1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক সন্ত্রাসও শুরু

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৬ জুলাই ২০২০

লক ডাউন উঠতে না উঠতেই পশ্চিমবঙ্গে ফের শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক সন্ত্রাস৷ কোথাও আমফানের ত্রাণ বিলি নিয়ে অনিয়মের জেরে গন্ডগোল তো কোথাও গোষ্ঠী সংঘর্ষ৷ সরকারবিরোধী সঙ্ঘাত তো আছেই৷

https://p.dw.com/p/3ereM
ফাইল ফটোছবি: DW/S. Bandopadhyay

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা এবং বীরভূম ফের খবরে৷ সৌজন্যে রাজনৈতিক সন্ত্রাস৷ এবং সবকটি দাঙ্গা হাঙ্গামার ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের নাম৷ দক্ষিণ ২৪ পরগণার কুলতলিতে সোমবার বন্‌ধ পালিত হয়েছে৷ শনিবার সেখানে বামপন্থি এসইউসিআই দলের এক কর্মীর তৃণমূল গুন্ডাদের হাতে খুন হওয়ার প্রতিবাদে৷

‘পুড়িয়ে, পিটিয়ে মেরে, বারান্দায় ঝুলিয়ে দিলো‘

তার আগে তৃণমূলের এক কর্মীকে কুলতলিতে এসইউসিআই দুষ্কৃতিরা পিটিয়ে মেরেছে বলে অভিযোগ৷ এসইউসিআই অবশ্য দাবি করছে, ওই তৃণমূল কর্মী হামলা করতে এসেছিলেন৷ ডাকাত ভেবে তাঁকে পিটিয়ে মারে স্থানীয় মানুষ৷ 

উত্তর ২৪ পরগণার হালিশহরে রবিবার হামলা হয়েছে ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের গাড়ির ওপর৷ এখানেও অভিযুক্ত তৃণমূল৷ তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, অর্জুনের দলবলই হামলা শুরু করেছিল৷ এই জেলারই ইছাপুরে শনিবার তৃণমূল কাউন্সিলর চম্পা দাসকে নিশানা করে গুলি চালায় দুষ্কৃতিরা৷ গুলি তাঁর পায়ে লাগে৷ তিনি আপাতত কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷

বীরভূমের খয়রাশোলে তৃণমূল কর্মীর খুনের দায় অবশ্য চেপেছে তৃণমূল কর্মীদেরই ঘাড়ে৷ নিহত শিশির বাউরির বাড়ির লোকেরা তার ছয় দলীয় সহকর্মীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন, যাদের চারজনকে রবিবারই গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ দক্ষিণ ২৪ পরগণা এবং বীরভূমের তিনটি খুনের ঘটনায় মোট ১৫জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ 

কিন্তু হঠাৎ কী এমন ঘটল যে লক ডাউন উঠতে না উঠতেই রাজনৈতিক সঙ্ঘর্ষ শুরু হয়ে গেল?‌ কুলতলির প্রাক্তন এসইউসিআই বিধায়ক জয়কৃষ্ণ হালদার জানাচ্ছেন, তাদের এলাকায় বিরোধটা হঠাৎ নয়৷ স্থানীয় মৈপিঠ-বৈকুণ্ঠপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্তৃত্ব নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে এসইউসির গত দু'‌বছর ধরেই বিবাদ চলছে৷ গরিষ্ঠতা হারিয়েও যে পঞ্চায়েত দখলে রেখেছে তৃণমূল যুবা৷ কিন্তু সাম্প্রতিক গোলযোগ, আমফান পরবর্তী সময়ে ত্রাণ বিলিতে বেনিয়ম নিয়ে পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে জয়কৃষ্ণবাবুর অভিযোগ, ‘‌‘‌বুলবুল ঝড় থেকে শুরু করে, কোনো কাজই পঞ্চায়েত মিটিং ডেকে করতো না৷ তার মতো করে লোকজনকে দিচ্ছিলো৷ ত্রাণের মাল পঞ্চায়েত অফিসে আসছিল না৷ কোথায় মাল, তার হিসেব নেই৷ দিতো না এসডিওকে৷ এবারও আমফান ঝড়ে বিডিও তিন হাজার ত্রিপল দেয়৷ ডিএম কিট দেয়, প্যাকেটের মধ্যে থালা, গ্লাস, ইত্যাদি থাকে৷ পুকুর পরিষ্কার করার জন্যে চুন দেয়৷ গৃহহীনদের ঘর করার জন্য ৫০০ না ৬০০–র মতো খোঁটা দেয়৷ পুরোটাই বলেছিল পঞ্চায়েত সদস্যদের মিটিং ডেকে ঠিক করবে৷ ২৯ মার্চ প্রধান একটা মিটিং ডাকে৷ শুধু বলে বিডিওর থেকে ৩০০ ত্রিপল পেয়েছি, আর কিছু পাইনি৷ সেটাই মেম্বারদের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেয়৷'‌'‌
জয়কৃষ্ণ হালদার জানাচ্ছেন, ত্রাণ বিলিতে এই দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ জানাতেই এবারের বিরোধের শুরু৷ বিশেষত যেখানে খবর পাওয়া যাচ্ছে ত্রাণের ত্রিপল, অথবা ডিএম কিটের থালা, গেলাস খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে৷ কিন্তু সেই নিয়ে অশান্তি শেষ পর্যন্ত যে জায়গায় পৌঁছায়, তার ভয়ানক চেহারাই প্রকাশ করছে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক বৈরিতার হিংস্র স্বরূপ৷ প্রথমে জানা গিয়েছিল, কুলতলির যুব তৃণমূল নেতা অশ্বিনী মান্নাকে শুক্রবার রাতে মারধর করে কুপিয়ে খুন করার পরদিন এসইউসিআই নেতা সুধাংশু জানার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়৷ পুলিশ নাকি জানিয়েছিল, তিনি আত্মহত্যাও করে থাকতে পারেন৷ কিন্তু জয়কৃষ্ণ হালদার দাবি করলেন, সুধাংশু জানার ঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে সেই আগুনে ফেলে তাঁকে মারধর করা হয়েছিল৷ পুড়িয়ে, পিটিয়ে মেরে, গাছে নয়, বারান্দায় ঝুলিয়ে দিলো৷ স্বামী, স্ত্রী দুজনে থাকতো৷ স্ত্রী অন্য দরজা দিয়ে পালিয়েছে৷ আর একে ধরে আগুনে ফেলে মারতে মারতে যখন মরে গেছে, তখন ওই বারান্দায় ঝুলিয়ে দিয়ে চলে এসেছে৷'‌'‌ এরপর কুলতলির বাজারে ঢুকে দুষ্কৃতিরা বেছে বেছে এসইউসিআই কর্মী-সমর্থকদের দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ৷