1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পীরজাদার দলের সঙ্গে জোট নিয়ে প্রশ্ন কংগ্রেসেই

৩ মার্চ ২০২১

ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে ভোটে হাত মেলানো নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল কংগ্রেসের অন্দরেই। শুরু তীব্র বিতর্ক।

https://p.dw.com/p/3q8N8
ব্রিগেডের জনসভায় বাম, কংগ্রেসের পাশাপাশি দেখা গেছে আব্বাল সিদ্দিকিকেও। ছবি: Debajyoti Chakraborty/NurPhoto/picture alliance

পশ্চিমবঙ্গে এখন বামেদের নেতৃত্বে জোট হয়েছে। সিপিএম সহ বাম দলগুলি, কংগ্রেস এবং আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ-এর এই জোটের নাম রাখা হয়েছে সংযুক্ত মোর্চা। আগের বারও কংগ্রেস ও সিপিএমের মধ্যে আসন সমঝোতা হয়েছিল। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে জোট বেঁধে লড়াই এই প্রথম। কিন্তু কংগ্রেসের মধ্যেই এই জোট নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেছে। তুলেছেন সাবেক মন্ত্রী, রাজ্যসভার উপনেতা আনন্দ শর্মা।

তার অভিযোগ, আব্বাস সিদ্দিকির দলের সঙ্গে যে জোট হয়েছে, তা নেহরু-গান্ধীর ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের সঙ্গে খাপ খায় না। কারণ, আব্বাস সিদ্দিকি কট্টরপন্থি। ফলে তার সঙ্গে হাত মিলিয়ে কংগ্রেস ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে বিসর্জন দিয়েছে। গুলাম নবি আজাদের নেতৃত্বে কংগ্রেসের অন্দরে কিছু নেতা একজোট হয়ে মূলত রাহুল গান্ধীর বিরোধিতায় নেমেছেন। আনন্দ শর্মা সেই গোষ্ঠীর সদস্য। ছুতোয়-নাতায় তারা এখন দলের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। পশ্চিমবঙ্গের জোট নিয়েও করছেন।

কংগ্রেসের এই নেতার মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা ও পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। আর প্রিয়ঙ্কা গান্ধীও এই বিতর্কে অধীরকে সমর্থন করেছেন।  তবে কংগ্রেসের কিছু নেতার মতে, আনন্দ শর্মা যে প্রশ্নটি তুলেছেন, তা একেবারে উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়। কিন্তু এখন এই প্রশ্ন তোলার অর্থ দলকে অস্বস্তিতে ফেলা ও ক্ষতি করা। কারণ, কংগ্রেস তো অনেক আগেই কেরালায় মুসলিম লিগের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। তখন তো আনন্দ শর্মারা কিছু বলেননি।

অধীর চৌধুরী বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে জোট হয়েছে বামেদের নেতৃত্বে। সেখানে কংগ্রেস যে আসন চেয়েছিল তা পেয়েছে। বামেরা এখন তাদের ভাগের কিছু আসন আইএসএফকে দিচ্ছে। এখন কেউ যদি সিপিএমের সিদ্ধান্তকে সাম্প্রদায়িক বলে, তা হলে তিনি বিজেপি-র এজেন্ডাকে সাহায্য করছেন। যারা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়তে চান, তারা দলের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করবেন। অধীরের সোজাসাপটা কথা, যে বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সুরে কথা বলছেন, তারা দয়া করে দলের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করুন। দল তাদের অনেক কিছু দিয়েছে। লোকসভায় কংগ্রেসের নেতার মতে, জি২৩(এই গোষ্ঠীতে ২৩ জন নেতা আছেন বলে) দয়া করে দলকে শক্তিশালী করুন।

প্রিয়ঙ্কা গান্ধীও জানিয়ে দিয়েছেন, এই বিতর্ক নিয়ে যা বলার অধীর চৌধুরী বলে দিয়েছেন। তিনি অধীরের বক্তব্যকে সমর্থন করেন।  তার মতে, কোনো জায়গায় জোট শরিকের সঙ্গে সব বিষয়ে একশ শতাংশ মতৈক্য হয় না। সাধারণ কিছু ভাবনার উপর ভিত্তি করেই জোট হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের এক প্রধান নেতা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, আনন্দ শর্মারা কি রাজ্যের অবস্থা জানেন না? কংগ্রেস যদি আইএসএফের সঙ্গে হাত না মেলায় তা হলে আব্বাস সিদ্দিকি মুর্শিদাবাদ ও মালদহে কংগ্রেসের ভোট কাটবেন। সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের জয়ের আশা কমবে। কংগ্রেসের কাছে এই দুই জেলাই সব চেয়ে বড় আশা ও ভরসার জায়গা। দুইটি জেলায় মুসলিম ভোটের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই দলের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই সিদ্দিকির আইএসএফের সঙ্গে হাত মেলানো হয়েছে। ভোটে সিদ্দিকিও উচ্চগ্রামে প্রচার করবেন না বলে তার দাবি।

আনন্দ শর্মার মতো কথা বিজেপি নেতারাও বলতে শুরু করে দিয়েছেন। এটা স্বাভাবিক যে, হিন্দু ভোট একত্রিত করতে আনন্দ শর্মার কথাকে বিজেপি হাতিয়ার করবে। পরে মোদী বা শাহ জনসভায় আনন্দ শর্মার কথা টেনে আনেন তা হলেও আশ্চর্যের কিছু নেই।

তবে আইএপএফ নিয়ে অধীরের বিড়ম্বনা এখনো কাটেনি। আব্বাস সিদ্দিকি চাইছেন, মুর্শিদাবাদ ও মালদহে অন্তত সাতটি আসন ছাড়ুক কংগ্রেস। কিন্তু তাতে রাজি নন অধীর। তার দাবি, যা আসন ছাড়ার তা বামেরা ছাড়ুক। কংগ্রেস তাদের ভাগের ৯২ আসনে লড়বে। কিন্তু সিপিএম নেতারা বলছেন, তারা আইএসএফকে নিজেদের ভাগের ৩০টি আসন ছেড়েছেন। এখন কংগ্রেস সাতটি আসন ছাড়ুক। কংগ্রেসের দাবি, সেক্ষেত্রে সিপিএম অন্য জেলায় সাতটি বাড়তি আসন দিক। তাতে সিপিএম রাজি নয়। এই বিরোধ এখনো মেটেনি। তবে সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেছেন, আলোচনা ভালোভাবে এগোচ্ছে।

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)