1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাটচাষীদের আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী করার উদ্যোগ নিন

৮ অক্টোবর ২০২০

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের দ্বিতীয় উৎস এখন পাট ও পাটজাত পণ্য৷ অন্তত চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এই খাত চামড়া খাতকে পেছনে ফেলেছে বলে জানিয়েছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো৷

https://p.dw.com/p/3jcb9
ছবি: bdnews24/M.M. Rahman

এদিকে, পাটের দাম পেয়ে কৃষকরা বেশ খুশি বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে৷ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলছে, দেশের বাজারে ভালো মানের এক মন পাট এখন প্রায় তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷ এর আগে কৃষক কখনো এত দাম পাননি৷ ফলে তারা বেশ খুশি৷

লেখাটি এতক্ষণ পড়ার পর পাট খাতের সাফল্য নিয়ে আমরা খুশি হতেই পারি৷ কারণ, রপ্তানি থেকে আয় বাড়ছে, কৃষকও ভাল দাম পাচ্ছে- আর কী চাই!

তবে এই খুশি যেন মাত্র কয়েকদিনের না হয় তার পরিকল্পনা এখনই করতে হবে৷ কারণ, পাটজাত পণ্যের রপ্তানিকারকরা ভবিষ্যতে পণ্য তৈরির জন্য পর্যাপ্ত পাট পাবেন কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷ তারা বলছেন, খরা ও অতিবন্যার কারণে এবার পাট উৎপাদন কম হয়েছে৷ ফলে পাটজাত পণ্য তৈরি করার মতো পর্যাপ্ত কাঁচা পাট এবার না-ও পাওয়া যেতে পারে৷ এই অবস্থায় যদি কাঁচা পাট রপ্তানি করা হয়, তাহলে সংকট আরো বাড়বে৷ তাই অন্তত এক বছরের জন্য কাঁচা পাট রপ্তানি ‘নিয়ন্ত্রণ’ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে চিঠি দিয়েছেন তারা৷ এতে তারা কাঁচা পাট রপ্তানির ওপর টনপ্রতি ২৫০ মার্কিন ডলার শুল্ক আরোপ করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ এছাড়া আনকাট, বাংলা তোষা রিজেকশন (বিটিআর) ও বাংলা হোয়াইট রিজেকশন (বিডাব্লিউআর) পাট রপ্তানি বন্ধেরও আহ্বান জানিয়েছেন৷

পাঠকদের হয়ত মনে হতে পারে, পাটজাত পণ্যের রপ্তানিকারকরা শুধু নিজেদের লাভের কথা বিবেচনা করে এমন প্রস্তাব দিয়েছেন৷ তা তো হতেই পারে৷ কিন্তু তাই বলে ব্যবসায়ীদের কথা ফেলেও দেয়া যাবে না৷ কারণ, সরকার গত জুলাই মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকল বন্ধ করে দেয়ায় পাটপণ্য রপ্তানি থেকে আয়ের জন্য তারাই আমাদের একমাত্র ভরসা৷ দেশে এখন ২৫৯টি বেসরকারি পাটকল রয়েছে৷

একটু পরিসংখ্যান জেনে নিলে বিষয়টা বুঝতে সহজ হবে৷ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসেবে, চলতি বছরের প্রথম তিনমাসে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ৩০.৭৫ কোটি ডলার আয় হয়েছে৷ এর মধ্যে শুধু পাট, অর্থাৎ কাঁটা পাট রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৪.১১ কোটি ডলার৷ আর বাকিটা এসেছে পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে৷ এসব পণ্য বেসরকারি পাটকলে তৈরি হয়েছে৷

পাটজাত পণ্য তৈরির ৭৫ শতাংশ কাঁচামালই হচ্ছে কাঁচা পাট৷ তাই ভবিষ্যতে রপ্তানি বাজার ধরে রাখতে কিংবা রপ্তানি আরও বাড়াতে পাটকল মালিকদের কাঁচা পাট লাগবে৷ কিন্তু এবার পাট উৎপাদন কম হওয়ায় মালিকরা পর্যাপ্ত পাট পাবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে৷

পাটকল মালিকরা বলছেন, ভারতেও এবার কাঁচা পাট উৎপাদন কম হয়েছে৷ তাই ঘাটতি মেটাতে তারা বাংলাদেশ থেকে বেশি করে পাট কিনতে চাইবে৷ সাধারণত বাংলাদেশের রপ্তানি করা কাঁচা পাটের বেশিরভাগ যায় ভারতে৷ এই আমদানির উপর ভারত কোনো শুল্ক আরোপ করেনি৷ তবে খেয়াল করার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে পাটপণ্য আমদানিতে অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি আরোপ করেছে ভারত৷ অর্থাৎ, ভারত বাংলাদেশ থেকে পাটজাত পণ্য কিনতে চায় না, কিনতে চায় কাঁচা পাট৷ এই কাঁচা পাট থেকে পাটজাত পণ্য তৈরি করে তারা সেগুলো বিদেশে রপ্তানি করবে৷ কারণ, ভারত জানে কাঁচা পাট রপ্তানির চেয়ে পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে লাভ কয়েকগুণ বেশি৷

Deutsche Welle Süd-Ost-Asien Mohammad Zahidul Haque
জাহিদুল হক, ডয়চে ভেলেছবি: DW

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও সেটা জানেন৷ বাংলাদেশের পাটপণ্যের উদ্যোক্তাদের একটি সংগঠন জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী সম্প্রতি দৈনিক সমকালকে জানান, শুধু পাট বিক্রি করলে যে লাভ পাওয়া যায় তার চেয়ে পাট দিয়ে পণ্য তৈরি করে বিক্রি করলে কয়েক গুণ বেশি লাভ হয়৷ এছাড়া কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও নাকি সুবিধাটা অনেক বেশি৷ তিনি জানান, এক টন কাঁচা পাট রপ্তানিতে পাঁচ থেকে ছয়জনের কর্মসংস্থান হয়৷ অথচ এক টন পাটপণ্য রপ্তানিতে ৭০ থেকে ৮০ জনের কর্মসংস্থান হয়৷

আমরা চাই, সরকার ব্যবসায়ীদের কথা শুনে অন্তত এক বছরের জন্য কাঁচা পাট রপ্তানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করবেন৷ তাহলে ব্যবসায়ীরা বেশি করে পাটজাতপণ্য রপ্তানি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসতে পারবেন৷ পাশাপাশি কর্মসংস্থানও বাড়বে৷

মনে রাখতে হবে, আমরা যদি এবার পাটকলগুলোকে পর্যাপ্ত কাঁচা পাট দিতে না পারি তাহলে হয়ত অনেক পাটকল সমস্যায় পড়ে বন্ধ হয়ে যেতে পারে৷ সেক্ষেত্রে আগামী মৌসুমে পাটের চাহিদা কমে যেতে পারে৷ এতে কৃষকদেরও বিপদে পড়ার সম্ভাবনা থাকে৷ অর্থাৎ সঠিক পরিকল্পনা না করলে এখন বেশি দাম পেয়ে খুশি হওয়া কৃষকের সুখ হয়ত দীর্ঘস্থায়ী হবে না৷