1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাসপোর্ট মানেই যে হয়রানি!

শীর্ষ বন্দোপাধ্যায়, কলকাতা২ জুন ২০১৩

সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা কে আর ভেবেছে৷ কিন্তু ভারতে নতুন পাসপোর্ট নেওয়ার দুর্ভোগে নতুন মাত্রা যোগ করেছে অনলাইন পরিষেবা৷

https://p.dw.com/p/18iFk
#26528675 - Passport and Berlin Map © chrisdorney
Symbolbild Schengener Abkommen Visum Europa Reisefreiheitছবি: Fotolia/chrisdorney

একটা সময় ছিল, যখন মোটরগাড়ির মতো পাসপোর্ট থাকাও ছিল বিত্তবানদের বিলাসিতা মাত্র৷ স্বাভাবিকভাবেই, পাসপোর্টের যেখানে প্রয়োজন, অর্থাৎ বিদেশযাত্রার সময়, তার সঙ্গতি কেবলমাত্র বিত্তবানেদেরই ছিল৷ পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করল দুটো কারণে৷ এক, পঞ্চাশের দশকের শুরু থেকে বিদেশে দক্ষ কারগরি কর্মীদের যাওয়ার যে সুযোগ তৈরি হয়েছিল, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে সেই সুযোগ এসে গেল অদক্ষ শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও৷ জীবিকার তাগিদে বহু সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষও বিদেশে পা বাড়াল৷ এর পরের বড় পরিবর্তন ঘটল বিদেশে বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ মধ্যবিত্তের আয়ত্বে এসে যাওয়ায়৷ বিমানভাড়া সস্তা হলো, বিদেশের হোটেলভাড়াও বাজারবুঝে নাগালে নেমে এল এবং পুরী বা দীঘার বদলে বাঙালি সপরিবারে যেতে শুরু করল সিঙ্গাপুর বা ব্যাংকক৷

Yellow Kolkata taxis and commuters outside Howrah Railway Station in morning rush hour, Howrah, Kolkata (Calcutta), West Bengal, India, Asia Keine Weitergabe an Drittverwerter.
এই ভিড় থেকে কয়েকদিন দূরে থাকতে অনেকই যাচ্ছেন সিংগাপুর, ব্যাংকক (ফাইল ফরো)ছবি: picture-alliance/Annie Owen/Robert Harding World Imagery

সুতরাং পাসপোর্টের প্রয়োজন বাড়তে শুরু করল৷ এই চাহিদার শুরুতেই কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রক বুঝতে পেরেছিল, এতদিন যে কায়দায় নতুন পাসপোর্ট তৈরি ও পুরনো পাসপোর্ট নবীকরণ এবং বণ্টন করা হয়েছে আবেদনকারীদের মধ্যে, তার মধ্যে দীর্ঘসূত্রিতার একটা ঐতিহ্য রয়েছে, যা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা দরকার৷ তখন কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রকের দায়িত্বে রয়েছেন অজিত পাঁজা৷ তিনি নিয়ম চালু করলেন, কোনও তদ্বির-তদারকের দরকার পড়বে না, আবেদন করার এক মাসের মধ্যে পাসপোর্ট পৌঁছে যাবে আবেদনকারীর ঠিকানায়৷ সেই প্রথম পাসপোর্ট পরিষেবায় একটা গতির সঞ্চার হল৷ এর পর চালু হল অনলাইন পরিষেবা৷ প্রথমে ইন্টারনেট থেকে পাসপোর্টের আবেদনপত্র-সহ নানাবিধ ফর্ম ডাউনলোড করার সুবিধে চালু হল৷ তার পর সরাসরি অনলাইনে ফর্ম ফিল আপ করে, সেই ফর্ম অনলাইনেই জমা করে দেওয়ার সুযোগ পেলেন আবেদনকারীরা৷

