1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরিবেশ সংরক্ষণে জার্মানদের সচেতনতা

২২ এপ্রিল ২০১০

জার্মানরা সব ক্ষেত্রেই নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলতে ভালবাসেন৷ আবর্জনা ফেলার ক্ষেত্রে তাদের নিয়ম নিষ্ঠার তো কোনো জুড়ি নেই৷ কাঁচ, কাগজপত্র, টিনের কৌটা, প্লাস্টিক ইত্যাদি প্রত্যেকটি জিনিস আলাদা আলাদা কন্টেইনারে ফেলা হয়৷

https://p.dw.com/p/N2fi
ফাইল ফটোছবি: Bilderbox

ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় এদিক দিয়ে অনেকটা এগিয়ে আছে জার্মানি৷ সেখানে প্রায় প্রতিটি গৃহস্থালিতে কাঁচ, প্লাস্টিক, কাগজ এসব জিনিসের জন্য পৃথক পৃথক ডাস্টবিন থাকে৷ এসব জিনিস ফেলার জন্য প্রতিটি পাড়ায়ও কিছু কন্টেইনার রাখা হয়৷ সাধারণ কাগজের কন্টেইনারে প্লাস্টিকের মোড়ক ফেলা যায় না৷ কাচেরও রঙভেদে যেমন বাদামি, সবুজ বা স্বচ্ছ গ্লাসের জন্য থাকে পৃথক পৃথক কন্টেইনার৷ অনেক বাড়ির উঠোনে সাধারণ আবর্জনা ফেলার কন্টেইনারের পাশাপাশি স্থান পায় আরেকটি কন্টেইনার, যাকে বলা হয় ‘গেলবে টনে' বা হলুদ কন্টেইনার৷ এই কন্টেইনারে প্লাস্টিক ও মোড়ক জাতীয় জিনিস ফেলা হয়৷ কোনো কোনো বাসায় বাগানের পরিত্যক্ত লতাপাতা, তরিতরকারির খোসা ফেলা হয় বায়ো কন্টেইনার নামে বাদামি রঙ-এর আর একটি কন্টেইনারে৷ নির্দিষ্ট দিনে বাসার সামনে কন্টেইনারগুলো রেখে দেয়া হয়, পরে বর্জ্য পরিবহনের গাড়ি এসে এগুলো নিয়ে যায়৷ সবচেয়ে বেশি সতর্কতা নেয়া হয় পুরানো ব্যাটারি ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির বেলায়৷ ক্ষতিকর পদার্থ থাকায় এসব জিনিস অবশ্যই নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হয়৷ বাছাই ও পরিষ্কার করে রিসাইক্লিং করা হয় অনেক পরিত্যক্ত জিনিস৷ এতে অর্থের সাশ্রয়ের সাথে সাথে পরিবেশ দূষনও কমে অনেকটা৷

আবর্জনাকে আরো ফলপ্রসূভাবে ব্যবহার করার ব্যাপারে এখন পরীক্ষা নীরিক্ষা চলছে জার্মানিতে৷ বর্কেন শহরের কাছে একটি বায়োগ্যাস কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে৷ যেখানে জৈবিক বর্জ্য থেকে সার প্রস্তুত না করে শক্তি বা বায়োগ্যাস উৎপাদন করা হয়৷ কেন্দ্রের ম্যানেজার হিন্ড্রিক শ্টেগেমান বলেন, ‘‘এই কেন্দ্রে আবর্জনা থেকে আমরা শক্তি উৎপাদন করি৷ খাদ্যদ্রব্যের অবশিষ্ট ও অন্যান্য জৈবিক পদার্থ মিশিয়ে প্রথমে কাদার মত করা হয়৷ তারপর বিশেষ করিগরি পদ্ধতিতে ঐ মাখানো পদার্থ থেকে বায়োগ্যাস তৈরি করা হয়৷''

আবর্জনা রিসাইক্লিং করার ব্যাপারটা সেই প্রাচীন রোমেই শুরু হয়েছিল৷ ফেরিওয়ালারা পুরানো জিনিসপত্র সংগ্রহ করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে বিক্রি করতো সেগুলো৷

