1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোটের লড়াই তীব্র

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
১৮ নভেম্বর ২০২০

পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন নির্বাচনে কে পাবে মুসলিম ভোট? এখন তার প্রতিযোগিতা চলছে। তৈরি হচ্ছে নতুন দল। লড়বে ওয়েইসির দলও।

https://p.dw.com/p/3lUPe
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar

গত দশ বছরে পরপর দুইটি বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোটকোন দিকে গেছে, তা জানার জন্য সবজান্তা গুগল বা কোনো বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার দরকার নেই। রাজ্যের যে কোনো বঙ্গসন্তানকে জিজ্ঞাসা করলেই তিনি নির্দ্বিধায় উত্তর দেবেন, তৃণমূলের কাছে। কিন্তু এ বার কঠিন প্রশ্ন হলো, আর মাস পাঁচেক পরে যে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে, সেখানে মুসলিম ভোট কোন দিকে যাবে?

প্রশ্নটা উঠছে, তার কারণ, বিজেপি যেমন মুসলিম ভোটে তৃণমূলের আধিপত্য ভাঙতে উঠেপড়ে লেগেছে, তেমনই বাম-কংগ্রেস জোটও মুসলিম মন পেতে তৎপর হয়েছে। সেই সঙ্গে এ বারের ভোটে পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম প্রধান সব আসনে প্রার্থী দেবে ওয়েইসির দল এআইএমআইএম। ওয়েইসি বিহারে প্রমাণ করে দিয়েছেন, তিনি মুসলিম ভোট কাটতে পারেন, কিছু আসনে জিততে পারেন এবং তা করে তিনি বিজেপি-র জয়ের পথ মসৃণ করতে পারেন। তাঁর কথা মুসলিমদের একাংশের ভালো লাগে।

এ ছাড়াও ফুরফুরা শরিফের এক পিরজাদা আব্বাস চৌধুরি জানিয়েছেন, তিনি আগামী মাসেই একটি রাজনৈতিক দল গঠন করছেন। অন্তত ৪৫টি আসনে প্রার্থী দেবেন। এই দলগুলি তৃণমূলের মুসলিম ভোট কাটতে পারলে বিপাকে পড়বেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিরোধীদের অভিযোগ, আসাদুদ্দিন ওয়েইসির পিছনে আছে বিজেপি। তাঁকে বিজেপি-ই বিভিন্ন রাজ্যে ভোটে লড়ায়, সাহায্য করে। উদ্দেশ্য, কংগ্রেস, আরজেডি বা যে দলগুলি মুসলিমদের সমর্থন পায়, তাদের সেই ভোট যতটা সম্ভব কম করা। ওয়েইসি অবশ্য এই অভিযোগ অতীতে বহুবার উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, তিনি দলের সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছেন। সব রাজ্যে তিনি ভোটে লড়বেন। বিজেপি তাঁর আদর্শগত শত্রু।

কিন্তু তাঁকে নিয়ে অভিযোগ থামছে না। অবশ্য বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন কলেজের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার শামিম আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''এমআইএম নামে হায়দরাবাদ-কেন্দ্রিক দল বিহারে সফল হয়েছে, তারা উগ্রবাদী মুসলিমদের ভোট পায়। যেমন বিজেপি পায় উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের ভোট। মাঝখানে আমরা যাঁরা উদার গণতান্ত্রিক দলকে জেতাবার জন্য পড়ে আছি, তাঁরা শুধু এমআইএমকে গালি দিচ্ছি, কিন্তু আরএসএস-বিজেপি-র কথা ভুলে যাচ্ছি। পশ্চিমবঙ্গে এমআইএম বা ফুরফুরা কেন্দ্রিক দল আদতে বিজেপির সুবিধা করে দেবে।''  তাঁর মত হলো, ''বিজেপি-কে জেতানোর জন্য মুসলিমদের গালি দিলে চলবে না। বাম ও গণতান্ত্রিক দলগুলিকে পথে নামতে হবে, আন্দোলন করতে হবে। বিজেপি-কে জেতানোর জন্য দায়ী অ-বিজেপি দলগুলিই।''

পশ্চিমবঙ্গে এ বার বাম-কংগ্রেস জোট করে লড়ছে। তারা যৌথ কর্মসূচিও করবে। একসময় মুসলিম ভোটের অনেকটাই বামেদের কাছে যেত। বাকিটা পেত কংগ্রেস। বামেরা আবার হারানো ভোট ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে। তারা আগামী ১৮ ডিসেম্বর সংখ্যালঘু দিবস পালন করবে। কংগ্রেসকে তাতে সামিল হতে বলেছে বামেরা।

কংগ্রেসের দুই নেতা অধীর চৌধুরি এবং আব্দুল মান্নান মঙ্গলবার ফুরফুরা শরিফে গিয়েছিলেন। পিরজাদা ত্বহা সিদ্দিকির সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়নি। কিন্তু পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে তাঁরা কথা বলেন। আব্বাস আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, ডিসেম্বরে তিনি দল গড়ছেন। তিনি চান বিজেপি-কে হারাতে কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল সকলে তাঁকে সমর্থন করুক।

আব্বাসের বিরুদ্ধেও অভিযোগ, তাঁর পিছনে আছে বিজেপি। আব্বাস অবশ্য এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। রাজ্য বিজেপির সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান আলি হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''বিজেপি-র জুজু দেখিয়ে তৃণমূল, কংগ্রেস, বামেরা মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক তৈরির চেষ্টা করেছে। বিজেপি-র উন্নয়নের শরিক মুসলিমরাও। তাই সংখ্যালঘু ভোট ভেঙে গেছে। ওয়েইসি, আব্বাসরা যে লড়বেন বলছেন, তাতে তৃণমূলের ভোট আরো ভাঙবে।''

তবে ত্বহা সিদ্দিকি, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরিরা এখনো তৃণমূলের সঙ্গে আছেন। ছোট-বড় আরো মুসলিম নেতাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছেড়ে যাননি। ফলে মমতা বনাম ওয়েইসি, আব্বাস, বাম-কংগ্রেসের মুসলিম ভোট পাওয়ার লড়াই জমজমাট হতে বাধ্য।

ঘটনা হলো, বিজেপি নানাভাবে তৃণমূল ও বাম-কংগ্রেসের কাছ থেকে মুসলিম ভোট ভাঙাবার চেষ্টা করবে। তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া যাক, তৃণমূল যদি ৮০ শতাংশ মুসলিম ভোট পায়, তা হলে তারা স্বাভাবিকভাবেই প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে এগিয়ে থাকবে। বিজেপি তাই বিভিন্ন কৌশলে এই ভোট তৃণমূলের কাছ থেকে বের করে আনার চেষ্টা করবে। সেই কাজটা অন্য রাজ্যে ওয়েইসিরা করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে করতে পারলে বিজেপি-র লাভ হবেই। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, মুসলিমরা যদি তৃণমূল, কংগ্রেস, বামেদের ভোট না দিয়ে অন্যদের দেয়, তা হলে বিজেপি-র কী করার আছে?

আবার বিজেপি-র কাছে যাতে হিন্দু ভোটের সিংহভাগ চলে না যায়, তৃণমূল ও অন্যরা তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। ভোটে লড়ার কৌশল তো এইভাবেই ঠিক হয়। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোট ভাঙাতে যাঁরা বেশি সফল হবেন, তাঁরাই নবান্নতে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসতে পারবেন।

অন্যবারের তুলনায় এ বার মুসলিমদের সামনে দল প্রচুর। তার মানে বিকল্পও অনেক। এর মধ্যে থেকে মুসলিমরা কাকে বেছে নেবেন, বিহারের মতো ওয়েইসিকে ভোট দেবেন না কি, আব্বাস সিদ্দিকির দিকে যাবেন, নাকি বাম-কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকবেন অথবা তৃণমূলকে বিজেপি বিরোধী মূল শক্তি হিসেবে দেখবেন, সেটাই এখন দেখার।