1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাহাড়ে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৬ জুন ২০১৭

চার পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধসে নিহত হয়েছে ১৫১ জন৷ যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁরাও চরম সংকটে৷ খাদ্য, চিকিৎসা, আশ্রয়, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট এবং বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সেখানে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷

https://p.dw.com/p/2eomR
Bangladesch Viele Tote nach Monsunregen
ছবি: Getty Images/AFP/STR

রাঙামাটি এবং বান্দরবানে ২৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৫ হাজার নারী, পুরুষ ও শিশু আশ্রয় নিয়েছে৷ কিন্তু এসব আশ্রয় কেন্দ্রে বিদ্যুৎ ও পানি সরকরাহ না থাকায় এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে খাবার সরবরাহ করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়৷আর যাঁরা আশ্রয় কেন্দ্রে যাননি, তাঁদের কাছে ত্রাণ পৌছাচ্ছে না৷ কোথাও কোথাও প্রয়োজন বিবেচনা না করে খাবারের পরিবর্তে শুধু খাবার স্যালাইন পাঠানোর অভিযোগও পাওয়া গেছে৷

রাঙামাটি টিভি স্টেশন কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মামুন নামের একজন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘‘আমাদের কাছে কোনও খাবার পৌঁছায়নি৷ এমনকি পানি পর্যন্ত পাইনি৷ টিভিস্টেশন কেন্দ্রে একজন এসে কিছু খাবার স্যালাইন ও ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে গেছেন৷''

Manzarul Mannan, DC - MP3-Stereo

বিএডিসি ভবন কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া আনোয়ার নামের একজন বলেন, ‘‘শুকনা খাবার চিড়া-মুড়ি দিয়ে গেছে৷ এগুলো পেয়েছি৷ তবে এখনও (শুক্রবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত) দুপুরের খাবার পাইনি৷ এলাকাবাসীর উদ্যোগে আমাদের জন্য ইফতার ও রাতের খাবারের ব্যবস্থা হচ্ছে৷''

পাহাড় ধসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রাঙামটি এলাকায়৷ সেখানে পাঁচ সেনা সদস্যসহ ১১০ হন নিহত হয়েছেন৷ চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি শহর পর্যন্ত ১৩ কি.মি সড়ক ব্যাপকভাবে  ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ আর রাঙামাটি থেকে প্রত্যন্ত এলকার সড়ক যোগাযোগ ধস ও টানা বৃষ্টির কারণে ব্যবহারের অযোগ্য এবং ঝুকিপূর্ন হয়ে পড়েছে৷

সরবরাহ না থাকায় রাঙামাটিতে জ্বালনি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে৷ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যে জ্বালানিতেল ছিল, তা পেট্রোল পাম্প মালিকরা রেশনিং করে প্রায় দ্বিগুন দামে বিক্রি করেছেন৷ এরপর পাম্পগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়৷ কেরোসিন তেলের সংকট পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলেছে৷ আর এলপি গ্যাসের সংকট ও চড়া দামের কারণে রান্নাও করা যাচ্ছে না৷ বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোনের চার্জও দেয়া যাচ্ছে না৷ ফলে ওইসব এলাকার মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন৷ বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে৷ নতুন করে আতংক ছড়িয়ে পড়ছে৷ এমন পরিস্থতিতেও পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের সবাইকে সরিয়ে নেয়া হয়নি এখনো৷

ওইসব এলাকায় চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য এবং শাকশব্জির দামও বেড়ে গেছে৷ নান ধরণের গুজব আর আতঙ্কের মধ্যে আছেন সেখানকার মানুষ৷ 

পাহাড় ধসে আহতদের দ্রুত জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৪৮৩টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে৷ এসব টিমের সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ৷আর ত্রাণ ও  দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয় জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৫০০ মেট্রিক টন চাল, ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷চার জেলায় মোট ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে৷ নিহতদের প্রতি পরিবারকে ২০ হাজার এবং আহতদের ১০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷ আর জেলা প্রশাসকদের কাছে আগে থেকেই পর্যাপ্ত ত্রান আছে, যা তারা প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন বলে মন্ত্রনালয় জানায়৷

Ziaul Haq Zia - MP3-Stereo

এছাড়া যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আরো ৫০ লাখ টাকা এবং ৫০০ বান্ডিল টিন বরাদ্দের কথা জানিয়েছেন৷ 

রাঙামটির সাংবাদিক জিয়াউল হক জিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ৷ আশ্রয়কেন্দ্রে একদিনের মধ্যে মানুষ দ্বিগুন হয়ে গেছে৷ জেলা প্রশাসক বলছেন, ত্রান নিয়ে লাভ নাই৷ কারণ, তারা কিভাবে রান্না করে খাবে? সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গছে৷ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের সংকট আছে৷''

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছি৷ আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে দুই বেলা রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে৷ এরপর আমরা পুনর্বাসনের কাজ শুরু করব৷ আমরা চিকিৎসা সেবাকেও গুরুত্ব দিচ্ছি৷''

তিনি জানান, ‘‘কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্য মজুদ করে নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের দাম বাড়িয়েছিল৷ তারা এই দুর্যোগেও মুনাফা করার লোভ ছাড়তে পারেনি৷ তবে আমরা এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি৷ কাপ্তাই থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু করে খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি৷''