1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পোশাক শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি, নাকি ব্যবসা বাড়ানো?

৯ সেপ্টেম্বর ২০১০

বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের বেতন নিয়ে আলোচনা বহু পুরনো৷ প্রায়ই শ্রমিক-মালিক দ্বন্দ্ব লেগে থাকে৷ সম্প্রতি, শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন বাড়ানো হয়েছে৷ তবে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের অধিকার এখনও ঠিকমত সংরক্ষিত হচ্ছেনা বলে অভিযোগ৷

https://p.dw.com/p/P7WJ
জার্মানির হামবুর্গে হয়ে হলো একটি সেমিনারছবি: AP

আর এসব বিষয় নিয়েই, সম্প্রতি জার্মানির হামবুর্গ শহরে প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোগে হয়ে গেল একটি সেমিনার৷

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের শতকরা ৭৮ ভাগ আসে পোশাক শিল্প থেকে৷ এই সাফল্যের পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে৷ তার মধ্যে একটা সস্তা শ্রম৷ সারা বিশ্বের মধ্যেই বাংলাদেশি শ্রমিকরা সবচেয়ে কম বেতন পান৷ সম্প্রতি শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন বাড়িয়ে তিন হাজার টাকা করা হয়েছে৷ যদিও তাদের দাবি ছিল পাঁচ হাজার টাকা৷ কারণ তারা বলছে, এত অল্প টাকায় তাদের সংসার চলেনা৷ কিন্তু মালিকরা বলেছেন, বেতন আর বাড়ানো সম্ভব নয়৷ কারণ তাহলে পোশাকের দাম বেড়ে যাবে৷ ফলে ক্রেতা হারাতে হবে৷ অর্থাৎ ব্যবসা কমে যাবে৷ কিন্তু আসলেই কি পাঁচ হাজার টাকা দেয়া সম্ভব নয়? ব্যবসায়ীরা যে ব্যবসা কমে যাওয়ার কথা বলছেন, সেটা কী ঠিক? এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক ও আয়োজক ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম'এর চেয়ারম্যান আদেল কাজী দুপক্ষের স্বার্থই দেখার কথা বললেন৷ পাশাপাশি শ্রমিকদের পাঁচ হাজার টাকা দিয়েও ব্যবসা ঠিক রাখা যাবে বলে মন্তব্য করেন৷ কাজী বলেন, ‘‘আমাদের ব্যবসায়ীদের স্বার্থটাও দেখতে হবে, যেন বেশি বেতন দেয়ার জন্য ব্যবসা চলে না যায়৷ তবে কারখানাগুলোর মান বাড়ানো গেলে কম খরচে পোশাক তৈরি সম্ভব হবে৷ সেক্ষেত্রে শ্রমিকদের বেশি বেতন দেয়া যাবে৷ এতে শ্রমিকরা ভাল ভাল খাবার খেতে পারবে৷ এছাড়া তাদের মনও ভাল থাকবে৷ যেটা তাদের ভাল কাজ করতে উৎসাহিত করবে৷ এর মাধ্যমেও কারখানাগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে৷''

আদেল কাজী যেমন শ্রমিকদের উৎসাহ দেয়ার কথা বললেন সে ব্যাপারে বেশ জোরালো মনে হলো ‘ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইন' বা সিসিসি'র ইরমগার্ড বুজেমানকে৷ সিসিসি ইউরোপের একটি বেসরকারি সংস্থা৷ বুজেমান এই সংস্থার হামবুর্গ শাখায় কাজ করেন৷ তিনি বলেন, বাংলাদেশে নারী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে তাঁর সংস্থা৷ পাশাপাশি যেসব জার্মান কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে কাপড় আমদানি করে, তাদেরও বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করার কাজ করছে সিসিসি৷ যেমন বাংলাদেশের যেসব কারখানা আন্তর্জাতিক শ্রম আইন মানছেনা, তাদেরকে যেন কোন কাজের অর্ডার দেয়া না হয়, সে ব্যাপারে জার্মান কোম্পানিগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে৷ শুধু কোম্পানিই নয়, ক্রেতাদেরও সচেতন করার কাজ করে যাচ্ছে সিসিসি৷

সেমিনারে উপস্থিত কয়েকজন জার্মান নাগরিক বাংলাদেশি শ্রমিকদের এই দুরবস্থা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করলেন৷ সেইসঙ্গে শ্রমিকদের বেতন আরও বাড়ানো উচিত বলে মন্তব্য করেন৷ তবে বাংলাদেশি এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, যিনি কয়েকবছর ধরে জার্মানিতে থেকেই ব্যবসা করে যাচ্ছেন, তিনি বললেন বাংলাদেশের কারখানায় শ্রমিকদের এই হাল নিয়ে জার্মান কোম্পানিগুলো চিন্তিত নয়৷ তাঁর কথা হলো, বেশিরভাগ কোম্পানিই চায় কম দামে কাপড় কিনতে৷ সেটা তারা যেখানে পাবে, সেখান থেকেই কিনবে৷ তাই কীভাবে সেটা উৎপাদিত হচ্ছে, তা নিয়ে তাঁরা চিন্তিত নন৷ এ ব্যাপারে একটি উদাহরণ দিলেন তিনি৷ আগামী কয়েকদিনের মধ্যে একজন শীর্ষস্থানীয় জার্মান আমদানিকারক বাংলাদেশে যাচ্ছেন৷ উদ্দেশ্য তাঁর সেখান থেকে কাপড় কেনা৷ এর আগে তিনি যেটা করতেন চীন থেকে৷ কিন্তু সেখানে শ্রমমূল্য বেড়ে যাওয়ায় কাপড়ের দাম বেড়ে গেছে৷ তাই সস্তায় কাপড় কিনতে তিনি যাচ্ছেন বাংলাদেশে৷

প্রতিবেদন: জাহিদুল হক

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন