1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পেটমোটা পুলিশরা চিন্তায়

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
১৪ জুলাই ২০১৮

ভারতীয় পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তা সতর্কতামূলক নির্দেশনায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, একটা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে যদি তাঁরা নিজেদের মেদ-ভুঁড়ি না কমান, তাহলে চাকরি চলে যেতে পারে৷

https://p.dw.com/p/31OSO
Symbolbild Bauchumfang Übergewicht
ছবি: picture alliance/Bildagentur-online/Chmura-SC

থলথলে ভুঁড়ি আর মেদসর্বস্ব শরীর নিয়ে আর যা-ই করা যাক, পুলিশের চাকরি করা যায় না৷ পেটমোটা নাদুস-নুদুস মার্কা পুলিশ বলিউড ছবির কমিক চরিত্রেই মানায়৷  তাই পুলিশ কর্তৃপক্ষ এবার কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন৷ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, একটা সময় সীমার মধ্যে হয় ভুঁড়ি কমাও, মেদ ঝরাও, না হলে চাকরি খোয়াও৷ গত দেড় বছরে দেড়শ'র মতো পুলিশ কর্মী অকালে মারা গেছে মূলত বেশি মোটা হয়ে যাওয়ার কারণেই৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, মেদবহুল লিভার, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস,কিডনি এবং হৃদরোগ৷ নিয়ন্ত্রণহীন জীবনযাপন এবং ব্যায়াম ও ডায়েট কন্ট্রোল না করার কারণে অসুস্থ হয়ে মারা যান তাঁরা৷ তারপর ভারতের কর্নাটক রাজ্যের পুলিশ কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেছেন৷ চিহ্নিত করা হয়েছে মেদ-ভুঁড়িওয়ালা পুলিশ সদস্যদের৷ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তাঁদের শরীরে শর্করার মাত্রা কেমন এবং কতটা৷

 সেই অনুপাতে বয়স অনুযায়ী ভাগ  তাঁদের চারভাগে করা হয়েছে৷ বাধ্যতামূলকভাবে তাঁদের পাঠানো হয়েছে ট্রেনিং প্রোগ্রামে৷ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য ও ব্যায়ামের টিপস৷ বিশেষ করে শেখানো হচ্ছে যোগ ব্যায়াম এবং সেই সঙ্গে কাউন্সেলিং৷ পাশাপাশি খাদ্য তালিকাতেও পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে৷ মাছ-মাংস ও ডিমের বদলে বেশি করে শাকসবজি, স্যালাড,  জোয়ার, বাজরা খাবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ সেইসঙ্গে মদ বা অ্যালকোহল, বিড়ি সিগারেট, খইনি ও ঘুটকা ছাড়ানোর বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷ কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী (সিআরপিএফ) এবং সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী (বিএসএফ) এবং কেন্দ্রীয় রিজার্ভ বাহিনীতে বার্ষিক দৈহিক ফিটনেস পরীক্ষা দেবার নিয়ম দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে৷ কিন্তু সেটা মানা হয় না৷

ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে লাগাতার যোগায়োগ করার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু মিডিয়ায় কেউ মুখ খুলতে রাজি নন৷ কেউ বলেন, ‘‘মিটিং-এ আছি'', কেউ বলেন ‘‘ব্যস্ত আছি৷'' মোটকথা তাঁরা মুখ ফুটে কিছু বলতে রাজি নন৷ পাছে কোনো বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন! শেষমেষ দিল্লির এক পুলিশ অফিসারের অফিসে গিয়ে পুলিশ বাহিনীর স্বাস্থ্য সচেতনতা কতটা, তা জানতে চাইলে তিনি তাঁর বক্তব্য রেকর্ড করতে নিষেধ করেন এবং নাম প্রকাশেও অনিচ্ছা ব্যক্ত করে শুধু এইটুকুই বললেন যে, ‘‘সব পুলিশ পেট মোটা, মেদবহুল এ কথা মনে করার কারণ নেই৷ ৭০ শতাংশের বেশি পুলিশ দৈহিক দিক থেকে ফিট৷ আমাদের যে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয় দিনরাত, শরীর ফিট না থাকলে তা কি করে সম্ভব, আপনিই বলুন ? পুলিশকে গড়পড়তা  ১০-১২ ঘন্টা কাজ করতে হয়৷ হ্যাঁ, মুষ্টিমেয় কিছু পুলিশের বাড়তি মেদ থাকতে পারে৷ কিন্ত বেশির ভাগই শারিরীক দিক থেকে মোটামুটি ফিট৷ তবে নিয়মিত ব্যায়াম বা ডায়েট কন্ট্রোল করার সরকারি নির্দেশ অন্তত দিল্লি পুলিশের নেই৷ তবে এটা জানা কথা, শরীর ফিট না থকলে প্রমোশন আটকে যাবে৷''

উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং এবং প্রমোশনের জন্য দিতে হয় শেপ-ওয়ান ফিটনেস সার্টিফিকেট৷ শেপের ইংরেজি বানান অনুযায়ী এস মানে সাইক্রিয়াট্রিক বা মানসিক, এইচ মানে শ্রবণশক্তি, এ মানে আন্ত্রিক, ই মানে দৃষ্টিশক্তি আর পি মানে ফিজিক্যাল৷ এটা হচ্ছে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য পরীক্ষা৷ উচ্চপদস্থ এবং নিম্নপদস্থ সবাইকে এখন থেকে সরকারি এবং সরকার অনুমোদিত হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দিতে হবে৷ না দিলে পদোন্নতি আটকে যাবে, এমনকি চাকরিই চলে যেতে পারে৷ এমনটাই বক্তব্য কর্নাটক পুলিস কর্তৃপক্ষের৷

প্রশ্ন হচ্ছে, ভারতীয় পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের স্বাস্থ্য এত খারাপ কেন ? স্বাস্থ্যচর্চার প্রতি তাঁদের এত অনীহা কেন ? এর মূল কারণ, তাঁদের কাজকর্মের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ৷ সেখানকার পরিবেশ খুবই খারাপ৷ ৯০ শতাংশকে কাজ করতে হয় আট ঘন্টার বেশি৷ ৭৩ শতাংশের কোনো নির্দিষ্ট ডিউটি আওয়ার্স বলে কিছু নেই৷ নেই সাপ্তাহিক ছুটি৷ এখানেই শেষ নয়, নবরাত্রি. দিওয়ালি, দুর্গা পুজা, প্রজাতন্ত্র দিবস, স্বাধীনতা দিবস এবং বলা বাহুল্য, ভোটের সময়ে ডিউটির শেষ নেই৷ তখন পুলিশ কর্মীদের কাজের সময় হয় রোজ ১৪-১৫ ঘন্টা৷ আরেকটা পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে, ৯০ শতাংশকে ডিউটি দিতে হয় রোজ আট ঘন্টার বেশি, ৬৮ শতাংশকে ১১ ঘন্টার বেশি এবং ৩০ শতাংশকে ১৪ ঘন্টার বেশি৷ এর কারণ কী ? জনসংখ্যার অনুপাতে ভারতে মাথাপিছু পুলিশের সংখ্যা সবথেকে কম৷ প্রতি ৭২০ জন পিছু একজন পুলিশ থাকে৷ যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যাটা ৪৩০, স্পেনে ১৯৮ এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩৪৭৷ জাতিসংঘের মাপকাঠিতে প্রতি ৪৫৪ জনের জন্য থাকা উচিত একজন পুলিশ অফিসার৷ ভারতীয় রাজ্যগুলির মধ্যে বিহারের অবস্থা সেদিক থেকে সবচেয়ে শোচনীয়৷

প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য