1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাকিস্তান থেকে যেতে হবে আফগান শরণার্থীদের

২১ জানুয়ারি ২০১৮

টেবিল টেনিসে পিংপং বল যেমন একবার নেটের ওপারে যায়, আবার ফিরে আসে এপারে, তাঁদের অবস্থাও অনেকটা তেমনই৷ পাকিস্তান জানিয়েছে, একমাসের মধ্যে ফিরে যেতে হবে আফগান শরণার্থীদের৷ কিন্তু কী বলছেন সেই আফগানরা?

https://p.dw.com/p/2rAIB
ছবি: DW/S. Tanha

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, সিরিয়া থেকে তখন দলে দলে শরণার্থী পালিয়ে আসছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে৷ প্রাণের ভয়ে৷ প্রাণ হাতে নিয়ে৷ ইউরোপের এক শিবিরে আশ্রয় নেওয়া তেমনই এক শরণার্থীকে সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘এখানে থেকে যেতে চান? দেশের চেয়ে অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে তো এখানে?'' উত্তরে সেই শরণার্থী বলেছিলেন, প্রাণ সংশয় না হলে কেউ পালাতেন না৷ এখনো তাঁরা দেশেই ফিরতে চান৷ সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন তাঁকে আটকে রাখতে পারবে না, নিজের মাটির সোঁদা গন্ধের বাতাস তাঁকে একদিন ফিরিয়ে দেবেই ‘নিজের দেশ'৷

এমনই তো বলছিলেন তানভির মোকাম্মেলের সাম্প্রতিকতম তথ্যচিত্রের চরিত্রেরা! পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত প্রান্তের কলোনিতে বসে বলিরেখায় ভরে যাওয়া মুখ নিয়ে যখন এক বৃদ্ধা স্বপ্ন দেখতে থাকেন যে, একদিন না একদিন তাঁর ‘দেশ' ফিরে পাবেনই!

পৃথিবীর কোণে কোণে ছড়িয়ে থাকা শরণার্থীরা আসলে শেষপর্যন্ত একই ভাষায় কথা বলেন৷ দেশের স্বপ্ন, দেশ ছাড়ার যন্ত্রণা তাঁদের জীবনভর কুড়ে কুড়ে খায়৷ পাকিস্তান ছাড়ার নির্দেশ জারি হওয়ার পর সে দেশে বসবাসকারী আফগান শরণার্থী জামিল খান আজিজি তাই বলে ফেলেন এমন এক সংলাপ, বহু বছর আগে ঠিক যে সংলাপ ঋত্বিক ঘটক লিখেছিলেন দেশভাগ নিয়ে তৈরি ছবিতে-- ‘কেউ কথা রাখেনি৷' কেউ কথা রাখে না, জেনে ফেলেছেন ২৫ বছরের আজিজি৷ বলেছেন, দেশে তিনিও ফিরতে চান৷ ফিরতে চান নিজের বাড়িতে৷ ছোটবেলার মাঠে৷ কিন্তু সবই তো ধ্বংস হয়ে গেছে! সরকার কি ফিরিয়ে দিতে পারবে সেইসব? ফেরাবে না৷ সরকার কথাই দেয় কেবল, আসলে কিছুই ফেরায় না৷ পাকিস্তানকেই তাই ক্রমশ নিজের দেশ ভাবতে শুরু করেছেন আজিজি৷ অন্তত চেষ্টা করছেন৷ পাকিস্তান সরকারের নয়া নির্দেশের পর এখন যদি একমাসের মধ্যে আফগানিস্তানে ফিরে যেতে হয় তাঁদের, তাহলে নিজদেশে পরবাসীর মতো জীবন কাটাতে হবে৷ হয়ত আক্রমণের শিকার হতে হবে বারংবার৷

এত কথার একটাই কারণ৷ সম্প্রতি পাকিস্তান সরকার জানিয়েছে, একমাসের মধ্যে সমস্ত আফগান শরণার্থীকে ফিরে যেতে হবে নিজের দেশে৷ পাকিস্তান শরণার্থীদের খরচ আর বহন করতে পারছে না৷ পাশাপাশি, কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও নানা সমস্যা শুরু হয়েছে৷

পাকিস্তান অবশ্য এমন নির্দেশ এই প্রথম জারি করেনি৷ এর আগেও বেশ কয়েকবার আফগান নাগরিকদের দেশে ফিরে যেতে বলা হয়েছিল৷ তবে তা ধোপে টেকেনি৷ পাকিস্তানে কয়েকলক্ষ আফগান শরণার্থীর বাস৷ পাকিস্তানে অবস্থিত জাতিসংঘের মানবাধিকর সংগঠনের হিসাব অনুযায়ী, শুধু গত বছরেই ৩ লক্ষ ৬০ হাজার আফগান শরণার্থী এসেছে পাকিস্তানে৷ জাতিসংঘের বক্তব্য, গত কয়েক বছর ধরে আফগান নাগরিকদের দেশে ফেরানোর নানাবিধ চেষ্টা চালাচ্ছে তারা৷ তবে পাকিস্তান সরকারের নয়া নীতি সেই কার্যপ্রক্রিয়াকেও সমস্যায় ফেলবে বলে তাদের আশঙ্কা৷

পাকিস্তান সরকার অবশ্য এবার নীতিপ্রণয়ন করতে বধ্যপরিকর৷ তাদের বক্তব্য, দেশের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তার জন্যও এই পদক্ষেপ জরুরি৷

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানে বসবাসরত আফগানদের বক্তব্য, সে দেশে তাঁরা নিজেদের মতো কাজকর্মও শুরু করেছেন৷ একমাসের মধ্যে দেশ ছাড়তে হলে আর্থিক এবং সামাজিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে তাঁদের৷ কেউ কেউ বলেছেন, বহু চেক ২০২১ সালে ভাঙানোর কথা৷ এখন পাকিস্তান ছাড়তে হলে তা আর হবে না৷ এ যেন অনেকটা দ্বিতীয়বার শরণার্থী হওয়ার মতো অবস্থা৷

এদিকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশও সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রাণ সংশয় না থাকলে আফগান শরণার্থীদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে৷ ফলে চতুর্দিকে আফগান শরণার্থীদের অবস্থা এখন ভয়াবহ৷

বস্তুত, দেশভাগ নিয়ে তৈরি তাঁর উপন্যাসে সাদাত হাসান মান্টো টোবাটেক সিংয়ের কথা লিখেছিলেন৷ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যবর্তী কাঁটাতারে নিজের টোবাটেক রাজ্যের স্বপ্ন দেখতে দেখতে যিনি ঝুলে পড়েছিলেন৷ আফগানরা কি জানেন সেই টোবাটেক সিংয়ের কথা? হয়তো জানেন না৷ শুধু জানেন, পৃথিবীর ইতিহাসে শেষপর্যন্ত শরণার্থীদের পরিণতি হয় টোবাটেক সিংদের মতোই৷

মাসুদ সইফুল্লাহ, রিয়াজ সইদ/এসজি