1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে স্কুল-কলেজ খুলবে কবে?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২১ জানুয়ারি ২০২১

লকডাউনের পর জীবনযাত্রা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক৷ গণপরিবহণ চালু হয়েছে অনেকদিন আগেই৷ কিন্তু স্কুল-কলেজ খুলবে কবে? ছাত্র থেকে শিক্ষক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে এই প্রশ্ন৷

https://p.dw.com/p/3oDp0
Indien Coronavirus Schulen schließen wegen der Pandemie in Westbengalen
ছবি: Payel Samanta/DW

কেন্দ্রীয় সরকার গত ২১ সেপ্টেম্বর এক নির্দেশিকায় জানিয়েছিল, বিভিন্ন রাজ্য সরকার কোভিড স্বাস্থ্য বিধি মেনে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে পারে৷ তারপর একে একে অনেক রাজ্যে স্কুল খুলেছে৷ অন্ধ্র প্রদেশ, আসাম, কেরালা, ওড়িশা, গুজরাত, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান সহ বিভিন্ন রাজ্যেই পাঠ শুরু হয়েছে৷ গত সোমবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে গিয়েছে দিল্লিতেও৷ পশ্চিমবঙ্গে কবে চালু হবে?

গত মার্চ থেকে রাজ্যে সব স্কুলে পঠনপাঠন বন্ধ৷ অনলাইনে কোথাও কোথাও পড়াশোনা হচ্ছে বটে, কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট নয় পড়ুয়া, অভিভাবকদের বড় অংশ৷ এদিকে আগামী জুনে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার দিন ঘোষণা করেছে স্কুল বোর্ড৷ শিক্ষকদের বক্তব্য, যারা বোর্ডের পরীক্ষায় বসবে, তাদের অন্তত স্কুলে আনা হোক৷ ঢাকুরিয়ার বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দীপান্বিতা রায়চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকারি স্কুলে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা কখনই স্কুলের বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি৷ আমরা একটা পরীক্ষাও নিতে পারিনি৷ এখন নবম, দশম, একাদশ, দ্বাদশ— এই চারটে ক্লাসের মেয়েরা স্কুলে আসুক৷ সবার একসঙ্গে আসার দরকার নেই৷ বিভিন্ন সেকশন বা রোল নম্বর ধরে একদিন অন্তর অন্তর আসবে৷ শিক্ষকরা পর্যাপ্ত সংখ্যায় রয়েছে৷ এ ভাবে খুললে সকলের ভিতরই পড়ার চেতনা আসবে৷’’

‘‘অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা কখনই স্কুলের বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি’’: দীপান্বিতা রায়চৌধুরী

একই সুরে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হয়তো ছাত্রছাত্রীরা অনেক নম্বরও পেয়ে যাবে৷ কিন্তু তাদের ভিত তৈরি হবে না৷ স্কুলে স্বাস্থ্য বিধি মেনে ফাঁকা ফাঁকা করে বসিয়ে প্র্যাকটিকাল বা মক টেস্ট নেওয়া যায় না? অন্তত শুরু হোক একটা কিছু দিয়ে৷’’

গ্রামীণ স্কুলে অভিভাবকদের ভূমিকা খুব একটা থাকে না৷ তাই প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরা এক বছরের অনিয়মিত ক্লাসে আত্মবিশ্বাসও হারিয়ে ফেলেছে৷ বোর্ডের পরীক্ষাও দিতে চাইছে না তারা৷ একদিকে স্কুলে আসতে না পেরে ভালো ছাত্রছাত্রীরা যেমন হতাশ হয়ে পড়েছে, তেমনই কম মেধার পড়ুয়ারা পড়াশুনোকে গুরুত্ব দেয়নি৷ এমনকি ভালো ছাত্ররাও এই এক বছরের ব্যবধানে খুবই খারাপ মানে পৌঁছে গিয়েছে৷ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পড়ুয়াদের পড়াশুনো নিয়ে আগ্রহও তৈরি হয়নি৷ লক্ষ্মীনারায়ণপুর গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকা জয়শ্রী দেবনাথ বলেন, ‘‘সব ছাত্রছা্ত্রীকে অনলাইন ক্লাসের আওতায় আনতে পারিনি৷ সকলের কাছে স্মার্টফোন নেই৷ উপযুক্ত ব্যবস্থা হোক, স্কুল খুলে যাক৷ জীবন কি এভাবে থমকে যেতে পারে?’’

মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের বিনামূল্যে ট্যাব দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে৷ কিন্তু তার থেকেও স্কুল খোলা অনেক বেশি জরুরি বলে মনে করেন কিঙ্কর অধিকারী৷ তিনি বলেন, ‘‘কিছু সংখ্যক ছাত্র ট্যাবে পড়াশুনো করতে পারে৷ কিন্তু সবাই করবে কি? যখন করোনা তুঙ্গে উঠেছিল, তখনই ট্যাব দিলে কাজে লাগত৷ আজ যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিকের পথে, তখন দ্বাদশের পঠনপাঠন চালু করলে সরকারের এত টাকা ব্যয় হত না! এখনও অনেক ছাত্র ট্যাব পায়নি৷ আর কবে তারা পাবে?’’

‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার নামই করছেন না কর্তৃপক্ষ’’: দেবনীল পাল

দুর্গাপুজোর পর থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রস্তুত থাকতে বলেছিল শিক্ষা দফতর৷ জানুয়ারিতে নতুন শিক্ষাবর্ষের পঠনপাঠন হয়তো শুরুও হয়ে যেত৷ কিন্তু করোনার নয়া আতঙ্ক বাদ সেধেছে৷ তাই স্কুল খোলার ব্যাপারে এখনও ভাবনাচিন্তা চলছে সরকারি স্তরে৷ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, স্কুলে স্যানিটাইজেশন চলছে৷ রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷

কেন্দ্রীয় সরকার স্কুল খোলার জন্য সম্প্রতি আরও এক দফা নির্দেশিকা দিয়েছে৷ এ ব্যাপারে সাবধানেপা ফেলতে চাইছে রাজ্য৷ এদিকে ছাত্রছাত্রীরা অধৈর্যও হয়ে উঠছে৷  স্বাস্থ্যবিধি মেনে লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরি খোলার দাবিতে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠন আন্দোলনে নামে৷ তাদের তরফে দেবনীল পাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার নামই করছেন না কর্তৃপক্ষ৷ তা নিয়ে কেউ কোনো আলোচনাই করছেন না৷ আমরা অবিলম্বে ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি এবং অফিসগুলি খোলার দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিলাম৷ ধাপে ধাপে যেন গবেষক, ফাইনাল ইয়ার ও বাকি ছাত্রদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়৷’’