1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্ত্রীকে র‌্যাব কর্মকর্তার লাগাতার হুমকি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৫ জুন ২০২০

স্ত্রী নির্যাতন ও গর্ভপাত চেষ্টা মামলার আসামি র‌্যাবের এএসপি নাজমুস সাকিবকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ খুঁজে পাচ্ছেনা৷ কিন্তু তিনি টেলিফোনে তার স্ত্রী ইশরাত রহমানকে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/3eK2H
প্রতীকী ছবিছবি: picture-alliance/dpa/Keystone USA Falkenberg

এমনকি ওই র‌্যাব কর্মকর্তার সঙ্গে ডয়চে ভেলে প্রতিবেদকেরও বৃহস্পতিবার দুপুরে টেলিফোনে কথা হয়৷ তিনি এখনো র‌্যাবের মোবাইল ফোনটিই ব্যবহার করছেন৷ গ্রেপ্তার তো পরের কথা তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি৷ র‌্যাব সদর দফতরের কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড এসআইএস উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এসপি নাজমুস সাকিবকে অফিসে অনুপস্থিত দেখানো হলেও তিনি অফিসেও মাঝে মধ্যে যান বলে অভিযোগ করেছেন নির্যাতনের শিকার ইশরাত রহমানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান৷

স্ত্রীর অভিযোগ
নাজমুস সাকিবের বাবার বাসা কদমতলী এলাকায় হলেও অফিস দূরে হওয়া তিনি তার স্ত্রী ইশরাত রহমানকে নিয়ে রমনা এলকায় পুলিশ অফিসার্স মেসে থাকতেন৷ ইশরাত রহমান অভিযোগ করেন, সর্বশেষ গত ১ মে পুলিশ অফিসার্স মেসে নাজমুস সাকিব তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য তার তলপেট লক্ষ্য করে লাথি মারেন৷ তবে লাথি লাগে কোমরে৷ তিনি দৌড়ে গিয়ে টয়লেটে আশ্রয় নেন৷ সেখানে অনেক সময় আটকা থাকার পর এক পর্যায়ে বের হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে যান৷

এর আগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে কৌশলে একটি ক্লিনিকে নিয়ে একবার গর্ভপাত করানো হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন৷ কিন্তু এবার কোনোভাবেই গর্ভপাতে রাজি না হওয়ায় তার ওপর নির্যাতন আরো বেড়ে যায়৷

ইশরাত অভিযোগ করেন, ২০১৭ সালের মার্চে বিয়ে হওয়ার পর থেকেই তার ওপর যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন শুরু হয়৷ গত বছরের সেপ্টেম্বরে নাজমুস সাকিব তাদের কদমতলীর বাসায় তার পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় তাকে নির্যাতন করে৷ তখনো তিনি ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি হন৷

সংসার বাঁচাতে তিনি এতদিন সবকিছু সহ্য করলেও তিনি এবার তার সন্তানকে বাঁচাতে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানান৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়েছে মা হিসেবে আমার সন্তানকে বাাঁচানো আমার দায়িত্ব৷’’ ঘটনার দিন ১ মে তিনি ই-মেইলে রমনা থানায় মামলা পাঠালেও তিনি নিজে থানায় উপস্থিত না হতে পারায় মামলাটি নেয়া হয়নি৷ এক মাস পর তিনি নিজে থানায় গেলে ৪ জুন মামলাটি গ্রহণ করা হয়৷

‘‘বিয়ের পর পরই আমার স্বামীর ধারণা হয়েছে তিনি চাইলে ক্ষমতাবান কারুর মেয়েকে বিয়ে করতে পারতেন৷ তাতে তার আর্থিক ও পেশাগত লাভ হতো৷ আর সেই চিন্তা থেকেই নির্যাতন শুরু হয়৷ গর্ভপাত না করলে আমাকে তালাকেরও হুমকি দেয়া হয়,’’ অভিযোগ ইশরাত রহমানের৷

গর্ভপাত না করলে আমাকে তালাকেরও হুমকি দেয়া হয়: ইশরাত রহমান

হুমকির অভিযোগ
এখন মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দেয়া হচ্ছে ইশরাত রহমানকে৷ শুধু তাই নয় তার পরিবারের সদস্যদের ওপরও চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ৷ ‘‘সে আমাকে তার মোবাইল ফোন নাম্বার দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ-এ কল দিয়ে বার বার হুমকি দিচ্ছে৷ বলছে তুই আমার কিছুই করতে পারবি না৷ আমাকে যদি কোর্টেই যেতে হয় তাহলে তোর অবস্থা খুবই খারাপ হবে৷ এই হুমকির কারণে আমরা মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন৷ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে৷’’

কেন পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না
কিন্তু পুলিশ এখনো এএসপি নাজমুস সাবিকবে গ্রেপ্তার করেনি৷ আর হুমকির ব্যাপারেও কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি৷ ফলে ইশরাত ও তার পরিবারের সদস্যরা চরম নিরপত্তাহীনতায় ভুগছেন৷ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার সাব-ইন্সপেক্টর নিশাত জাহান অবশ্য দাবি করেন, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ ঢাকা ও তার গ্রামের বাড়িতে সে অবস্থান করছে না৷ তার খোঁজ পেলেই তাকে আটক করা হবে৷

মামলার তদন্ত সঠিক ভাবে হচ্ছে দাবি করে নিশাত জাহান বলেন, ‘‘আমার ওপর কোনো চাপ নেই আমি স্বাধীনভাবেই তদন্ত করছি৷ সাক্ষ্যপ্রমাণ ও মেডিকেল রিপোর্ট সংগ্রহের কাজ চলছে৷’’

আমার ওপর কোনো চাপ নেই আমি স্বাধীনভাবেই তদন্ত করছি: তদন্ত কর্মকর্তা

ইশরাত রহমানকে হুমকির বিষয়টি তিনি জানেন এবং হুমকি দিয়ে পরিবারটির কোনো ক্ষতি সে করতে পারবেনা বলে দাবী করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা৷ ‘‘তবে স্বাভাবিক কারণেই তার ভয় লাগতে পারে৷ আমি তাবে মানসিক সাপোর্ট দিচ্ছি,’’ বলেন তিনি৷

পুলিশ না পেলেও তাকে মোবাইল ফোনে সবাই নাজমুস সাকিবকে পাচ্ছেন বলে জানান ইশরাত রহমানের আইনজীবী ইশরাত হাসান৷ তিনি সংবাদমাধ্যমের সাথে কথাও বলছেন৷ তাকে মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে গ্রেপ্তার করা কোনো কঠিন কাজ নয় বলে মনে করেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘মামলার আসামি পুলিশের একজন এএসপি৷ তাই শুরুতেই মামলা নিতে এক মাস দেরি করা হয়৷ এখন আবার আসামি হুমকি দিচ্ছে৷ তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছেনা৷ ফলে এই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত নিয়েই সন্দেহ দেখা দিয়েছে৷ বিচারতো আরো পরের ব্যাপার৷’’

মামলায় এএসপি নাজমুস সাকিব ছাড়াও তার বাবা এবং মাকেও আসামি করা হয়েছে৷ নাজমুস সাবিক টেলিফোনে দাবি করেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে৷ আমাকেও হুমকি দেয়া হয়েছে৷ আমি থানায় জিডিও করেছি৷’’ আর স্ত্রী ইশরাত রহমানকে ফোনে হুমকি দেয়ার অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন৷

র‌্যাব ও পুলিশ সদর দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এএসপি নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে একটি বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে৷

গতবছরের মার্চের ছবিঘরটি দেখুন...