1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে মৌলবাদের স্বরূপ

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৭ মার্চ ২০১৭

কবি শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি কবিতা হিন্দুত্ববাদীদের কাছে আপত্তিকর মনে হয়েছে৷ তারা মামলা ঠুকেছে৷ মমতা ব্যানার্জির সরকার কবির পাশে৷ কিন্তু নিরপেক্ষতার প্রশ্নেও শুরু হয়েছে নতুন তর্ক৷

https://p.dw.com/p/2a0No
শনিবার কলেজ স্ট্রিট থেকে ধর্মতলা মিছিল করে হেঁটে গেলেন তাঁরা
শনিবার কলেজ স্ট্রিট থেকে ধর্মতলা মিছিল করে হেঁটে গেলেন তাঁরাছবি: DW/S. Bandopadhyay

কবি-লেখক-শিল্পী, যাঁরা সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত, বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানানোটাও তাঁদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে৷ কোনও বাধ্যতা থেকে নয়, বরং স্বতস্ফূর্ত আবেগ এবং বিবেকের তাড়না থেকে৷ কলকাতার কবি শ্রীজাতও তার বেশি কিছু করেননি৷ ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে বিজেপির বিপুল জয়ের পর এমন একজনকে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করা হলো, যিনি ঘোষিতভাবে কট্টর হিন্দুত্ববাদী৷ ফলে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ তাঁর হাতে কতটা নিরাপদ, সে নিয়ে উদ্বেগ, আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক সংবাদমাধ্যম থেকে সোশাল মিডিয়া, সর্বত্র৷ শ্রীজাতও ঠিক সেভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন একটি কবিতার মাধ্যমে৷ কবিতাটি ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছিল৷ শ্রীজাত জনপ্রিয় কবি, তাঁর বহু পাঠক৷ লেখাটি সহজেই ছড়িয়ে গিয়েছিল৷

SandipanChakraborti - MP3-Stereo

কিন্তু অসহিষ্ণুতার প্রকাশ ঘটল দ্রুত৷ ‘হিন্দু সংহতি মঞ্চ' নামে একটি সংগঠন আপত্তি তুলল, শ্রীজাত'র কবিতায় হিন্দু ধর্মীয় ভাবাবেগ আক্রান্ত৷ সেই অভিযোগে তারা পুলিশে অভিযোগও দায়ের করে দিল একাধিক৷ ভারতীয় দণ্ডবিধির প্রচলিত ধারা অনুযায়ী জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলো একজন কবির বিরুদ্ধে৷ এর পাশাপাশি সোশাল মিডিয়ায় শ্রীজাত, এমনকি তাঁর পরিবারের লোকজনকে উদ্দেশ্য করে শুরু হলো গালিগালাজ, হুমকি৷ পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখা গেল সেই সোশাল মিডিয়াতেই৷ বহু মানুষ একজন কবির মত প্রকাশের অধিকারের সপক্ষে দাঁড়ালেন৷

এরই মধ্যে একটি টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি জানালেন, তিনি এবং তাঁর সরকার শ্রীজাতর পাশে আছে৷ আইনত অভিযোগ দায়ের হয়েছে যেহেতু, আইন আইনের কাজ করবে৷ কিন্তু শ্রীজাত'র ওপর আঁচ পড়বে না, তাঁর কলমও সচল থাকবে৷ এই সরকারি আশ্বাসের পরও কলকাতার লেখক, শিল্পী, কবিরা মনে করলেন, একজন কবির কণ্ঠরোধের এই অপচেষ্টার প্রতিবাদ হওয়া দরকার৷ শনিবার কলেজ স্ট্রিট থেকে ধর্মতলা মিছিল করে হেঁটে গেলেন তাঁরা৷ কবি মন্দাক্রান্তা সেন, শিল্পী সমীর আইচসহ অনেকেই যোগ দিয়েছিলেন সেই মিছিলে৷ মিছিলে না থেকেও সমর্থন জানিয়েছিলেন বাংলার অনেক বিশিষ্টজন৷ এই মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন কবি সন্দীপন চক্রবর্তী৷ তিনি বললেন, ‘‘শ্রীজাত'র সঙ্গে যা হলো, তা ভবিষ্যতে অন্য কারও সঙ্গেও হতে পারে৷ হতেই পারে, সেই কবি, বা লেখক হয়ত শ্রীজাতর মতো বিখ্যাত কেউ নন৷ অথবা তাঁদের পাশে হয়ত সরকার দাঁড়াল না৷ কাজেই একজন কবির স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারে এই যে হস্তক্ষেপ, তার প্রতিবাদ হওয়াই দরকার৷''

RijurekhChakraborti - MP3-Stereo

এদিকে অন্য একটি প্রশ্ন তুলেছেন সমসময়ের একজন গদ্যকার সৌরভ মুখোপাধ্যায়৷ তিনি তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘‌‘‌কয়েক মাস আগে, ছন্দ-মেলাতে-না-জানা ব্যক্তি এক বিশেষ ধর্মীয় প্রসঙ্গে কটু মন্তব্য করেছিল৷ নিগ্রহ হয়েছিল তুমুল, তদুপরি তার বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিল ঐ বিশেষ ধর্মের মুরুব্বিরা, কেস দিয়েছিল এই রাজ্যের পুলিশ৷ অনেক লোকের অনেক চেষ্টাতেও জামিন হয়নি, পুজোর সময় সে জেলে কাটিয়েছিল৷ তার জন্য আলোকপ্রাপ্ত বাকস্বাধীনতাকামী সেলিব্রিটিরা মিছিল করেননি৷ ফেসবুকে 'পাশে আছি' বলে বিপ্লব হয়নি৷ মিডিয়া প্রায় চুপ ছিল৷'‌'‌

সৌরভের মূল বক্তব্য, নিজের ভাবনা প্রকাশ্যে বলা যদি অপরাধ না হয়, তা হলে একই অপরাধে দু'‌জনের আলাদা বিচার হয় কী করে৷ সৌরভ এখানে ইঙ্গিত করেছেন, তারক বিশ্বাস নামে এক যুক্তিবাদীর হেনস্থার কথা, যে খবর গত বছর অক্টোবরে ডয়চে ভেলেও প্রকাশ করেছিল৷ এক যাত্রায় এই পৃথক ফলের কথা আজ অনেকেই তুলছেন৷ আবার অন্যতর মতামতও জানা যাচ্ছে৷ কবি ঋজুরেখ চক্রবর্তী যেমন মনে করছেন, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদ করা উচিত, কিন্তু সেই প্রতিবাদ করতে গিয়ে হিন্দু ধর্মের একটি অংশের কাছে যা পবিত্র, তার সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করা যায় না৷ এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে যুক্তিবাদী ও মুক্তচিন্তার লেখকদের ওপর হামলার প্রসঙ্গ তুলেছেন ঋজুরেখ৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য