পাখি আমার রঙিন পাখি

দক্ষিণ অ্যামেরিকার ম্যাকাউ পাখিদের সঙ্গে রংয়ের বাহারে পাল্লা দিতে পারে, এমন টিয়া খুব কমই আছে৷ ওদের আবার স্ত্রী আর পুরুষের মধ্যে পালকের কোনো ফারাক নেই৷

সাধারণত পুরুষ পাখিরা বেশি রঙিন হয়, কেননা তাদের স্ত্রী পাখিদের মন ভোলাতে হয়৷ মধ্য অ্যামেরিকার এই ‘শাইনিং হানিক্রিপার’ পাখিগুলোকে দেখলে তা বোঝা যায়৷ বলুন তো পুরুষ পাখি কোনটি? ঠিক ধরেছেন, ডানদিকেরটা!

কখনো-সখনো বিশ্বাস করা শক্ত হয় যে, পুরুষ আর স্ত্রী পাখি দু’টি একই প্রজাতির! ‘স্কারলেট-রাম্পড ট্যানেজার’ পাখিদের মধ্যে পুরুষ পাখিটা মূলত কালো, এক পিছনের দিকটা লাল হওয়া ছাড়া; সেই সঙ্গে রুপালি ঠোঁট আর ঘন লাল চোখের মণি৷ স্ত্রী পাখিগুলোর কিন্তু মাথাটা ধূসর, শরীরের ওপরের দিকটা জলপাই রংয়ের আর পাখাগুলো বাদামি৷

দুনিয়ার অর্ধেক পাখি আসলে পাসিফর্মেস গোত্রের, অর্থাৎ যাদের পায়ের তিনটে নখর থাকে সামনের দিকে আর একটি থাকে পিছনের দিকে – ফলে দাঁড়ে বসতে সুবিধা হয়৷ এই প্যাসেরাইন পাখিদের বহু প্রজাতির স্ত্রী পাখিরা খুবই সাদামাটা, আবার কোনো কোনো প্রজাতিতে নয়৷

পাখি আকারে যতো বড়ো হবে, ততোই নাকি সেই প্রজাতির স্ত্রী পাখিদের রংচঙে হবার সম্ভাবনা বাড়বে, বলছেন গবেষকরা৷ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে স্ত্রী পাখিদের বাহার বেশি হয়, কেননা তাদের পুরুষ পাখিদের মন জয় করার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়৷

নামই হল বার্ডস অফ প্যারাডাইস৷ এদের ক্ষেত্রে পুরুষ পাখিরা হয় যেমন রংচঙে, তেমনই তাদের লেজে দু’টি লম্বা পালক থাকে৷ স্ত্রী পাখিদের মন জয় করার জন্য পুরুষ স্বর্গের পাখিদের নাচ একটা দেখার মতো জিনিস: লেজের পালক ঘোরানোটাও যেন অস্ট্রিচ ফেদার ঘোরানোর মতো৷ আবার গালগলা ফুলিয়ে গোল তুলোর বল হয়ে যাওয়াটাও তার মধ্যে পড়ে৷

পুচ্ছটি তোর উচ্চে তুলে নাচা – ময়ূরকে সে কথা বলে দিতে হবে না৷ বর্ষা এলে, মেঘ ঘনালে ময়ূরের পেখম তুলে নৃত্য উপমহাদেশের একটি সুপরিচিত ও সুপ্রাচীন দৃশ্য৷

দক্ষিণ অ্যামেরিকার ‘কিং ভালচার’-এর বাকি শরীরটা সাদা, ছাইরং আর কালো পালক দিয়ে ঢাকা৷ কিন্তু তাদের মাথাটা খুবই রংচঙে৷ নাম ‘শকুন রাজা’ হয়েছে সম্ভবত এই কিং ভালচার ছোটখাটো শকুনদের মড়ির কাছে ঘেঁষতে দেয় না বলে৷

কথা হচ্ছে ধনেশ পাখিদের নিয়ে৷ এদের ঠোঁট হয় আশ্চর্য ধরনের: মোটা, পুরু, রংচঙে৷ সেই ঠোঁটের দরুন এদের শিকারও করা হয়েছে বহুদিন৷

ফ্লেমিঙ্গো পাখিরা লাল হয় কী খেয়ে জানেন? বাঁকানো ঠোঁট দিয়ে মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জলের ওপর থেকে লাল চিংড়ি আর প্ল্যাঙ্কটন ছেঁকে নেয় ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’-এর গল্ফ খেলার এই পাখিগুলো৷ লাল চিংড়ি খায়, তাই তাদের পালকের রং হয়ে যায় লাল৷

জার্মানিতে স্টারলিং-রা কালো-বাদামি, খুব বিশেষত্ব নেই তাদের৷ কিন্তু বিশ্বের অন্যত্র তাদের রং খোলে, যেমন পূর্ব আফ্রিকার এই ‘সুপার্ব স্টারলিং’-দের৷ হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন, পাখিটার নামই সুপার্ব স্টারলিং৷ দেখতেও সুপার্ব!