পাখি দিয়ে পাখি শিকার

পারওয়ান প্রদেশের বাগরাম মাঠে পোষা সারসকে পানি দিচ্ছেন ৪৯ বছর বয়সি জান আগা৷ খুব সকাল সকাল ফাঁদ পাততে সারসগুলোকে প্রস্তুত করছেন তিনি৷ প্রায় ৩০ বছর ধরে পাখি শিকার করছেন জান আগা৷

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের উত্তরের বাগরাম মাঠে পোষা সারস ধরার চেষ্টা চালাচ্ছেন জান আগা৷ এসব এলাকায় স্থানীয় ও অতিথি পাখিরা ভীড় জমায়৷ গত ৪০ বছরের যুদ্ধ-বিগ্রহ চলার সময়ে বন্ধ হয়নি এই পাখি শিকার৷

শিকারের আগে মাঠে নাস্তা সেরে নিচ্ছেন আগা৷ পারওয়ান এলাকার এই কৃষক বলেন, ‘‘পূর্বসূরীদের কাছ থেকে আমি শিকার করা শিখেছি৷ সেভাবে আমার সন্তানরাও আমার কাছ থেকে শিকার করা শিখেছে৷ আমার আশা, অন্তত দুই সন্তান এই ধারা বজায় রাখবে এবং আমি এর মাধ্যমে মানুষের স্মৃতিতে থাকব৷’’

শিকারে ব্যবহৃত কৃত্রিম সারস আগলে রেখেছেন শিকারি জান আগা৷ বিগত বছরগুলোর যুদ্ধে পেতে রাখা মাইন, দূষণসহ নানা কারণে বিপর্যস্ত কাবুল এলাকা৷ তবে কয়েক বছর ধরে সেখানে ‘কোল-এ-হাশমত খান’-সহ বিভিন্ন শিকারের এলাকা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে৷

বাগরাম এলাকায় পাখির দিকে বন্দুক তাক করছেন জান আগা৷ বসন্ত এলে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত সারসকে ব্যবহার করেন শিকারিরা, যেগুলোর কান্নায় ছুটে আসে শিকারের সারস৷ ‘‘একটি সারস অন্য সারসের কান্না সহ্য করতে পারে না,’’ বলেছেন জান আগা৷

মাঠে নিজের সারসকে খাওয়াচ্ছেন এই শিকারি৷ পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ না থাকায় জানা সম্ভব হয়নি, কত সারস ধরা পড়ে আর কতগুলো গুলি খায়৷ ১২-১৩ বছর বয়স থেকে শিকারে মগ্ন আগা জানিয়েছেন, প্রায় এক হাজার সারসের পাশাপাশি অগণিত কোয়েল, হাঁস ও চড়ুই ধরেছেন তিনি৷

শিকার করতে গিয়ে পোষা সারস দিয়ে ফাঁদ পাতেন জান আগা৷ নীচে দড়িতে বাঁধা সারস দিয়ে অন্য সারসকে নীচে আনতে প্রলুব্ধ করা হয়৷ শিকারের পর পাখিগুলোকে বাগরাম শহর কিংবা কাবুলের পাখির বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়৷

আকাশে পাখির ঝাঁক দেখছেন একজন শিকারি৷ পরে তিনি বলছিলেন, ‘‘খোলা জায়গায় শিকারের আনন্দই আলাদা৷ পাহাড়, মরুভূমি, শটগান আর শিকারের আগের রাতজাগা আমি অনেক পছন্দ করি৷ শিকার পেলেই আনন্দ আমাদের৷’’

জান আগার জন্য পাখি শিকার সব ধরনের চাপ মুক্তির উপায়৷ দিনে পাখি শিকারের আগের রাতে মরুভূমিতে পিকনিক করে সময় কাটান শিকারিরা৷