পাকিস্তানে বানভাসিদের দুর্ভোগ চরমে, বাস উল্টে নিহত ১৫
২৩ আগস্ট ২০১০পাকিস্তানে বন্যার শুরুটা হয়েছিল উত্তরাঞ্চলে, প্রায় এক মাস আগে৷ এখন তা বিস্তৃত হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলেও৷ এর মধ্যেই সোমবার বাস উল্টে মারা গেলেন ১৫ জন৷ ঘটনাটি ঘটেছে ইসলামাবাদ থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরের তুনসা শহরের খাদ বুজদার এলাকায়৷ বন্যার জলে ডুবে যাওয়া একটি রাস্তায় চলতে গিয়ে উল্টে যায় বাসটি৷ এতে অর্ধশতাধিক যাত্রী ছিল৷ স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা আমজাদ ডোগার জানালেন, ১৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ নিখোঁজ আছে আরো বেশ কয়েকজন৷ এই দুর্ঘটনার জন্য বাস চালককেই দায়ী করলেন আমজাদ৷ তিনি বলেন, ওই সড়কটি পুরোপুরি পানির নিচে৷ সেখান দিয়ে যাতায়াত এখন নিষিদ্ধ৷ তারপরও চালক সেখান দিয়ে গাড়ি চালিয়ে গিয়েছিল৷ পানির তোড়ে বাসটি উল্টে যায়৷
খাদ বুজদার এলাকাটি পাকিস্তানের মধ্যাঞ্চলের৷ সেই অঞ্চল ছাড়িয়ে সিন্ধুর জল এখন ভাসাচ্ছে দক্ষিণের বাসিন্দাদের৷ বাঁধ ধসে সিন্ধু প্রদেশের বিভিন্ন এলাকা এরই মধ্যে তলিয়ে গেছে৷ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে কয়েক লাখ মানুষকে৷ উত্তরাঞ্চলে বানভাসি মানুষ এখন যুদ্ধ করছে ক্ষুধা আর ব্যাধির সঙ্গে৷ সরকার যদিও বলছে, কাউকে খাদ্যাভাবে মরতে দেওয়া হবে না, তবুও অনেক এলাকার মানুষ এখনো ত্রাণ পায়নি৷ যেমনটা বলছিলেন ইব্রাহিম সেকারি নামে একজন৷ ‘‘ত্রাণ আসবে, আর তার অপেক্ষায় আছে হাজারো মানুষ৷ কিন্তু সে অপেক্ষার পালা এখনো ফুরোচ্ছে না৷ অনেক কষ্টে আছি আমরা'', বলছিলেন তিনি৷
একই সুর শোনা গেল জাতিসংঘ খাদ্য কর্মসূচির মুখপাত্র আজমল জামালের কণ্ঠেও৷ তিনি বললেন, ‘‘দুর্গতদের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি আমরা৷ কিন্তু অনেক এলাকা পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন৷ স্বীকার করতেই হচ্ছে, কয়েক লাখ মানুষের কাছে খাবার এখনো পৌঁছে দিতে পারিনি৷'' যে সব এলাকায় রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে, সেখানে হেলিকপ্টারে করে ত্রাণ ফেলা হচ্ছে৷ তবে তা যথেষ্ট নয়, তাই এখন আরো হেলিকপ্টার চাইছে জাতিসংঘ৷ রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়া নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ৷ সংস্থার মানবিক সহায়তা সমন্বয়কারী দপ্তরের মুখপাত্র মরিজিও গিলিয়ানো বললেন, বন্যাদুর্গতদের মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ ডায়রিয়া ও চর্ম রোগে আক্রান্ত৷ এছাড়া সাপের উপদ্রবও বেড়েছে৷
বন্যায় এ পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে৷ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা দেড় কোটি৷ ভেসে গেছে বহু বাড়ি-ঘর এবং মাঠের ফসল৷ পাকিস্তান সরকার বলছে, বন্যার পর অবকাঠামো ঠিকঠাক করতে অনেক খরচা যাবে৷ ত্রাণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন পর্যন্ত ৮১ কোটি ডলার সাহায্য দিয়েছে৷ তবে আরো প্রয়োজন, এ কথা বলছেন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি৷ আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আইএমএফ থেকে সাহায্য নেওয়ার জন্য দেন-দরবার করছেন অর্থমন্ত্রী আব্দুল হাফিজ শেখ৷ তাই তিনি এখন ওয়াশিংটনে৷
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, অতিবৃষ্টির কারণেই পাকিস্তানে এই বন্যা দেখা দিয়েছে৷ যাতে তলিয়ে গেছে দেশের এক পঞ্চমাংশ এলাকা৷ গত ৮০ বছরে এটাই দেশটিতে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়৷ আবহাওয়া বিভাগ বলেছ, পানি এখন দক্ষিণাঞ্চল হয়ে ভারত মহাসাগরে নামছে৷ শেষ সময়ে তাই দক্ষিণাঞ্চলেও বন্যা দেখা দিয়েছে৷ আর এই অবস্থা আরো দুই-তিন দিন চলতে পারে৷
প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন