1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিয়ার সংস্কৃতি

২১ জুন ২০১৩

জার্মানি বিয়ারের দেশ বলেও পরিচিত৷ কিন্তু এই পানীয়র ভাবমূর্তি পুরুষদের সঙ্গেই জড়িত৷ দুই বোন সেই দূর্গে ফাটল ধরিয়েছেন৷ ফলে নারীরাও ‘বিয়ার সংস্কৃতি'তে অংশ নিতে পারছে৷

https://p.dw.com/p/18uFg
ছবি: picture-alliance/dpa

বিয়ার কি শুধুই পুরুষদেরই পানীয়? বিয়ারের কথা শুনলে মোটাসোটা পুরুষদের চেহারাটাই ভেসে আসে মনে৷ যারা পানশালায় বসে একের পর এক বিয়ারের গেলাস খালি করে ফেলছেন৷

নারী ও বিয়ার, বিষয়টি যেন মোটেও খাপ খায় না৷ অন্তত এই বদ্ধমূল ধারণাটাই গেড়ে আছে মানুষের মাথায়৷ মেয়েদের সাথে বিয়ারও যে খুব মানিয়ে যায়, তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত জার্মানির ডেটমল্ড শহরের বিয়ার প্রস্ততকারক ফ্রিডেরিকে শ্ট্রাটে৷ বোন সিলভিয়ার সাথে একটি সফল ব্রুয়ারি চালাচ্ছেন তিনি৷ ফ্রিডেরিকে বলেন, ‘‘আমি নিজে বিষয়টি নিয়ে কোনো দিন মাথা ঘামাইনি৷ আমি মেয়ে হয়ে জন্মেছি৷ আর বিয়ার প্রস্তুত করা, এটা আমার জন্য বিশাল এক ব্যাপার, দারুণ এক কাজ৷ আমি আমাদের ব্রুয়ারি আর বিয়ার পছন্দ করি৷ এখানেই তো আমি বড় হয়েছি৷''

ফ্রিডেরিকে শ্ট্রাটের পরিবার বংশপরম্পরায় বিয়ার প্রস্তুত করছে৷ পঞ্চম প্রজন্মে এসেও এই ধারা বজায় রেখেছেন ফ্রিডেরিকে৷ ঐতিহ্যবাহী ও ছোট পরিসরের ব্যবসা৷ ৩০ জনের মত কর্মী – বিজ্ঞাপন নেই৷ বিশেষ করে এই এলাকার লোকজনই আসেন তাঁর কাছে৷ পুরানো আমলের বিশাল এক তামার কেটলি থেকে ঢালা হয় বিয়ার৷ তবে কিছুদিন থেকে সারা জার্মানির বিয়ারপ্রেমীরাই তাঁর কাছে বিয়ারের অর্ডার দিচ্ছেন৷ ৬,০০০ সদস্য নিয়ে গড়ে উঠেছে বিয়ার চেখে দেখার এক ক্লাব৷ এই ক্লাব ফ্রিডেরিকের ‘টুসনেল্ডা' বিয়ারকে বছরের সেরা বিয়ার হিসাবে নির্বাচিত করেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এমন মর্যাদা আমাদের মতো একটি মাঝারি প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ টেলিভিশনে বিয়ারের এত ছড়াছড়ি, এত ধরনের বিজ্ঞাপন৷ এই প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকা মোটেও সহজ নয়৷ বাজারের এই চাপ তো ক্রমেই বড় হচ্ছে৷

ব্যক্তিগত রুচিমাফিক বিয়ার, মেয়েদের হাতে বানানো – বহু পুরোনো এক ঐতিহ্যকে ধরে আছেন ফ্রিডেরিকে শ্ট্রাটে৷ কেননা মধ্যযুগে বিয়ার ছিল শুধু মেয়েদেরই হাতে৷ শিল্পায়নের সাথে সাথে বিয়ার সর্বসাধারণের পানীয়তে পরিণত হয়৷ আর পুরুষরা এটা দখল করে ফেলেন৷

আজ আবার হাতে তৈরি নিজস্ব রুচি মাফিক বিয়ারের চাহিদা বাড়ছে৷ আর ঠিক এই রকম মনের মাধুরী মেশানো বিয়ারই এসটার ইসাকের দোকান ‘বিয়ারলান্ড'-এ পাওয়া যায়৷ বিশ্বের নানা দেশ থেকে আনা ৩০০ ধরনের বিয়ার৷ আট বছর আগে দোভাষীর কাজটায় ইস্তফা দেন এসটার আর বিয়ার-প্রীতিকে পেশায় পরিণত করেন৷ এখন তো তাঁকে ‘বিয়ারের রানি' বলা হয়৷ কারণ তিনি জানেন, কার কোন বিয়ার ভাল লাগবে৷ এসটার বলেন, ‘‘মেয়েরা উপভোগ করেন বলেই এখানে বিয়ার কিনতে আসেন৷ আর পুরুষরা বিয়ার কিনতে আসেন নিছক তেষ্টা মেটাতে৷''

আর তাই ‘বার্লিস এঞ্জেলস' আসরটিতে পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ৷ মেয়েদের নিয়েই গড়ে উঠেছে এই বিয়ার-শিল্পের আসরটি, যেখানে শুধু মেয়েরাই আসেন, বিয়ার পান করেন, গল্পগুজব করেন৷ বিশ্বব্যাপী এই প্রতিষ্ঠানটির ৫,০০০ সদস্য রয়েছেন৷ এসটার ইসাক মাস ছয়েক আগে এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম জার্মান শাখাটি খোলেন৷

‘‘বার্লিস এঞ্জেলস' – বিয়ারের এই আড্ডাটি দুবছর ধরে জমে উঠেছে৷ এই আসরে দিনে দিনে আগ্রহী মেয়েদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে৷ যারা বিয়ারের বিষয়ে পাণ্ডিত্যটা শুধু পুরুষদের ওপরই ছেড়ে দিতে চান না৷ এসটার বলেন, ‘‘আমরা পুরুষদের বিরুদ্ধে কিছু করছি না৷ আমরা শুধু পুরুষদের বলতে চাই – শুনুন, এই যে আমরা এখানে মেয়েরা৷ তোমাদের বিয়ারও খেতে ভাল লাগবে, যদি তোমরা মেয়েদের একটু জিজ্ঞাসা করতে৷ তাদের মতামতটা জানতে চাইতে৷ কারণ সম্ভাব্য ভোক্তাদের ৫০ শতাংশই হলাম আমরা, মেয়েরা৷ কিন্তু আমাদের নিয়ে তো দেখছি কারো তেমন মাথা ব্যথা নেই৷''

ঠিক এটাই বদলাতে চান মেয়েরা৷ ভাল স্বাদের বিয়ারের জন্য পথ দেখিয়ে দিতে চান তারাই৷

আরবি / এসবি