1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুরোহিত-ভাতা চালু করে সমালোচিত মমতা

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

ইমাম ভাতা চালু করেছিলেন আগেই। এ বার চালু করলেন পুরোহিত ভাতা। তারপরেই বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়।

https://p.dw.com/p/3iXlx
ছবি: Getty Images/AFP/D. Dutta

ভোট এলেই ক্ষমতাসীন দল বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে খুশি করতে দানছত্র খুলে বসে। দুই হাতে তারা সুযোগ-সুবিধা বিলি করতে থাকে। অবশ্যই ভোটপ্রাপ্তির উদ্দেশ্যে। পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেটাই করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দিন কয়েক আগে তিনি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন। এক, রাজ্যে আট হাজার পুরোহিতকে প্রতিমাসে এক হাজার টাকা করে ভাতা দেয়া হবে। এর আগে তিনি ইমাম-ভাতা চালু করেছিলেন। এ বার পুরোহিত-ভাতা চালু করলেন। দুই, দলিত সহিত্য একাডেমী গঠন করা। তিন, মতুয়া উন্নয়ন পর্ষদ পুনর্গঠন করা।

এই সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সব চেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে তাঁর প্রথম সিদ্ধান্ত অর্থাৎ, পুরোহিতদের মাসে এক হাজার টাকা ভাতা দেয়া নিয়ে। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি হলো, ''ইমাম-মোয়াজ্জেমরা সামাজিক কাজ করেন। তাই সরকারের থেকে ভাতা পান। হিন্দুদের মধ্যে এমন কিছু নেই। সনাতন ধর্মে ব্রাক্ষ্মণরা পুজো করেন, তাঁদের অনেকের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। তাঁরা আমাদের কাছে আবেদন করেছিলেন। এমন আট হাজার আবেদন পেয়েছি।''

অর্থাৎ, ভোটের আগে গরিব ব্রাক্ষ্মণ পুরোহিতদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকার জানিয়েছে, তাঁদের বাড়িও বানিয়ে দেয়া হবে। কোলাঘাটে সনাতন হিন্দু তীর্থস্থানের জন্য এক টাকায় জমি দেয়া হয়েছে।

বিরোধীদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী পুরোহিতদের দিকে যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং যে ঘোষণা করেছেন, তা ধর্মের ভিত্তিতে। ২০১৬-র নির্বাচনের আগে যখন তিনি ইমাম-মোয়াজ্জেমদের ভাতা দেয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন, তখনও সমালোচনা হয়েছিল যে ধর্মের ভিত্তিতে কেন সুবিধা দেয়া হবে? এ বারও সেই একই সমালোচনার মুখে পড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি সকলেই তাঁর এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে। অভিযোগ উঠেছে রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে মেশানোর।

রাজ্যের বিরোধী নেতা আব্দুল মান্নান ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''রাজ্যের দায়িত্ব হলো বেকারদের চাকরি দেয়া, দারিদ্র্য দূর করা, উন্নয়নের কাজ করা। তা হলে ধর্ম, জাত, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই তার সুফল পাবেন। কিন্তু মমতা সেই কাজ না করে এখন বিজেপি-র পথে হাঁটছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক। এরপর তো বৌদ্ধ, জৈন সহ সব ধর্মের থেকেই এই দাবি উঠবে। এই ভাবে ভাতা দেয়া সরকারের কাজ নয়।''

সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হান্নান মোল্লা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''একটি অ-বিজেপি দল আরএসএস ও বিজেপি-র সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামছে, কে কতটা সাম্প্রদায়িক, তা নিয়ে। মমতা আগে ইমামদের ভাতার কথা বলে মুসলিম ভোট পওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এই নির্বাচনের আগে তিনি পুরোহিতদের ভাতার কথা বলে হিন্দু ভোটকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন।'' তাঁর মতে, ''আরএসএস ও বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার কথা প্রচার করার চেষ্টা করছে। সেই জায়গায় মমতার উচিত ছিল ধর্মনিরপেক্ষ সকলকে একজোট করা। কিন্তু তিনি উল্টে সাম্প্রদায়িক পথ নিচ্ছেন।''