শিল্পোন্নয়নের আগে মানুষ কাঁচ, কাঠ বা ধাতুর সামগ্রী ফেলে দেয়ার কথা চিন্তাও করতে পারতোনা৷ কেননা এসব জিনিস তৈরি করতে খরচ পড়তো অনেক৷ সেই সময় অনেকটা বাধ্য হয়েই রিসাইক্লিং-এর দিকে ঝুঁকতে হয়েছে মানুষকে৷ শিল্পোন্নয়নের সাথে সাথে লোকের চাহিদাও বৃদ্ধি পেতে থাকে৷ বাড়তে থাকে বিলাসদ্রব্যের পরিমাণও৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে জার্মানিতে একজন বছরে গড়ে ২৪৪ কিলোগ্রাম বর্জ্য তৈরি করে৷ আসবাব পত্র ও যন্ত্রপাতি একটু পুরানো বা সামান্য নষ্ট হয়ে গেলে ফেলে দেয়ার একটা প্রবণতাও দেখা যায় জার্মানিতে৷ তাই অনেক সময় দেখা যায় কোনো বাড়ির সামনে রাস্তার ধারে ভাল ভাল চেয়ার টেবিল, সোফা সেট, ফ্রিজ বা টিভিও পড়ে আছে৷ কোনো কোনো পথচারী কৌতূহলী হয়ে এগুলি ঘাঁটাঘাঁটি করেন, প্রয়োজন হলে নিয়েও যান৷ বাকিটা বিশেষ আবর্জনা পরিবহনের গাড়ি এসে নিয়ে যায়৷

শিল্পোন্নয়নের সাথে সাথে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত জার্মানির শহরগুলিতেও মানুষের চাপ বাড়ছে৷ গৃহস্থালির আবর্জনার পাশাপাশি কলকারখানার বর্জ্য জলবায়ু দূষিত করে চলছে অনবরত৷ আন্তর্জাতিক স্থানিয় পরিবেশ উদ্যোগ পরিষদের মুখপাত্র রুড শুটহফ এই সমস্যার একটা সুরাহার কথা বললেন, ‘‘আমাদের দেখতে হবে শহরের বাড়তে থাকা জনসংখ্যাকে কিভাবে আয়ত্ত্বে আনা যায়৷ তবে এর একটা ইতিবাচক দিকও রয়েছে৷ শহরগুলি সার্বিক অর্থনীতির কেন্দ্র, এগুলিকে স্থানীয়ভাবে সবুজ অর্থনীতির কেন্দ্র করা যেতে পারে৷ এটাই আমার স্বপ্ন : একটা সবুজ অর্থনীতি, যা সম্পদ বাঁচাবে, সুবিচার প্রতিষ্ঠা করবে ও পরিবেশবান্ধব হবে৷''

১৯৬১ সালে সাবেক পশ্চিম জার্মানিতে প্রথম আবর্জনা দূরীকরণ নীতিমালা তৈরি হয়৷ পরিবেশ সংরক্ষণ ও আবর্জনা পরিহার রাষ্ট্রের কর্তব্য বলে ঘোষিত হয়৷ ১৯৭১ সালে প্রণীত হয় আবর্জনা দূরীকরণ আইন৷ জোর দেয়া হয় বর্জ্য পরিহারের ওপর৷ কয়েক দশকের মধ্যে প্রায় সব শিল্পোন্নত দেশেই পরিবেশ সংরক্ষণ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠিত হয়৷ ১৯৯৪ সালে পরিবেশ সংরক্ষণকে জার্মানির মৌলিক আইনের অন্তর্ভূক্ত করা হয়৷ বলা হয়, ‘‘ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও জীবজন্তুর জন্য বাসোপযোগী একটা পরিবেশ রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের৷'' পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে জার্মানির মানুষও সচেতন হয়ে উঠছে ক্রমেই৷ প্লাস্টিকের ব্যবহার অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে তারা৷ ৮০'এর দশকে বাংলাদেশ থেকে আসা চটের থলির প্রাবল্য ছিল চোখে পড়ার মত৷

বাংলাদেশেও পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে এখন সচেতন হয়ে উঠছে মানুষ৷ এক সময় প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলেও পরিবেশ দূষিত হওয়ার কারণে ইদানীং কাপড়ের ব্যাগের দিকে ঝুঁকেছে লোকজন৷ আর রিসাইক্লিং পদ্ধতিটা তো বাংলাদেশে অনেকদিন ধরেই চালু৷ কাগজ বা শিশি বোতল জমিয়ে রেখে বিক্রি করা হয় সেখানে৷ সেগুলোই হয়তো পরে ঠোঙা বা অন্য কোনো জিনিসের বোতল হয়ে ফিরে আসে বিক্রেতার কাছে৷

প্রতিবেদক: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক