1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সবুজ পর্যটনে বিনিয়োগের আহ্বান

১০ মার্চ ২০১৮

জার্মানির রাজধানী বার্লিনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পর্যটন মেলা আইটিবি ২০১৮-এ এমন আহ্বান জানান বিশ্বের ধনী দেশগুলোর পর্যটন খাতের নীতি-নির্ধারকরা৷

https://p.dw.com/p/2u4x3
ছবি: DW/Zobaer Ahmed

তাঁরা মনে করছেন, কার্বন নিঃসরণ কমানো, সম্পদের দক্ষ ব্যবহার ও সবাইকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নবান্ধব পর্যটন খাত গড়ে তুলতে হলে ‘বিনিয়োগের' বড় ভূমিকা আছে৷

সারাবিশ্বে পর্যটনের বাজার বাড়ছে হু হু করে৷ আইটিবি-র এ বছরের প্রতিবেদন বলছে, বৈশ্বিক পর্যায়ে জিডিপি-র প্রবৃদ্ধির হারের চেয়ে তিনগুণ বেশি হারে বাড়ছে পর্যটন খাতের আয়৷

ইউএনডাব্লিউটিও-র বিশ্ব পর্যটন ব্যারোমিটার বলছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত, এক দেশ থেকে আরেক দেশে ভ্রমণ করেছেন ৯০ কোটি ১০ লাখ মানুষ, যা আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৬ কোটি বেশি৷ আর তাই পর্যটন খাতে আয় বাড়ছে গুণোত্তর হারে৷ ফলে বিনিয়োগও বাড়ছে একইভাবে৷

Deutschland ITB Berlin Indonesischer Stand
ইন্দোনেশিয়ার স্টলছবি: KBRI Berlin

কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই বাজারবৃদ্ধি কিংবা বিনিয়োগ কতটা পরিবেশকে মাথায় রেখে করা হচ্ছে? বিষয়টি এমন নয় যে, সব দেশে সমান পরিমাণ লোক যাচ্ছে, কিংবা সব দেশে সমান বিনিয়োগ হচ্ছে৷

দেখা যাচ্ছে, জনপ্রিয় জায়গাগুলোতে মানুষের আনাগোনা এতটাই বেড়ে যাচ্ছে যে, তা সেই জায়গার জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে৷ আর তাই এবারের বার্লিন পর্যটন মেলায় এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ পর্যটন খাতে বিনিয়োগ সতর্কতার নীতি অবলম্বন করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে অনেকের মত৷

বিশ্বের ৩৫টি ধনী দেশের অর্থনৈতিকও উন্নয়ন সম্পর্কিত জোট ওইসিডি-র সদস্য রাষ্ট্রগুলো বিষয়টি বুঝতে পেরেছে৷ তাই তাদের সর্বশেষ পলিসিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে৷ তারা বলছে, পর্যটন খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা দরকার৷ আর সেই পরিবর্তন অবশ্যই পরিবেশবান্ধব হতে হবে৷

জোটের আঞ্চলিক উন্নয়ন ও পর্যটন বিভাগের প্রধান অ্যালেন ডুপেরাস এক্ষেত্রে মেক্সিকোর উদাহরণ টেনে আনেন৷ তিনি বলেন, ‘‘মেক্সিকো এরই মধ্যে তাদের জ্বালানি খাতের বিনিয়োগ নীতি বদলেছে৷ তারা নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য সহজ শর্তে ঋণও দিচ্ছে৷''

Stand von Mexiko 70 Unternehmen sind dabei
মেক্সিকো এরই মধ্যে তাদের জ্বালানি খাতের বিনিয়োগ নীতি বদলেছেছবি: DW/E. Usi

শুক্রবার বার্লিন পর্যটন মেলা আইটিবি ২০১৮-তে ‘টেকসই পর্যটনে বিনিয়োগ' শীর্ষক এক আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি৷

তিনি বলেন, ‘‘এটি একটি উদাহরণ মাত্র৷ সারাবিশ্বে এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে৷''

অ্যালেন মনে করেন, শুধু পরিবেশ নয়, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সবগুলো অর্জন করার ক্ষেত্রে পর্যটন খাতের বিনিয়োগের ভূমিকা রয়েছে৷

তিনি তাঁর বক্তব্যে নীতি নির্ধারণের পর্যায়ে চারট দিক তুলে ধরেন৷ সেগুলো হলো, সবুজ বিনিয়োগ, দায়িত্বশীল ব্যবসা, সমন্বয় ও পরিসংখ্যান৷

পর্যটনে সবুজ বিনিয়োগকে তিনি ব্যাখা করেছেন -পর্যটনের জন্য যেসব আবাসন তৈরি করা হচ্ছে সেগুলোকে জ্বালানি দক্ষ করে গড়ে তোলা, সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা, পানি ব্যবস্থাপনা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা হিসেবে৷ এমনকি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষাকেও এর মধ্যে ধরেছেন তিনি৷

‘‘সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে হবে৷ সাংস্কৃতিক ধারা যেন অব্যাহত থাকে তেমন উদ্যোগ নিতে হবে৷'' বলছিলেন অ্যালেন৷

পর্যটন খাতে একটি দেশের সরকারের দায়িত্ব সরাসরি সবুজ বিনিয়োগ করা বা তার পরিবেশ তৈরি করা বলে মনে করেন অ্যালেন৷ তবে বেসরকারি খাতও এ দায়িত্ব এড়াতে পারে না বলে মনে করেন তিনি৷

এছাড়া, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের মধ্যে সমন্বয় এবং ডাটা বা পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখেন তিনি৷

ডাটানির্ভর পলিসির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন স্পেনভিত্তিক পর্যটন, জ্বালানি ও শিল্প খাতের সরকারি থিংকট্যাংক সেগিটুর-এর প্রধান ফার্নান্দো দে পাবলো মার্টিনও৷

তিনি বলেন, ২০১৭ সালে স্পেনে ৮ কোটি ২ লাখ পর্যটক এসেছেন৷ এ খাতের আয় জিডিপির ১১ শতাংশ এবং দেশের ১৩ ভাগ কর্মসংস্থান করে দিচ্ছে এ খাত৷

‘‘আমরা খরচ করেছি ৮ হাজার ৭শ' কোটি ইউরো৷ ২০১৭ সালের শেষে আমাদের ট্রেড ব্যালান্স ৪ হাজার ২শ' কোটি ইউরো৷''

ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের রিপোর্টেও পর্যটন খাত থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাবের ক্ষেত্রে সবগুলো দেশের শীর্ষে রয়েছে স্পেন৷

২০০৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ইউরোপজুড়ে যে অর্থনৈতিক মন্দা ছিল তা কেবল এই পর্যটনের জোরেই কাটিয়ে উঠেছে স্পেন, জানান পাবলো মার্টিন৷

তবে পর্যটন খাতে বিনিয়োগ যেন স্থানীয় মানুষকে বাদ দিয়ে না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন তিনি৷

‘‘স্থানীয় জনগণের কথা ভুলে গেলে চলবে না৷ বিনিয়োগ এমনভাবে করতে হবে, যেন তারাও এর আওতায় পড়েন৷''

পাবলো জানান, শুধু তাই নয়, পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করার জন্য প্রাথমিকভাবে আরো ৬ কোটি ইউরো বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্পেন৷ কয়েকটি প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছে৷

ওইসিডি-র নীতি-নির্ধারকরা প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ তাই যদি হয়, অচিরেই হয়ত বিশ্বের অনেক জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রের চেহারাই পালটে যাবে৷