1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘পলাতক অবস্থায় সাজা মওকুফ বেআইনি’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের দুই ভাই আনিস আহমেদ ও হারিস আহমেদের সাজা তারা পলাতক থাকা অবস্থায় মওকুফ করা হয়েছে৷ বিষয়টিকে বেআইনি বলেছেন বাংলাদেশের আইন ও সংবিধান বিশ্লেষকরা৷

https://p.dw.com/p/3pRKD
পুলিশের ওয়েবসাইটে মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনালের তালিকায় হারিস আহমেদের নাম ও ছবি
পুলিশের ওয়েবসাইটে মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনালের তালিকায় হারিস আহমেদের নাম ও ছবি ছবি: https://www.police.gov.bd

তারা বলছেন, এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত৷ তবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, ‘‘পলাতক অবস্থায় সাজা মওকুফ করা যাবে কিনা আইনে তা স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই৷’’

গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত আল জাজিরার প্রতিবেদনে আনিস আহমেদ ও হারিস আহমেদকে ‘পলাতক’ বলা হলেও বাস্তবে ঘটনার সময় তারা পলাতক ছিলেন না৷ তার আগেই তাদের সাজা মওকুফ করা হয়৷ আল জাজিরার প্রতিবেদনে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সঙ্গে তার ‘পলাতক দুই ভাই আনিস ও হারিসের যে ছবি দেখানো হয়েছে, সেই প্রসঙ্গে মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমকে সেনাপ্রধান বলেন, ‘‘সেদিন আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে না কোনো সাজা ছিল, না তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল৷’’

একদিন আগে আইএসপিআর-এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘‘গত ২৯ মার্চ ২০১৯ তারিখে সেনাবাহিনী প্রধানের ছেলের বিবাহোত্তর সম্বর্ধনা অনুষ্ঠান হয়, যেখানে বিশিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন৷ অথচ তার পূর্বেই সেনাবাহিনী প্রধানের ভাইয়েরা (আনিস এবং হাসান) তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে ষড়যন্ত্রমূলক, পরিকল্পিতভাবে দায়েরকৃত সাজানো ও বানোয়াট মামলা হতে যথাযথ আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই অব্যাহতি পান৷ ফলে ২৯ মার্চ ২০১৯ তারিখে সেনাবাহিনী প্রধানের ছেলের বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানে তার কোনো ভাই কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত বা পলাতক আসামি অবস্থায় ছিলেন না, বরং সম্পূর্ণ অব্যাহতিপ্রাপ্ত হিসেবেই তারা ঐ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন এবং উক্ত সময়ে তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা অনিষ্পন্ন অবস্থায় বা চলমানও ছিল না৷’’ 

‘হারিস ও আনিসের সাজা মাফ আইনের অপপ্রয়োগের উদাহরণ’

তবে এই দুই জনের সাজা মওকুফ করা হলেও তা ছিল অনেকটাই গোপন৷ বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটেও মঙ্গলবার পর্যন্ত হারিস আহমেদের নাম ও ছবি মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনালের তালিকায় দেখা গেছে৷ তাদের দুই ভাইয়ের পলাতক অবস্থায় সাজা মওকুফের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র এবং আইনমন্ত্রীও স্পষ্ট করে সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলতে পারেননি৷ এমনকি ডয়চে ভেলের কনফ্লিক্ট জোন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীও পরিষ্কার কিছু বলতে পারেননি৷

আর তারা যে পলাতক অবস্থায় সাজা মওকুফ পেয়েছেন তার বড় প্রমাণ হলো মওকুফের পর তাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট প্রত্যাহার করতে বলা৷

যেভাবে সাজা মওকুফ:
১৯৯৬ সালের ৭ মে ঢাকার মোহাম্মদপুরে ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান হত্যায় তিন ভাই আনিস আহমেদ, হারিস আহমেদ  ও তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফসহ ছয় জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়৷ বিচারে জোসেফ এবং মাসুদের মৃত্যুদণ্ড এবং হারিস ও আনিসসহ তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়৷ জোসেফ কারাগারে আটক থাকায় আপিল করেন৷ হাইকোর্টের  আপিলে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলেও আপিল বিভাগে সাজা কমে যাবজ্জীবন হয়৷ হারিস ও আনিস পলাতক থাকায় তারা আপিলের সুযোগ পাননি৷

জোসেফকে ২০১৮ সালে রাষ্ট্রপতি সাজা মওকুফ করে দিলে তিনি কারাগার থেকে ছাড়া পান৷ আর আনিস ও হারিস পলাতক থাকার পরও ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ সরকার তাদের সাজা মওকুফ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে৷ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ এবং সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদটি সাজা মওকুফ ও স্থগিত সংক্রান্ত৷ তবে মৃত্যুদণ্ড মওকুফের বিষয়টি এককভাবে রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার৷ আর এর বিধানটি সুনির্দিষ্ট, কারণ ও অপরাধ স্বীকার করে এর সুযোগ পাওয়া যায়৷ তাছাড়া এতে সংশ্লিষ্ট বিচারকেরও মতামত প্রয়োজন হয়৷

আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘‘ফৌজদারি কার্যবিধিতে পলাতক বা পলাতক না এরকম কিছু বলা না থাকলেও আটক বা আত্মসমর্পণ ছাড়া এই সুবিধা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই৷ আত্মসমর্পণ না করে কেউ জামিন বা আপিলেরও সুযোগ পান না৷ পলাতক আসামি আইনের কোনো সুবিধা পায় না৷ বাংলাদেশে এই দুইজন বাদে এখন পর্যন্ত কোনো পলাতক আসামি সাজা মওকুফ পাননি৷ আইনে নেই বলেই সুযোগ পায়নি৷’’

বাংলাদেশে এই দুইজন বাদে এখন পর্যন্ত কোনো পলাতক আসামি সাজা মওকুফ পাননি: ড. শাহদীন মালিক

তিনি সাম্প্রতিক উদহারণ দিয়ে বলেন, সিকদার গ্রুপের দুই ভাই রন হক সিকদার ও দিপু হক সিকদার বিদেশে পলাতক অবস্থায় আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করে উল্টো জরিমানার শিকার হয়েছিলেন৷ আদালত আইনজীবীকেও ভর্ৎসনা করেছিলেন৷

তিনি বলেন, ‘‘পলাতক অবস্থায় এই দুই ভাইয়ের সাজা মওকুফ করে সরকার সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ করেছে৷ এই কাজে যারা জড়িত ছিল তারা জেনেশুনে বেআইনি কাজ করেছে৷ তাদের সবার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত৷’’

কারো সাজা মওকুফ করতে হলে তার সুনির্দিষ্ট কারণও দেখাতে হবে বলে জানান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ৷ তা না হলে সব দণ্ডপ্রাপ্তই তো সাজা মওকুফের দাবিদার হয়ে উঠবেন৷ এ ব্যাপারে হাইকোর্টের একটি নির্দেশনাও আছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আইনের সুবিধা পেতে হলে আইনের মধ্যে থাকতে হবে৷ পলাতক আসামি তো আইনের মধ্যে নেই৷ তাই পলাতক অবস্থায় তাদের সাজা মওকুফ কোনোভাবেই আইনসম্মত হয়নি৷’’

তার মতে, ‘‘এই আইনটির ব্যাপক অপব্যবহার করা হচ্ছে৷ আইনটির বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে একটি রিট করেছিলাম৷ কিন্তু তার শুনাননিই করা যায়নি৷’’

আর কারা সাজা মওকুফ পেতে পারেন

বিশেষ দিবসেও বাংলাদেশে দণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা মওকুফের রেওয়াজ আছে৷ সাবেক ডিআইজি প্রিজন মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী জানান, ‘‘বয়স্ক, সাজা প্রায় শেষ বা কঠিন কোনো রোগে ভুগছেন এমন দণ্ডপ্রাপ্তের সাজা মওকুফ করা হয়৷ তবে সাধারণভাবে কারাগার থেকে হত্যা, নারী নির্যাতন বা গুরুতর অপরাধে জড়িতদের এই সুবিধার জন্য সুপারিশ করা হয় না৷ কারাগারের বাইরের ব্যাপার তো আমরা বলতে পারবো না৷’’

সাজা মওকুফের আবেদন প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাবে৷ তারপর আইন মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে৷

অ্যাটর্নি জেনারেল যা বললেন

সেনাপ্রধানের দুই ভাই আনিস ও হারিসয়ের পলাতক অবস্থায় সাজা মওকুফের বিষয়ে বার বার চেষ্টা করেও স্বরাষ্ট্র এবং আইন মন্ত্রীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷

আইনে স্পষ্ট কিছু নাই, শুধু বলা হয়েছে সরকারের এখতিয়ার: অ্যাটর্নি জেনারেল

তবে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছেন, ‘‘আইনে পলাতক থাকা না থাকার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি৷ আত্মসর্পণের বিষয়েও কিছু বলা হয়নি৷ আইনে স্পষ্ট কিছু নেই৷ শুধু বলা হয়েছে সরকারের এখতিয়ার৷’’

তিনি বলেন, ‘‘পলাতক অবস্থায় জামিন বা আপিলের সুযোগ আইনে নেই৷ কিন্তু সাজা মওকুফের ব্যাপারে কিছু বলা নেই৷’’

আনিস ও হারিসের পলাতক অবস্থায় সাজা মওকুফের ব্যাপারে তার পর্যবেক্ষণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না৷ কাগজ-পত্র না দেখে বলা যাবে না তাদের কী প্রক্রিয়ায় সাজা মওকুফ হয়েছে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান