1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পেন্সিলের ডগায় অসাধারণ শিল্পকর্ম

২৫ এপ্রিল ২০১৯

পেন্সিলের ডগা বা মুখ খোদাই করে ভাস্কর্য সৃষ্টি করে গোটা বিশ্বে পরিচিত হয়ে উঠছেন রাশিয়ার এক শিল্পী৷ ‘গেম অফ থ্রোনস’ সিরিয়ালের চরিত্রগুলি তাঁর হাতে নতুন রূপে ফুটে উঠছে৷ এমন শিল্পের কদরও বাড়ছে৷

https://p.dw.com/p/3HQBh
ছবি: Salavat Fidai

এই সব পেন্সিল আঁকার জন্য নয়৷ শিল্পী হিসেবে সালাভাত ফিদেই এই গ্রাফাইটের শিষ শিল্পসৃষ্টির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করেন৷ আজ তিনি বিখ্যাত মার্কিন সিরিয়াল ‘গেম অফ থ্রোনস'-এর একটি নেকড়ে সৃষ্টি করতে চলেছেন৷

রাশিয়ার উফা শহরে নিজের ফ্ল্যাটেই সালাভাতের স্টুডিও৷ কাজের জন্য তাঁর বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না৷ তাঁর ভাস্কর্যগুলি বড়জোর ২ থেকে ৫ মিলিমিটার বড়৷ গভীর মনোযোগ দিয়ে নিখুঁত কাজ করতে হয়৷ সালাভাত বলেন, ‘‘নিজের শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে হৃৎস্পন্দনের মাঝে আমাকে ভাস্কর্যের কাজ করতে হয়৷ কারণ হৃৎস্পন্দন কীভাবে ব্লেড নাড়িয়ে দেয়, মাইক্রোস্কোপের নীচে তা দেখা যায়৷ তাই এই কাজ অনেকটা মেডিটেশন বা ধ্যানের মতো৷'' 

এতো ক্ষুদ্র শিল্পকর্ম!

‘গেম অফ থ্রোনস' সিরিয়ালের মোটিফগুলি শুধু আজই তাঁকে ভাবাচ্ছে না৷ দুই বছর আগে সালাভাত ফিদেই এই সিরিয়ালের ৩০টি চরিত্রের অনুপ্রেরণায় তৈরি মিনিয়েচার নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই সিরিয়ালের সঙ্গে যুক্ত শিল্পী, সাজসরঞ্জাম ও পোশাক প্রস্তুতকারীরা তাঁদের সৃজনশীলতার মাধ্যমে আমাকে প্রেরণা দেন৷ আমি বড় ফ্যান৷ ফ্যান হিসেবে আমি এই সিরিয়ালের মোটিফগুলি তৈরি করতে ভালোবাসি৷''

২০১৪ সাল থেকে সালাভাত শুধু পেন্সিল মিনিয়েচার নিয়ে কাজ করছেন৷ নিজের শহরে শিল্পীদের সরঞ্জামের এক দোকান থেকেই তিনি কাঁচামাল কেনেন৷ সালাভাত ফিদেই বলেন, ‘‘গ্রাফাইট একইসঙ্গে নরম ও শক্ত৷ তাই এই উপকরণ দিয়ে অনেক কিছু করা যায়৷ কোনো এক সময়ে মার্বেল, ব্রোঞ্জ অথবা মাটির মতো গ্রাফাইটও শিল্পসৃষ্টির উপকরণ হিসেবে একই রকম কদর পাবে, সেটাই আমার স্বপ্ন৷''

পেন্সিল নিয়ে সালাভাত অনেক দূর এগিয়েছেন৷ বিদেশেও তাঁর মিনিয়েচার ভাস্কর্যের নিয়মিত প্রদর্শনী হয়৷ এই শিল্পী উরাল পর্বতের কাছে উফা শহরে কাজ করেন৷ সেখানকার জনসংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষ৷ কিন্তু তাঁর বেশিরভাগ ক্রেতাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপে থাকেন৷ সালাভাত মনে করেন, ‘‘ফান গখ-এর সে সময়ে যদি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থাকতো, তাহলে জীবদ্দশায়ই তিনি বিখ্যাত হতে পারতেন৷ এ ক্ষেত্রে ইন্টারনেট মূল বিষয়৷ তুমি কে, কোথায় থাকো – এখন সেটা আর জরুরি বিষয় নয়৷ সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সারা বিশ্বে বিখ্যাত হওয়া সম্ভব৷'' 

ইনস্টাগ্রামে সালাভাত ফিদেই-এর ৭ লক্ষ ষাট হাজারেরও বেশি ফলোয়ার রয়েছেন৷ বিশেষ করে তাঁর সৃষ্টিকর্মের সূচনা সংক্রান্ত একটি ভিডিও বেশ জনপ্রিয় হয়েছে৷

তিনি সরাসরি শিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন নি৷ আইন নিয়ে উচ্চশিক্ষার পর প্রায় দুই দশক ধরে তিনি মার্কেটিং বা বিপণন ক্ষেত্রে কাজ করেছেন৷ ২০১৪ সাল থেকে তিনি সবকিছু ছেড়ে শিল্প নিয়ে মশগুল হয়ে পড়েন

এর মধ্যে মিনিয়েচার ভাস্কর্যের দাম প্রায় ১,০০০ ইউরো ছুঁয়েছে৷ প্রত্যেকটি শিল্পকর্ম সৃষ্টি করতে তাঁর ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কয়েক দিন ধরে কাজ চলে৷ কখনো একেবারে শেষ মুহূর্তে পেন্সিলের উপরিভাগ ভেঙে যায়৷

পেন্সিলের ডগায় প্রায় ৪০০ ভাস্কর্য সৃষ্টি করেও সালাভাত ফিদেই এই শিল্পের প্রতি আকর্ষণ হারান নি৷ তিনি বলেন, ‘‘এই ক্ষুদ্র জগত আমার কাছে নিজস্ব ব্রহ্মাণ্ডের মতো৷ আমি যত বড় করে দেখি, উপাদানের কাঠামো ও সারফেস আমার কাছে তত আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে৷ মাইক্রোস্কোপের নীচে তা একেবারে অন্যরকম দেখতে লাগে৷ সেটাই আমার কাছে চ্যালেঞ্জ৷ এত ক্ষুদ্র বস্তুর উপর আমি কি সূক্ষ্ম কারুকাজ করতে পারি?''

সালাভাত ফিদেই পেন্সিল খোদাই করে এক মিনিয়েচার জগত সৃষ্টি করেছেন৷ উফা শহর থেকে তিনি আন্তর্জাতিক শিল্পজগতে নিজস্ব স্থান করে নিয়েছেন৷

এমিলি শেরউইন/এসবি