কিন্তু ভূত লুকিয়ে থাকল সর্ষের মধ্যেই৷ প্রথম যখন অনলাইনে ফর্ম ডাউনলোড করার ব্যবস্থা চালু হল, তখন ফর্ম জমা দিতে হতো পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে৷ সেখানে যথারীতি লম্বা লাইন প্রতিদিন এবং চিরাচরিত নিয়মে দালালদের রমরমা৷ ফলে অনলাইনের সুবাদে যেটুকু সুবিধে পাওয়া যাচ্ছিল, সেটা অন্তর্হিত হচ্ছিল পাসপোর্ট অফিসে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই৷ ফলে পরবর্তী পর্যায়ে চালু হল অনলাইনে ফর্ম জমা দেওয়ার ব্যবস্থা এবং সেই সঙ্গে সম্পর্কিত নথিপত্র জমা দেওয়ার জন্য অনলাইনেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার সুযোগ, যা এখনও চালু রয়েছে৷ সেইসঙ্গে গোটা প্রক্রিয়াটি যাতে আরও গতি পায়, সেজন্য নথিপত্র জমা নেওয়ার জন্য মূল পাসপোর্ট দপ্তর ছাড়াও প্রতি রাজ্যে চালু হল পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র৷

খাতায় কলমে এই ব্যবস্থা ঠিকই ছিল৷ যদিও গ্রাহক অধিকার সুরক্ষা সংগঠনগুলির তরফ থেকে দাবি করা হয়েছিল, যে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার এক সামান্য অংশ, সেখানে অনলাইন পরিষেবা ১০ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি লোকের জন্য থাকা উচিত নয়৷ কিন্তু শেষপর্যন্ত এমন কোনও সংরক্ষণ পদ্ধতি যেহেতু চালু হলো না, নিজেরা গিয়ে ভোর থেকে পাসপোর্ট অফিসে লাইন না দেওয়ার একমাত্র বিকল্প হয়ে দাঁড়াল অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট৷ কিন্তু কী অদ্ভুত ব্যাপার, প্রায় কোনও আবেদনকারীই নিজের চেষ্টায় অনলাইনে এই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারছেন না এবং শেষমেশ গিয়ে পড়ছেন সেই দালালদেরই হাতে৷

শুনতে অবাক লাগলেও এটাই ঘটনা যে একজন আবেদনকারী নিজের বাড়ির কম্পিউটার থেকে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার বহু চেষ্টা করেও বিফল হচ্ছেন, অথচ সেই একই কাজ কোনও দালালকে বাড়তি পয়সা দিয়ে সহজেই করিয়ে নেওয়া যাচ্ছে৷ যদিও শহরের এক ট্রাভেল এজেন্টের বক্তব্য, তাদের ক্ষেত্রেও পাসপোর্টের এই অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া আদৌ সম্ভব নয়, যেহেতু পুরো ব্যাপারটাই নিয়ন্ত্রিত হয় রাজধানী দিল্লিতে বসে থাকা এজেন্টদের মাধ্যমে৷ দিল্লির ওই এজেন্টরা অত্যন্ত উচ্চ গতিসম্পন্ন ব্রডব্যান্ড সংযোগের সাহায্যে দেশের যে কোনও অঞ্চলের পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রের অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট চোখের পলকে হাসিল করে নিচ্ছে৷ ফলে কলকাতা বা অন্য যে কোনও জায়গার এজেন্টদের ওই দিল্লির এজেন্টদেরই দ্বারস্থ হতে হচ্ছে৷ ফলে খরচাটাও বেড়ে যাচ্ছে৷

Biometric Passport © vanhurck #36211115 Copyright: vanhurck - Fotolia.com
একজন আবেদনকারী নিজের বাড়ির কম্পিউটার থেকে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার বহু চেষ্টা করেও বিফল হচ্ছেন, অথচ সেই একই কাজ কোনও দালালকে বাড়তি পয়সা দিয়ে সহজেই করিয়ে নেওয়া যাচ্ছেছবি: vanhurck/Fotolia.com

উল্লেখ্য, পাসপোর্টের আবেদনপত্র, সংক্রান্ত নথিপত্র জমা দেওয়া এবং হাতের আঙুলের ছাপ ও চোখের মনির ছবি নেওয়ার জন্য যেসব আঞ্চলিক পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র খোলা হয়েছে, তাদের এক একটির অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার সময় এক এক রকম৷ কিন্তু শহরের ট্রাভেল এজেন্টদের বক্তব্য, তাতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না, যেহেতু কলকাতার কসবাই হোক বা বহরমপুরের পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র, তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট বেহাত হয়ে যাচ্ছে অনেক আগে থেকেই, এবং সেটাও হচ্ছে দিল্লি থেকে৷ ফলে সাধারণ মানুষ সরল বিশ্বাসে অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার চেষ্টা করে খামোকা পণ্ডশ্রমই করছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য