1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পানি ছাড়াই মাছ চাষ!

২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মাছ ছাড়া বাঙালিদের পক্ষে বেঁচে থাকাই কঠিন৷ কিন্তু চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাছের জোগান নিয়ে সমস্যা দেখা দিচ্ছে৷ জার্মান গবেষকরা অ্যাকোয়াকালচারে টেকসই পদ্ধতিতে মাছ প্রতিপালনের মাধ্যমে নতুন দিশা দেখাচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/2kqR8
ছবি: picture-alliance/dpa/J.Büttner

গোটা বিশ্বে মানুষ প্রতি বছর প্রায় ১০ কোটি টন মাছ খায়৷ কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত মাছ ধরার ফলে সমুদ্রে মাছ কমে আসছে৷ এমনকি কিছু প্রজাতি লোপ পেতে বসেছে৷ উত্তর সাগরও এর ব্যতিক্রম নয়৷

কৃত্রিম ব্রিডিং বা প্রতিপালনের মাধ্যমে সেই ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা চলছে৷ তবে প্রতিপালনের কোন প্রক্রিয়া সবচেয়ে সফল হচ্ছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ জার্মানির উত্তরে এক গবেষণা কেন্দ্রে এ সংক্রান্ত সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছে৷

বিজ্ঞানীরা সেখানে মিষ্টি ও লবণাক্ত পানির মাছের প্রতিপালন ঘটাচ্ছেন৷ সেই জ্ঞানের ভিত্তিতে তাঁরা মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত শিল্পশাখাকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷ উল্লেখ্য, আজ খাদ্য হিসেবে সব মাছের প্রায় অর্ধেকই আসে অ্যাকোয়াকালচার থেকে৷ তাই এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় জ্ঞানের চাহিদাও বাড়ছে৷ কৃষিবিজ্ঞানী প্রো. কার্স্টেন শুলৎস বলেন, ‘‘গোটা বিশ্বে বেড়ে চলা জনসংখ্যার কারণে মাছের চাহিদাও বাড়বে বলে আমরা ধরে নিতে পারি৷ শুধু মাছ ধরে সেই চাহিদা মেটানো যাবে না৷ এর জন্য অ্যাকোয়াকালচারে উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে৷ এভাবে আমরা মাছের জোগানের গ্যারেন্টি দিতে পারি৷’’

গবেষকরা জানতে চান, কোন পরিবেশে মাছেরা সবচেয়ে ভালোভাবে বেড়ে ওঠে৷ পানির অবস্থাই বা কেমন থাকা উচিত এবং মাছেদের ঠিক কতটা জায়গার প্রয়োজন রয়েছে? বিজ্ঞানীরা মাছেদের ওজন ও আকার-আয়তন মাপেন৷ মনে রাখতে হবে, স্ট্রেস বা মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে মাছেদের বৃদ্ধি ও বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা কমে যায়৷

মাছেদের খাদ্যও অন্যতম জরুরি বিষয়৷ সেই খাদ্যের কতটা শিরা ও ধমনি পর্যন্ত পৌঁছয়? এখনো পর্যন্ত অনেক অ্যাকোয়াকালচারে খাদ্য হিসেবে মাছে ও মাছের তেল খাওয়ানো হয়৷ ফলে দেখা যায়, যত মাছ খাওয়ানো হচ্ছে শেষ পর্যন্ত প্রতিপালনের মাধ্যমে তত মাছ উৎপাদন হচ্ছে না৷ গবেষকরা এই সমস্যার সমাধান খুঁজছেন৷ প্রো. শুলৎস বলেন, ‘‘আমরা নতুন ধরনের খাদ্য ও সাপ্লিমেন্ট নিয়ে গবেষণা করছি৷ মূল্যবান ও সীমিত সম্পদ হিসেবে খাবারের মধ্যে মাছ ও মাছের তেলের অংশ কমানোর চেষ্টা করছি৷ এর বিকল্প সৃষ্টি ও কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছি৷’’

বিজ্ঞানীরা মাছের বদলে উদ্ভিদ পিষে তৈরি গোলা কাজে লাগাচ্ছেন৷ টার্বট মাছের তা পছন্দ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে৷ তবে মাছের বদলে উদ্ভিদ খাওয়ালে সেই খাদ্যকেও সমান পুষ্টিকর করে তোলা একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷

গবেষকরা রেপসিড ও সয়াবিন দিয়ে মাছের খাদ্য তৈরি করছেন৷ এই উদ্ভিদের মধ্যে যথেষ্ট প্রোটিন রয়েছে, যা মাছের বিকল্প হতে পারে৷ খাদ্য অথবা বায়োডিজেল উৎপাদনের সময় বর্জ্য হিসেবে এই উপকরণ পাওয়া যায়৷ সেটিকে নতুন করে এভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে৷

বিজ্ঞানীরা মাছের জন্য খাদ্যের মিশ্রণের উন্নতি ঘটিয়ে চলেছেন৷ কারণ একমাত্র সুস্থ মাছই ভালো আয়ের গ্যারেন্টি হতে পারে৷ প্রো. কার্স্টেন শুলৎস বলেন, ‘‘বিস্ময়কর ঘটনা হলো, নিরামিষ উপকরণ ব্যবহার করলে মাছের স্বাস্থ্য সাধারণত খারাপ হয় না৷ উদ্ভিদভিত্তিক প্রোটিনের কারণে মাছের মধ্যে কোনোরকম অস্বস্তি লক্ষ্য করা যায় না৷ এই খাবার খেলে মাছের ভালো বৃদ্ধি হয়, ভালো হজম হয়৷ স্বাদেও তারা কোনো তফাত পায় না৷ তাই আমরা কোনো বিবেকদংশন ছাড়াই এই মাছ ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে পারি৷’’

মাছের সুস্বাস্থ্যের জন্য পরিষ্কার পানিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ জীবাণুর হাত ধরে জলাধারে দ্রুত রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ গবেষকরা তাই নিয়মিত পানির তাপমাত্রা ও উপাদান পরীক্ষা করেন৷

অ্যাকোয়েরিয়ামে টেকসই মাছ প্রতিপালন সফল হচ্ছে৷ এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, বড় শহর থেকে শুরু করে শুষ্ক এলাকায়ও এভাবে মাছ চাষ করা সম্ভব৷