1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পথে-বাজারে শারদীয় ভিড়, বেপাত্তা করোনা-আতঙ্ক

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১ অক্টোবর ২০২০

সংক্রমণ আছে, আছে মৃত্যু৷ কিন্তু সতর্কতার বাঁধন ক্রমশ আলগা হচ্ছে প্রতিদিন৷ উৎসবের মরশুম শুরু হতেই কলকাতার রাস্তাঘাটে ক্রমশ বেপাত্তা হয়ে যাচ্ছে করোনা আর তার আতঙ্ক!

https://p.dw.com/p/3jHec
কলকাতায় সতর্কতার বাঁধন ক্রমশ আলগা হচ্ছে ছবি: Payel Samanta/DW

চারপাশের সার্বিক হাহাকারের মধ্যে সময়ের নিয়মে এসে গিয়েছে দুর্গাপুজো৷ আনলক পর্বে পুজো উপলক্ষে উদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে স্বাভাবিকভাবেই৷ অনেক ক্ষেত্রেই এই উৎসাহ দেখে বোঝার উপায় নেই, কার্যত এক জরুরি অবস্থার মধ্যে দিয়ে চলেছে দেশ৷ তবে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নয়, আগস্ট থেকেই আস্তে আস্তে শিথিল হচ্ছে কঠোর নিয়ম-কানুনের ফাঁস৷ সরকারি প্রচার আছে আগের মতোই, কিন্তু ক্রমশ ভিড় বাড়ছে বাজার-হাটে৷ বাসে অন্যান্য সময়ের মতো ভিড়ও চোখে পড়ছে৷ সভা-সমাবেশ-মিছিল হচ্ছে অহরহ৷ অর্থাৎ সবই আছে কলকাতায়, শুধু নেই করোনা ভাইরাস!

শিয়ালদা ও হাওড়া থেকে শহরতলির ট্রেন চলাচল এখনো বন্ধ রয়েছে৷ পথে বাসের সংখ্যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় কম৷ পাওয়া যাচ্ছে অটো, ট্যাক্সি৷ কেউ যদি হঠাৎ কলকাতায় এসে পড়েন, তাহলে রাস্তায় ভিড় দেখে বুঝতে পারবেন না, আদৌ কোনো আপৎকালীন পরিস্থিতি চলছে কিনা৷ দোকান বাজারে বেশ ভিড়৷ রাস্তাঘাটে অনেকের মুখে মাস্ক নেই৷ আবার অনেকের মুখে মাস্ক থুতনির কাছে নামানো৷ সামাজিক দূরত্ব কাকে বলে, সেটা যেন কেউ জানেন না! যেখানে এই ছবি অক্টোবরের গোড়ায়, সেখানে পুজোর দিন এগিয়ে এলে কী হবে, তা নিয়ে আশঙ্কার কারণ আছে বৈকি৷

কলকাতার বড় বড় পুজো নিয়ন্ত্রণ করেন শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা: রন্তিদেব সেনগুপ্ত

ইতিমধ্যে দুর্গাপুজো নিয়ে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে রাজ্য সরকার৷ খোলামেলা মণ্ডপ ও প্রতিমার উচ্চতার কথা বলে দেওয়া হয়েছে৷ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা থেকে স্যানিটাইজেশন, সব ধরনের সর্তকতা নেওয়ার নির্দেশ ও বার্তা রয়েছে৷ সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া চিকিৎসক রেজাউল করিম এই নির্দেশিকাকে পর্যাপ্ত বলে মনে করলেও তাঁর মতে, এটা কার্যকর করাই আসল চ্যালেঞ্জ৷ তিনি বলেন, ‘‘মণ্ডপ পরিচালনা করবেন যাঁরা, তাঁদের দায়িত্ব অনেকটাই বেশি৷ মণ্ডপ জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে, ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে৷ দেখতে হবে সামাজিক দূরত্ব যেন বজায় থাকে৷ আমরা চিকিৎসকরাও প্রয়োজনে এ ব্যাপারে সাহায্য করতে প্রস্তুত৷’’ অর্থাৎ, বল মূলত আয়োজকদের কোর্টে৷

সম্প্রতি কেরলে ওনাম উৎসবের পর সংক্রমণের হার অনেকটাই বৃদ্ধি পাওয়ায় তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখতে পাচ্ছে বাংলা৷ আগস্টের শেষ সপ্তাহে পালিত হয়েছে এই উৎসব৷ যেখানে উৎসবের আগে প্রতিদিন সংক্রমণের সংখ্যা ছিল হাজারের আশপাশে, সেখানে কেরলে পার্বণের পর এই সংখ্যা ছয় হাজারের উপরে চলে গিয়েছে৷ দুর্গাপুজোর পর পশ্চিমবঙ্গেও একই পরিস্থিতি হবে না কি? বিজেপি নেতা রন্তিদেব সেনগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কলকাতার বড় বড় পুজো নিয়ন্ত্রণ করেন শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা৷ তাঁদের দেখতে হবে যাতে সরকারি নির্দেশিকা কঠোরভাবে পালন করা হয়৷ সবচেয়ে বড় কথা, সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে৷ নইলে একটা বড় বিপর্যয় নেমে আসবে৷’’

সব যাত্রীকে মাস্ক পরতে হবে: তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

পুজোর আগে ট্রেন চালু হবে কিনা ঠিক নেই৷ যে সংখ্যক বাস কলকাতার রাস্তায় চলছে, তা দর্শনার্থীদের ভিড় সামাল দিতে যথেষ্ট নয়৷ জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাসের উপর চাপ বেশি থাকবে৷ তাই আমরা বাসের সংখ্যা বাড়াব৷ এখন আসন সংখ্যা অনুযায়ী যাত্রী তুলতে হচ্ছে৷ পুজোর সময় সংখ্যা সরকার কত নির্ধারণ করেন দেখতে হবে৷ সব যাত্রীকে মাস্ক পরতে হবে৷ অযথা ভিড় করা যাবে না৷’’

ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় দুর্গাপুজোর মণ্ডপ তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে৷ যদিও এবার উৎসবের আগমনী কিছুটা ম্লান৷ গত কয়েক মাসের রুদ্ধ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যদি বাঙালি শারদীয় উৎসবকে বেছে নেয়, করোনার আতঙ্ক আরো মুছে যায়, তাহলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন৷ সব পক্ষই সাধারণ মানুষের সচেতনতার উপর নির্ভরশীল৷ তারা পরীক্ষায় পাস করবে কি?