1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পানির লবণাক্ততা দূরীকরণ প্রকল্প

২৫ অক্টোবর ২০১০

ইংল্যান্ডে যে গ্রীষ্মকালে পানির অভাব হতে পারে, তা ভাবতে পারাটা সত্যিই কঠিন৷ কিন্তু ‘ইউরোপীয় পরিবেশ সংস্থা’ ইংল্যান্ডের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলকে মারাত্মক পানি সংকটপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে৷

https://p.dw.com/p/Pn7G
ব্রিটেনের প্রথম লবণাক্ততা দূরীকরণ প্রকল্প, ‘টেমস প্ল্যান্ট'ছবি: Robin Powell

ইংল্যান্ডের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে জার্মানির অধিকাংশ জায়গার বার্ষিক বৃষ্টিপাতের চেয়েও কম বৃষ্টি হয়৷ তাই রাজধানীতে পানির ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা চিন্তা করে, এ বছরের শুরুতে ইংল্যান্ডের প্রথম লবণাক্ততা দূরীকরণ প্রকল্প যাত্রা শুরু করে৷

পূর্ব লন্ডনের বেক্টন এলাকা৷ টেমস নদীর তীরে রোদমাখা একটি দিন৷ এর ঠিক উল্টোদিকে ধূসর কিছু বাড়ি৷ সেখানেই ট্যাংকে পানি সংগ্রহ করার ব্যবস্থা৷ লন্ডনবাসীদের পানি সরবরাহের সুযোগ সুবিধা দিতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে এখানে৷ জুন মাসে এখানেই ব্রিটেনের প্রথম লবণাক্ততা দূরীকরণ প্রকল্প গড়ে তুলেছে ‘টেমস ওয়াটার'৷ যে প্রকল্পটি খরা মৌসুমে দশ লাখ মানুষকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারছে৷ এই ধরণের প্রকল্প এই দেশে এই প্রথম৷ তেমনি এখানে যে চার স্তরের লবণাক্ততা দূরীকরণ প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হচ্ছে তাও বিশ্বের প্রথম৷

‘গ্লোবাল ওয়াটার ইনটেলিজেন্স' ম্যাগাজিনের ক্রিস্টোফার গ্যাসন এই প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘এক্ষেত্রে অতি সুক্ষ্ম ফিল্টার ব্যবহার করতে হয়, যাকে বলা হয় রিভার্স অসমোসিস মেমব্রেন৷ এটি এমন ছাঁকনি যা দিয়ে শুধু পানির অণুগুলো যেতে পারে, লবণের অণু নয়৷''

এক্ষেত্রে সরাসরি সমুদ্রের পানি ব্যবহার না করে জোয়ারের পানি ব্যবহার করা হচ্ছে৷ এই ফিল্টার দিয়ে বারবার ছাঁকার ফলে ‘টেমস প্ল্যান্ট' ৮৫ শতাংশ লবণাক্ত পানিকে বিশুদ্ধ পানীয় জলে পরিণত করতে পারছে৷ আর মধ্যপ্রাচ্যের মতো শুষ্ক অঞ্চলের দেশগুলো থেকে এই ধরণের প্রযুক্তি আনা হয়েছে৷ ক্রিস্টোফার গ্যাসন আরও বলেন, ‘‘বর্তমানে পৃথিবীতে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিদিন ৬ কোটি ৮০ লাখ ঘনমিটার পর্যন্ত পানির লবণাক্ততা দূর করা সম্ভব৷ আমরা আশা করছি, এই জল পরিশোধনাগারের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ করে ২০১৬ সাল নাগাদ প্রতিদিন ১৩ কোটি ঘনমিটার পর্যন্ত পানি লবণমুক্ত করতে পারবো৷''

লন্ডন শহরের অন্য দিকে আরো বেশি দক্ষতাসম্পন্ন প্রযুক্তির এতো উন্নতি হচ্ছে যে, সেসব প্রযুক্তিকে সারা বিশ্বে পানির সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে৷ ব্রিটিশ কোম্পানি ‘মডার্ন ওয়াটার' এখনই পানির লবণাক্ততা দূরীকরণের জন্য রিভার্স অসমোসিস প্রক্রিয়াকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে যাচ্ছে৷ মডার্ন ওয়াটারের নির্বাহী সভাপতি নিল ম্যাকডুগাল বলছেন, ‘‘সমুদ্রের পানিতে শুধু লবণ থাকেনা, অন্যান্য উপাদানও থাকে৷ এই প্রক্রিয়ায় আমরা বিভিন্ন ধরণের পদার্থ যোগ করে এগুলোকে পরিস্কার করছি৷''

এতক্ষণতো গেলো প্রযুক্তির কথা৷ কিন্তু তা থেকে মানুষ আসলেই কি পাবে? নিল ম্যাকডুগাল বলছেন, ‘‘পানিকে লবণমুক্ত করার প্রচলিত যেসব পদ্ধতি আছে সেগুলোর জন্য জ্বালানিতে খরচ হয় সবচেয়ে বেশি, যা মোট খরচের প্রায় ৫০ শতাংশ৷ নতুন এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করে আমরা জ্বালানি খরচ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারি৷ এই খরচটা আরও কমিয়ে আনার উপায় বের করার চেষ্টা করছি আমরা৷''

এখানেই শেষ নয়৷ আরও সম্ভাবনাময় পদ্ধতির ব্যবহারের কথাও ভাবা হচ্ছে৷ ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড'এর ফিল ডিকি বলছেন, ‘‘অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খাবার পানি অথবা শিল্পকারখানা এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের জন্য আরো পানির সহজতম উৎস হতে পারে পানির অপচয় কমিয়ে ফেলা৷ আর পানির অপচয় কমিয়ে আনতে যে খরচ হবে তা সমুদ্রের লবণাক্ত পানি পরিশোধন করে সুপেয় পানিতে পরিণত করার খরচের চেয়ে কম হবে৷''

কলকারখানার সংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়ে যাওয়ার কারণে পরিবেশবিদরা বলছেন, সারা বিশ্বে এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষ পানির অভাবে ক্লিষ্ট৷ তবে পানির লবণাক্ততা দূরীকরণের নতুন এই পদ্ধতি মানুষকে সুপেয় পানি সরবরাহের বিপুল সম্ভাবনার আশাই দেখাচ্ছে৷

প্রতিবেদন: জান্নাতুল ফেরদৌস

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক