1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী পরিসর থেকে কি হারিয়ে যাচ্ছে বিজেপি?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২ জুন ২০২২

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ভারতীয় জনতা পার্টিকে কি আরো বেশি অগোছালো লাগছে? দলের অন্দরে দ্বন্দ্বের চোরাস্রোত ছিলই। দিলীপ ঘোষকে ‘সেন্সর' করার সিদ্ধান্ত যেন তাতেই সিলমোহর দিয়েছে।

https://p.dw.com/p/4CCag
Indien Westbengalen | Protest gegen Minister | BJP
ছবি: Payel Samanta/DW

বিজেপি মানে ‘পার্টি উইথ দ্য ডিফারেন্স'। এমনটাই দাবি করেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা। বামেদের মতোই ক্যাডারভিত্তিক, শৃঙ্খলায় মোড়া দল হলেও গত কয়েকমাস ধরে অন্য ছবি দেখা যাচ্ছে। বিধানসভা নির্বাচনের পর একাধিক উপনির্বাচন ও পুরভোটে বিজেপি পরাজিত হওয়ার পর দলের ভেতর টানাপড়েন আরো বেড়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, নেতৃত্বের পরিবর্তন, আদি-নব্যের সংঘাত বৃদ্ধির ফলে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে চমক জাগানো বিজেপি বিরোধী পরিসর থেকেই হারিয়ে যেতে বসেছে।

বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলিয়ে-কইয়ে নেতা। মেয়াদ ফুরনোর আগেই তাকে সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার জায়গায় দায়িত্ব নেন উত্তরবঙ্গের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। বিরোধী দলনেতা হিসেবে উঠে আসেন নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানো শুভেন্দু অধিকারী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বঙ্গ বিজেপির অন্দরে একাধিক ক্ষমতার কেন্দ্র তৈরি হওয়ায় দ্বন্দ্ব তীব্র হয়েছে। তারই পরিণতি দিলীপের উপর নিষেধাজ্ঞার খাঁড়া।

দিলীপ ঘোষ এখন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি। তিনি ঠোঁটকাটা হিসেবেই পরিচিত। তার মন্তব্যে বিতর্ক হয় ঘন ঘন। বিজেপি সূত্রের খবর, এ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে আপত্তি জানিয়েছিলেন বঙ্গের নেতারাই। মঙ্গলবার জানা যায়, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার নির্দেশে ‘সেন্সর' করা হয়েছে দিলীপকে। তিনি আর সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে পারবেন না। সম্প্রতি তাকে আট রাজ্যের বুথস্তরের সংগঠন সামলানোর গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন নড্ডারা। তখনই বলা হচ্ছিল, রাজ্য নেতৃত্বে সংঘাত দূর করতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে কার্যত বিদায় দেওয়া হল বর্ষীয়ান নেতাকে। তার পরপরই এই নিষেধাজ্ঞা।

রাজ্য বিধানসভায় বাম ও কংগ্রেসের কোনো সদস্য নেই। গত নির্বাচনে প্রধান বিরোধী বিজেপির ৭৭ জন বিধায়ক জিতে এসেছিলেন। কয়েকজন বিধায়ক তৃণমূলে নাম লিখেয়েছেন। কিন্তু বাকিদের সেভাবে প্রতিবাদ আন্দোলনে সামিল হতে দেখা যায় না বলে অভিযোগ। ফলে বাংলার রাজনীতি ক্রমশ বিরোধীশূন্য হয়ে উঠছে বলে মত পর্যবেক্ষকদের একাংশের। বিজেপি মুখপাত্র ও গত বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী, অধ্যাপক বিমলশঙ্কর নন্দ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "গত বছর বিজেপি ক্ষমতায় আসছে, এ কথা তাদের বিরোধীরাও মনে করছিলেন। সেক্ষেত্রে পরাজয়ের ফলে একটা হতাশা তৈরি হয়েছে। তা থেকে গা-ছাড়া মনোভাব এসেছে, এটা অস্বীকার করা যায় না।”

অধ্যাপক বিমলশঙ্কর নন্দ

এর ফলে কি বাম ও কংগ্রেস আবার আগের জায়গা ফিরে পাবে? বিধানসভা উপনির্বাচনে বালিগঞ্জ কেন্দ্রে বামেদের ভোট অনেকটা বেড়েছে। পুরভোটে নদিয়ার তাহেরপুরে জয় পেয়েছে তারা। সিপিএম নেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, "জনগণ চাইছে আমরা আরো শক্তিশালী সংগঠন নিয়ে সামনে আসি। আমাদের সেটাই লক্ষ্য। বিজেপিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনেছেন পশ্চিমবঙ্গে। বামেদের শেষ করার লক্ষ্য ছিল তার। কিন্তু বিজেপি এখানে আর বেশি দিন টিকছে না।” কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক, আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বাংলায় বিজেপির ইতিহাস সংক্ষিপ্ত। পাঁচ-ছ'বছরের। ভোটের আগে ১৪৮ জনকে তৃণমূল থেকে এনে টিকিট দেওয়া হয়েছিল। তার ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে।”

বিধানসভা নির্বাচনের পর একঝাঁক নেতা তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন। মুকুল রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বাবুল সুপ্রিয়, সব্যসাচী দত্ত, অর্জুন সিংদের দলে টেনেই কি বিজেপি ভুল করেছিল? বিমলশঙ্করের বক্তব্য, "ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনা দেখে তারা বিজেপিতে এসেছিলেন। দলের প্রতি তাদের মতাদর্শগত টান ছিল না। কর্মসূচি সম্পর্কে ধারণা ছিল না। এই অংশ আবার ফিরে যাচ্ছে।” পর্যবেক্ষকদের মতে, তৃণমূল থেকে আসা নেতাদের সঙ্গে বিজেপির পুরনো নেতৃত্বের বনিবনা হচ্ছে না। এর ফলে বিজেপির আদি সংগঠন অগোছালো হয়ে পড়েছে। নেতাদের প্রত্যাবর্তনকে তৃণমূলের একাংশ জয় হিসেবেই দেখে। পদ্ম শিবিরের অন্দরের টানাপড়েনকে ঘাসফুলের নেতারা এখন পর্যবেক্ষণ করছেন নিবিড়ভাবে। দিলীপ প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মন্তব্য, "দল বদল করা কিছু নেতা দিলীপ ঘোষের মতো বিজেপির পুরনো নেতাদের কণ্ঠরোধ করছেন। এটা খুবই আপত্তিকর। ওঁর উচিত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ফরমান অগ্রাহ্য করা।” বিজেপি নেতার উদ্দেশে তৃণমূল নেতার এই বার্তা কি আদতে কোন্দলেই ইন্ধন? প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য