পদত্যাগের খবর বাতাসে ভাসছে৷ বিশেষ করে তাঁর দল সিডিইউ ও জোটসঙ্গী এসপিডির জনপ্রিয়তার নিম্নগতি আটকাতে আগেই সরে যেতে পারেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/3VYvi
Brüssel EU Gipfel Angela Merkel
ছবি: Getty Images/AFP/A. Oikonomou

যদি এ গুঞ্জন সত্য হয় তবে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তাঁর অর্জন বা সরকার প্রধান হিসেবে তিনি কী কী অর্জন করতে পারতেন তা আলোচনায় চলে আসবে৷ আলোচনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠতে পারে, কে হতে যাচ্ছন তার উত্তরাধিকারী?

২০২১ সালে ম্যার্কেলের এবারের মেয়াদ শেষ হবে৷ জোটের একটি বড় অংশ এখনো চায় তিনি ওই মেয়াদ শেষ করেন৷

রাজনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন

ম্যার্কেল ২০০৫ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসেন৷ তারপর অনেক সময় গড়িয়েছে, শুধু জার্মানি নয় পুরো বিশ্ব অনেকটা পথ এগিয়েছে৷ কয়েক দশক ধরে একভাবে চলে আসা জার্মানির রাজনীতিতে এসেছে অনেক বৈচিত্র৷

উত্থান হয়েছে চরম ডানপন্থি দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি)৷ এবার প্রতিটি অঙ্গরাজ্য থেকে এএফডি পার্লামেন্টে প্রতিনিধি পাঠাতে পেরেছে৷ এমনকি পূর্বের কয়কটি অঙ্গরাজ্যে তারাই এখন দ্বিতীয় প্রভাবশালী দল৷ পার্লামেন্টেও এএফডি এখন শক্ত বিরোধীদল৷

ঘৃণিত চরিত্র, নাকি পশ্চিমা বিশ্বের ত্রাণকর্তা? 

আঙ্গেলা ম্যার্কেল পশ্চিমা বিশ্বের সামাজিক ও রাজনৈতিক চিন্তাধারায় বড় ধরণের পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন৷ বিষয়টা শুধু এমন নয় যে, এক সময়ের পুরুষতান্ত্রিক একটি দলের প্রধান হয়ে নারী হিসেবে তিনি বড় কিছু করে ফেলেছেন৷ এমনকি তিনি নিজেকে নারীবাদীও মনে করেন না৷

তবে এটা ঠিক, ১৪ বছর ধরে জার্মানির মত দেশে ক্ষমতার কেন্দ্রে তার অবস্থান নারীদের জন্য দারুণ এক অনুপ্রেরণা৷ বিশেষ করে রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ ও গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে৷ যদিও একই সঙ্গে তিনি সমাজ ও রাজনীতিতে নারীদের এগিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা বাধাও বটে৷ কারণ, তিনি পার্লামেন্টে নারী কোটার বিরুদ্ধে৷

তার মতে, ‘‘কোটা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু অবশ্যই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত সমতা৷'' অথচ তার দল সিডিইউ পার্লামেন্টে নারী কোটার দাবি জানিয়েছে৷

চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সবচেয়ে বেশি  আলোচিত সমালোচিত সিদ্ধান্ত  হলো ২০১৫ সালে শরণার্থীদের জন্য জার্মানির দরজা খুলে দেওয়া৷পার্লামেন্টের বক্তব্যও এক্ষেত্রে শোনা হয়নি৷ অবশ্য ম্যার্কেলের জীবনী লেখক রাল্ফ বোম্যান অনেক দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেছেন, সিদ্ধান্ত নিতে চ্যান্সেলর ভিন্নমতের গুরুত্ব দেন৷

ম্যার্কেলের সিদ্ধান্তে ইউরোপে বিশেষ করে জার্মানিতে আশ্রয় পাওয়া শরণার্থীরা যেকোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়লে তার দায় ম্যার্কেলকে নিতে হচ্ছে৷ বিশেষ করে এএফডি এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সরব৷

শরণার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়ার কারণে কারো কারো কাছে ম্যার্কেল ঘৃণিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন৷ একই সঙ্গে কেউ কেউ তাকে পশ্চিমা বিশ্বের ত্রাণকর্তা বলছেন৷ ওই বছর টাইমস ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা ব্যক্তি হয়েছিলেন ম্যার্কেল৷ অন্যদিকে নিজ দেশে তার বিরুদ্ধে ‘চলে যাও ম্যার্কেল' প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় বিক্ষোভ হয়েছে৷

দলের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়লেও ম্যার্কেল এখনো জার্মানির সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিকদের একজন৷ যদিও দিন দিন তিনি মঞ্চের পেছনে চলে যাচ্ছেন৷ নির্বাচনী প্রচার থেকে শুরু করে দৈনন্দিন রাজনীতিতে তার উপস্থিতি কমতে শুরু করেছে৷ সাধারণত বৈদেশিক নানা অনুষ্ঠানে এখন তাঁকে দেখতে পাওয়া যায়৷

ম্যার্কেল নিজেও তাঁর নানা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে চরম বিতর্কের বিষয়েসচেতন৷ তবে যত বিতর্কই থাকুক, দীর্ঘ ১৪ বছরে তিনি অর্থনীতিক সংকট, ইউরো সংকট, ইউক্রেইন সংকট বা শরণার্থী সংকটের মত সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশকে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে গেছেন৷ গুরুতর ওইসব পরিস্থিতিতে তিনি দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে দেননি৷ একইসঙ্গে দলকে আরো বেশি উদার ও উন্মুক্ত করেছেন৷ 

ক্রিস্টফ হ্যাজেলবাক, মাইকেল কফনার, ম্যাক্সিমিলানি কচিক, কাই-আলেক্সান্দ্রে সচল্জ/এসএনএল/কেএম