1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পানির নীচে নতুন বরফ আবিষ্কার

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মেরু অঞ্চলে বরফ গলার ঘটনা সম্পর্কে আমরা জানি৷ কিন্তু ভাসমান বরফের নীচে ঠিক কী ঘটছে, তা জানতে গিয়ে গবেষকরা এবার বরফের নতুন এক স্তর আবিষ্কার করেছেন৷

https://p.dw.com/p/3j5NJ
ছবি: David Goldman/AP Photo/picture-alliance

উত্তর মেরু অঞ্চলের শীতকাল মানেই মাসের পর মাস ধরে একটানা অন্ধকার অবস্থা৷ সূর্যের মুখ দেখার উপায় নেই৷ তার উপর উত্তর মেরুকে ঘিরে শীতকাল সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান এখনো খুবই সীমিত৷ অথচ পৃথিবীর জলবায়ুর উপর এই অঞ্চলের গভীর প্রভাব রয়েছে৷

কয়েক দশক ধরে সেখানে বরফের পরিমাণ কমে চলেছে৷ জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়া সেখানে আর কী ঘটছে, সে বিষয়ে এখনো খুব কম জানা গেছে৷ সমুদ্রবিজ্ঞানী হিসেবে ক্রিস্টিয়ান হাস জানতে চান, সমুদ্রের বরফ কীভাবে বদলাচ্ছে? পানির উপর বরফ কীভাবে বাড়ছে ও গলছে?

আলফ্রেড ভেগেনার ইনস্টিটিউটের সামুদ্রিক পদার্থবিদ ক্রিস্টিয়ান হাস-এর কাছে উত্তর মেরু অঞ্চলের শীতকাল গুরুত্বপূর্ণ এক পর্যায়৷ তিনি বলেন, ‘‘শীতকালে বরফ জমে এবং গ্রীষ্মকালেও তা টিকে থাকে৷ গ্রীষ্মকাল এবং সেইসঙ্গে গোটা জলবায়ু প্রণালীর উপর বরফের যথেষ্ট প্রভাব থাকে৷’’

ভাসমান বরফের নীচে কী ঘটছে?

শীতকালে মেরু অঞ্চলের অবস্থা নিয়ে গবেষণা করতে হলে সেই বৈরি শীতল পরিবেশে থাকতে হবে৷ এক আন্তর্জাতিক গবেষকদল সেটাই করেছে৷ অক্টোবর মাস থেকে ‘পোলার স্টার’ নামের জাহাজ উত্তর মেরু সাগরে বরফের মধ্যে ভেসে বেড়িয়েছে৷

মাসের পর মাস ধরে শীতের অন্ধকারে জাহাজটি বিচরণ করেছে৷ উত্তর মেরু অঞ্চলে এত বড় অভিযান এর আগে কখনো চালানো হয়নি৷ ক্রিস্টিয়ান হাস বলেন, ‘‘বাতাসে মাইনাস ৩০ থেকে মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও কম তাপমাত্রার অনুভূতি থাকলে কাজ করা খুব কঠিন ও বিপজ্জনক৷ কারণ তখন গোটা শরীর ঢেকে রাখতে হয়৷’’

ক্রিস্টিয়ান হাস ও তাঁর সহকর্মীরা শীতের মাসগুলিতে মেরু অঞ্চলের বরফ নিয়ে গবেষণা করেছেন৷ কেন সেই বরফ সঙ্কুচিত হচ্ছে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন তাঁরা৷ তাঁরা বরফের মধ্যে গর্ত খুঁড়ে নমুনা নিয়েছেন, তাপমাত্রা ও বরফের গতিবিধি পরিমাপ করেছেন৷ বরফ কেটে পাতলা চাকতি তৈরি করেছেন৷

Der US Eisbrechers "Polar Star".
‘পোলার স্টার’ জাহাজছবি: Reuters

নতুন আবিষ্কার নয়, নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করাই ছিল এই অভিযানের উদ্দেশ্য৷ বরফের নিখুঁত জীবনী রচনা করেছেন তাঁরা৷ কিন্তু এ সবের মধ্যে নতুন আবিষ্কারও সম্ভব হয়েছে৷ ডুবুরি রোবট সেই সাফল্যের দাবিদার৷ বরফের নীচে সমুদ্রের পানির উপর রোবট পাতলা বরফের স্তর দিয়ে তৈরি চকমকে মেঘ খুঁজে পেয়েছে৷ ক্রিস্টিয়ান হাস বলেন, ‘‘এই প্লেটলেট আইস মানুষের হাতের মতো বড় পাতলা বরফের স্তর, যেগুলি নানাভাবে ভাসমান বরফের নীচে লেগে থাকে৷ সাবমেরিন যখন অনেক সময় ধরে অন্ধকারে হেডলাইট জ্বালিয়ে দূর থেকে আলো ফেলে, তখন সেই বরফ চকমক করতে থাকে৷ কাছে গেলে বোঝা যায়, সেগুলি আসলে বরফের ক্রিস্টাল বা স্ফটিক৷’’

দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে আগেই পানির নীচে এমন চকমকে বরফের স্তর দেখা গিয়েছিল৷ উত্তর মেরু অঞ্চলে গবেষকরা প্রথমবার প্লেটলেট আইসের খোঁজ পেলেন৷ ভসমান বরফের নীচে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কম, অর্থাৎ হিমাঙ্কের নীচে হলেই এমন বরফ সৃষ্টি হতে পারে৷ কন্ডেনসেশন পয়েন্ট পেলেই পানি সঙ্গে সঙ্গে জমে গিয়ে প্লেটলেট আইস হয়ে ওঠে৷

গবেষকরা যে দড়ি ও পরিমাপের যন্ত্র পানিতে ডুবিয়েছেন, সেগুলির গায়েও প্লেটলেট আইস সৃষ্টি হয়েছে৷ প্লেটলেটগুলির মাঝে অনেক ফাঁকা অংশ রয়েছে৷ অর্থাৎ গোটা স্তর ছিদ্রে ভরা থাকে৷ ক্রিস্টিয়ান হাস বলেন, ‘‘সে কারণে শুধু ক্ষুদ্র জীব ও সামুদ্রিক উদ্ভিদ নয়, সেখানে জু প্ল্যাংকটন অর্থাৎ ক্রিলের মতো ক্ষুদ্র চিংড়ি জাতীয় প্রাণীও দেখা যায়৷ এমন অ্যাম্ফিপড জাতীয় প্রাণী অ্যালজির খোঁজে প্লেটলেট আইসের মধ্য দিয়ে চলে যাচ্ছে, এমনটাও আমরা লক্ষ্য করেছি৷ সেই আবরণ এমন প্রাণীগুলিকে পোলার কড মাছের মতো বড় প্রাণীর হামলা থেকেও রক্ষা করে৷’’

মেরু অঞ্চলের এমন ‘নতুন আবিষ্কার’ সম্পর্কে আরও ভালো করে গবেষণা চালাতে হবে৷

লেয়া আলব্রেশট/এসবি

২০১৮ সালের ডিসেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...