1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গের ভোটে সহিংসতা মারাত্মক জায়গায় যাচ্ছে

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
১২ এপ্রিল ২০২১

পশ্চিমবঙ্গে ভোট যত এগোচ্ছে, ততই বাড়ছে, সংঘাত ও সংঘর্ষ। প্রার্থীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। কর্মীরা খুন হচ্ছেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মানুষ মারা যাচ্ছেন। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি।

https://p.dw.com/p/3rs4R
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে এবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রচুর জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে। ছবি: Indranil Aditya/Nur Photo/picture alliance

ভারতের বাকি সব রাজ্যে নির্বাচন মোটের উপর শান্তিপূর্ণ থাকে। একসময় ভোটের দিন বা তার আগে-পরে ভয়ঙ্কর গোলমাল হতো বিহার ও উত্তর প্রদেশে। তারাও এখন শুধরে গেছে। ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ। সেখানে রাজনৈতিক সংঘর্ষে মানুষ মরছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মারা যাচ্ছেন। ভোটের দিন বা তার আগে-পরে মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়ছে অনেক জায়গায়। রাজনৈতিক শাসানি, ভয় দেখানো, এজেন্টদের বসতে না দেয়ার মতো ঘটনা প্রতিটি পর্বে উঠে আসছে। প্রতিটি পর্বে বিভিন্ন দলের প্রার্থীিরা আক্রান্ত হচ্ছেন। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অভিযোগ। যা অবস্থা তাতে এটা মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে, যে রাজনৈতিক দলের যেখানে শক্তি বেশি, তারা সেখানে সংঘাতের রাস্তায় যাচ্ছে।

রাজনৈতিক দলগুলির ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। শীতলকুচির ঘটনার কথাই ধরা যাক। কোচবিহারের এই এলাকার একটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চারজন মারা গেছেন। সেখানেই রাজনৈতিক সংঘর্ষে একজন মারা গেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তরবঙ্গের এক প্রবীণ সাংবাদিক জানিয়েছেন, ''শীতলকুচির প্রার্থীরাও গত দুই দিনে এলাকায় গিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করেননি।  অবশ্য দুই প্রধান দল বলেছে, তারা যাবে। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে মেরুকরণের চেষ্টা, বিভাজনের  মরিয়া প্রয়াস।''

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শীতলকুচির জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করে বলেছেন, ''মুখ্যমন্ত্রী ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করছেন। তিনি কেবল গুলিতে চারজনের মৃত্যুর কথা বলছেন। অথচ, রাজবংশী যুবক আনন্দ বর্মন যে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে গুলিতে মারা গেল তা বলছেন না। কারণ, রাজবংশী যুবক তার ভোটব্যাঙ্ক নয়।''

সোমবার রাণাঘাটের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ''এটা অমিত শাহের চক্রান্ত। এসপি-র সঙ্গে বসে বিজেপি কর্মীরা ওই পরিকল্পনা করেছিল। বিজেপি-ই সেদিন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে গুলি চালাতে প্ররোচিত করেছিল। বিজেপি রাজ্যে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা লাগাতে চাইছে।'' তিনি বলেন, বিজেপি নিজের কর্মীদের খুন করছে। নিজেরাই গাড়ি ভাঙচুর করছে।

রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ আবার শীতলকুচি নিয়ে আরো মারাত্মক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ''আর যদি বাড়াবাড়ি করে, তা হলে জায়গায় জায়গায় শীতলকুচি হবে।'' তৃণমূল সোমবার দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে গেছে। তাদের দাবি, দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নিক কমিশন। কারণ, তিনি উস্কানি দিচ্ছেন। তাই দিলীপ ঘোষকে যেন বাকি পর্বে প্রচার করতে না দেয়া হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার  এর আগে দলের কর্মীদের কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাও করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেটা নিয়ে নির্বাচন কমিশন তাকে নোটিশ দিয়েছে। এ জন্যই বলে পশ্চিমবঙ্গের ভোট একেবারে আলাদা, সেখানে সব অঙ্কই গোলমেলে, অনেক আচরণ নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, পশ্চিমবঙ্গে এমন গোলমাল হবে কেন? প্রবীণ সাংবাদিক ও লেখক শুভাশিস মৈত্র মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গের ভোটের সঙ্গে সহিংসতার একটা সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে আছে। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''একসময় অতিবামেরা ঘোষণা করে সহিংসতার পথ নিয়েছে। অন্য দলগুলি মুখে সহিংসতার কথা বলে না। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে করে। পশ্চিমবঙ্গে এমন একটা জেলা নেই যেখানে গত দুই বছরে কোনো রাজনৈতিক হত্যা হয়নি।'' শুভাশিসের মতে, ''এর একটা কারণ বোধহয় যুবকদের চাকরি না থাকা। অন্যটা হলো, রাজনৈতিক দলগুলি সচেতনভাবে এর বিরোধিতা করে না। রাজনৈতিক দলগুলি নিজেরা না চাইলে, এটা বন্ধ করা সম্ভব নয়।''

সাংবাদিক চন্দ্রিল ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন. ''এখন এই হত্যাগুলিকে টি২০ ম্যাচের মতো মনে হয়। একপক্ষ মারলে অন্যপক্ষ প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। এটা ভয়ঙ্কর প্রবণতা। আর দীর্ঘদিন ধরে এটা চলছে।'' 

শুভাশিসের মতে, যারা এই রাজনৈতক হিংসায় মারা যায়, তারা প্রায় সবাই গরিব মানুষ। যারা ২১ জুলাই মমতার মিছিলে মারা গেছিলেন, তারা কেউ মাছ বিক্রি করতেন, কেউ সামান্য কাজ করতেন। এখনও একই ঘটনা ঘটছে। খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আর রাজনৈতিক দলগুলি সচেতনভাবে এটা থামাবার চেষ্টা করছে না। ইস্তাহারেও তারা রাজনৈতিক সহিংসতা থামাবার কথা বলে না।  শুভাশিস মনে করেন, ''নির্বাচনের প্রথম চার পর্বে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষ লাঠি, রড নিয়ে সহিংসতা করছেন। তার মানে এই সহিংসতার সঙ্গে সাধারণ মানুষকেও ধীরে ধীরে জড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। যেটা মারাত্মক ঘটনা।''