1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গেও ‘‌এনকাউন্টার'‌ মডেল!‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৮ জুন ২০১৯

পশ্চিমবঙ্গে দুষ্কৃতি দমনে উত্তর প্রদেশের বিজেপি সরকারের অনুকরণে পুলিশি এনকাউন্টার চালু করা উচিত৷ বিতর্ক ছড়াল বিজেপি নেতার মন্তব্য৷

https://p.dw.com/p/3LHOj
Indien Sabarimala-Tempel Protest
ফইল ফটোছবি: Getty Images/AFP

এনকাউন্টার পুলিশ, বা অন্য যে কোনও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংঘর্ষ৷ কিন্তু ভারতে এই শব্দের পেছনে লুকিয়ে থাকে এক ভিন্নতর অর্থ৷ অপরাধীর তাৎক্ষণিক বিচার এবং প্রাণদণ্ড৷ উত্তর প্রদেশের মিরাটে অতি সম্প্রতি মাত্র আট দিনে ৩৫টি এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটেছে৷ পুলিশের গুলিতে মারা গেছে দাগী অপরাধী৷ তার অনেকগুলো ঘটনাতেই পুলিশের বয়ান প্রায় একইরকম৷ ‘‌ওয়ান্টেড' তালিকায় থাকা কোনও ফেরার অপরাধীকে হঠাৎই রাস্তায় দেখতে পেয়েছে পুলিশ, তার পিছু ধাওয়া করেছে, তাকে থামতে বলা সত্ত্বেও সে থামেনি, উল্টে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে!‌ তখন পুলিশ আত্মরক্ষার্থে বাধ্য হয়েই পাল্টা গুলি চালিয়েছে এবং সেই অপরাধী মারা গিয়েছে৷ এই ধরনের ঘটনায় বিশেষভাবে লক্ষণীয়, যে অপরাধীকে ধরতে একমাত্র কোমরের নিচে, নির্দিষ্টভাবে পায়ে গুলি করার যে প্রোটোকল থাকে, তা কখনোই মেনে চলা হয় না৷

এই এনকাউন্টার কিলিংয়ে বিশেষ নাম করেছে উত্তর প্রদেশের বিজেপি সরকার৷ এই বছরেরই প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তাঁর সরকারের সাফল্যের খতিয়ান দিতে গিয়ে বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় আসার পর প্রথম ১৬ মাসে তিন হাজারের ওপর ‘‌এনকাউন্টার'‌ করেছে তাঁর পুলিশ৷ তাতে ৬৯ জন দাগী অপরাধী মারা গেছে, আটশো ৩৮ জন জখম হয়েছে এবং সাত হাজার ৪৩ জনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে৷ অর্থাৎ বিচারবিভাগের সামনে হাজির না করে কোনও অপরাধীকে তাৎক্ষণিক প্রাণদণ্ড দেওয়াটা সরকারের সাফল্য হিসেবেই ধরে উত্তর প্রদেশের বিজেপি সরকার৷ সেই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি এবার অন্য রাজ্যেও হোক, এমনটাই চেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের দুই বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু ও রাজু ব্যানার্জি৷ তাঁদের বক্তব্যের প্রেক্ষাপট ছিল  রাজ্যে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ওপর আক্রমণ এবং দুষ্কৃতিদের রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া৷

সায়ন্তন বসু


পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিতীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তাঁদের এই মন্তব্যের এবং বলেছেন, যাঁরা বাংলায় ‘‌উত্তরপ্রদেশ মডেল'‌ চালু করতে চাইছেন পুলিশের উচিত, সেই বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ‘‌সুয়ো মোটো'‌, অর্থাৎ স্বতঃপ্রণোদিত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া৷ এ প্রসঙ্গে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‌‘‌হয় মুখ্যমন্ত্রী পুরো বক্তব্যটা না দেখে মন্তব্য করেছেন, আর নয়ত, যে সন্দেহটা বাড়ছে আমার, সেটা হচ্ছে সমাজবিরোধীরা যেভাবে পশ্চিমবঙ্গে মাথাচাড়া দিচ্ছে, তাদের সাহসটা যাতে থাকে, তার জন্যে উনি এটা বলছেন!‌'‌'‌ সায়ন্তন বসু দাবি করছেন, তিনি বেআইনি কিছু বলছেন না৷ পুলিশের হাতে এই ক্ষমতাটা আছে৷ সরকার তাদের আরও বেশি করে বলুক, যাতে দুষ্কৃতিরা পালিয়ে যেতে না পারে, তার জন্য প্রয়োজনে বন্দুকটা ব্যবহার করতে৷ বন্দুক পুলিশকে, প্রশাসনকে সে কারণেই দেওয়া হয়৷ ‘‌‘‌নয়ত খেলনা বন্দুক দেওয়া হতো!‌'‌ মন্তব্য করেছেন বিজেপি নেতা৷

এবার ঘটনা হচ্ছে, অপরাধী এবং সমাজবিরোধীদের এভাবে তাৎক্ষণিক শাস্তিবিধানের ভাবনা সাধারণ মানুষের মধ্যে রীতিমত জনপ্রিয় হচ্ছে৷ বিশেষত যেখানে মানুষ দেখছে, জঘন্য অপরাধের পরও পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা৷ এই গণ মানসিকতায় ইন্ধন জোগাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় সুকৌশলী প্রচার, যেখানে ‘‌এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট'‌ পুলিশ অফিসারদের নায়ক হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছ৷ এমনই একজন আইপিএস অফিসার উত্তরপ্রদেশের রামপুরের পুলিশ সুপার অজয় পাল শর্মা৷ সম্প্রতি তিনি এক ৬ বছরের শিশুকন্যার ধর্ষণ এবং খুনের দায়ে অভিযুক্ত এক অপরাধীকে পায়ে গুলি করে গ্রেপ্তার করেন৷ তাঁর সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে ফিল্মি হিরো পুলিশ অফিসারদের৷ তাঁর নামে ভক্তরা তৈরি করেছে টুইটার অ্যাকাউন্ট, যেখানে তাঁর আগ্নেয়াস্ত্র-হাতে ছবি লাগাতার পোস্ট করা হচ্ছে, ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে৷ বৈধতা দেওয়া হচ্ছে বিচার বহির্ভূত দণ্ডবিধানের রাষ্ট্রীয় পদ্ধতিকে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য