বিজেপি-র প্রশ্ন হলো, এত বছর মুখ্যমন্ত্রী কী করছিলেন? যুব বিজেপি-র সর্বভারতীয় সম্পাদক সৌরভ শিকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''এটা নির্বাচনের আগের গিমিক মাত্র। আমি আজকের একটা ঘটনা বলি। আজ গরিব পরিবারের লোকেরা তর্পণ করতে এসেছিলেন। গতবার আমাদের সভাপতি জে পি নাড্ডা যেখানে তর্পণ করেন, আমরা সেখানেই আয়োজন করেছিলাম। পুলিশ আমাদের করা মঞ্চ ভেঙে দেয়। আমরা বলি, শুধু গরিবরা তর্পণ করবেন। কিন্তু পুলিশ মঞ্চ ভেঙে দেয়। তাঁরা অন্য ঘাটে গিয়ে তর্পণ করেছেন। পুরোহিতদের ভাতা দিয়ে হিন্দুবিরোধী নীতি ঢাকতে পারবেন না মুখ্যমন্ত্রী।''

বিরোধী সবকটি রাজনৈতিক দলেরই অভিযোগ, তৃণমূল নেত্রী ধর্মের নামে ভোট পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এমনকী যে বিজেপি-র বিরুদ্ধে হামেশা এই অভিযোগ ওঠে, তারাও একই কথা বলছে। এই দলগুলি মনে করে, ব্যর্থতা ঢাকতে মুখ্যমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''হঠাৎ ভোটের মুখে কেন পুরোহিত ভাতার কথা মনে পড়ল? এটা সরকারের ব্যর্থতা ও হতাশার চেহারা। যেখান থেকে যেভাবে হোক কিছু ভোট ম্যানেজ করার চেষ্টা। ইমাম ভাতা দিয়ে মুসিলম, পুরোহিত ভাতা দিয়ে হিন্দুদের খুশি করার চেষ্টা। মানুষকে উনি ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করে দিয়ে ধর্মকে নিজ রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছেন।'' সুজন চক্রবর্তীর মতে, ''ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়কে ব্যবহার করে বন্দোবস্ত করাটা আমাদের দেশের রাজনৈতিক শিষ্ঠাচারের সঙ্গে, সংবিধানের সঙ্গে যায় না।'' 

এর পাশাপাশি মমতা জানিয়েছেন, দলিত সাহিত্য একাডেমী গঠন করা হবে। সেখানে নমঃশূদ্র, মতুয়া, বাগদি, বাউরি, কোল, মাঝি সহ সকলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। দলিতদের সাহিত্য ও তাঁদের যন্ত্রণার কথা একাডেমী তুলে ধরবে। সূত্র জানাচ্ছে, এর পিছনে প্রশান্ত কিশোর বা পিকে-র অবদান আছে। তিনি তৃণমূলের প্রচারের দায়িত্ব নিয়ে দেখেছিলেন, দলিতদের মধ্যে বিজেপি-র প্রভাব বাড়ছে। সেই জায়গায় তৃণমূলের আধিপত্য ফিরিয়ে আনর জন্য চেষ্টা করার কথা বলেছিলেন তিনি। একই দিনে তাই ব্রাক্ষ্মণ পুরোহিত, দলিত ও মতুয়াদের খুশি করতে চেয়ে তিনটি সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন মমতা।

ইতিমধ্যেই এক সাহিত্যিক তির্যকভাবে ফেসবুকে ব্রাক্ষ্মণ সাহিত্য একাডেমী গঠন করার দাবি তুলেছেন। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, জাতপাতভিত্তিক এই ধরনের প্রয়াস আগে হলেও খুব সূক্ষ্ণভাবে হয়েছে। এটা ভালো না খারাপ সেটা অন্য প্রসঙ্গ। দলিতদের ক্ষমতায়ণ অবশ্যই স্বাগতযোগ্য। কিন্তু ভোটের জন্য জাতপাতের ব্যবহার মানা যায় না। ফলে সেই সমালোচনাও শুনতে হচ্ছে তৃণমূল নেত্রীকে।