1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্যারিসের শেষ হাতপাখা শিল্পীর বেদনা

২৫ মার্চ ২০২২

গ্রামাঞ্চলে হাতপাখার নানা ব্যবহার হয়৷ কিন্তু নাটক, চলচ্চিত্র, নাচের মতো পারফরম্যান্সের সময়ে বাহারি ফোল্ডিং হাতপাখার আকর্ষণই আলাদা৷ লুপ্তপ্রায় এই শিল্প এখনো ধরে রেখেছেন প্যারিসের এক নারী৷

https://p.dw.com/p/4916u
ছবি: DW

ফ্যাশনের শহর প্যারিস৷ গরমের দিনেও একটি বস্তু হাতে না থাকলে চলে না৷ সেটি হলো বাহারি ফোল্ডিং হাতপাখা৷

আন উগে ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাপড় ও উচ্চ মানের উপকরণ দিয়ে হাতপাখা তৈরি করছেন৷ তিনি এমন এক ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করেছেন, যা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে৷ ৭৫ বছর বয়সি এই নারী প্যারিসের শেষ প্রজন্মের হাতপাখা প্রস্তুতকারী৷ আন বলেন, ‘‘বিশেষ কিছু উপকরণ দিয়ে আমি পাখা তৈরি করি৷ একটি টেমপ্লেটের সাহায্যে আমি প্রয়োজন অনুযায়ী নিখুঁতভাবে কাপড় কেটে নেই৷ তৈরি করার সময় যাতে কোনো কিছু পিছলে না যায়, তা নিশ্চিত করতে নীচে খবরের কাগজ রাখি৷ তারপর সেই কাপড় এমন এক ছাঁচের মধ্যে রাখতে হয়, যাতে সেটি আরও ভালোভাবো ভাঁজ করা সম্ভব৷’’

একটি পাখা তৈরি করতে তাঁর কখনো এক ঘণ্টা, কখনো বা কয়েক মাস সময় লাগতে পারে৷ ১৯৬০ সালে তাঁর বয়স ১৪ ছোঁয়ার পর তার বাবা মেয়েকে পারিবারিক ব্যবসায় নামানোর সিদ্ধান্ত নেন৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আন বলেন, ‘‘পাখা তৈরির কাজ শেখার কারণে স্কুলের পড়া বন্ধ করে দিতে হয়েছিল৷ সেটা আমার ভালো লাগে নি৷ পরে অবশ্য সেই কাজে আনন্দ পেয়েছিলাম৷ বাবা মারা যাবার পর এই ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখার তাগিদ জন্মেছিল৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্যাশন বা আবেগও সৃষ্টি হয়েছিল৷ কোনো পাখাই অন্যটির মতো না হওয়ায় কখনো ক্লান্তি আসে না৷ সেটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে৷’’

প্যারিসে হাতপাখার শিল্প ধরে রেখেছেন আন উগে

লাখ লাখ মানুষ সিনেমায় একটি পাখা দেখেছেন৷ ফ্রান্সের রানি মারি অঁতোয়ানেতের উপর এক চলচ্চিত্রের জন্য হলিউডের পরিচালক সোফিয়া কপোলা ৩,০০০ ইউরো মূল্যের অনবদ্য পাখাটির অর্ডার দিয়েছিলেন৷ আন উগে বলেন, ‘‘সোফিয়া কপোলা ম্যাগাজিনে একটি পাখা দেখে পছন্দ করেছিলেন৷ কিন্তু সেটি ষোড়শ লুইয়ের সময়ের ছিল না৷ তখন আমাদের একটা আপোশ করতে হয়েছিল৷ আমরা তাঁর পছন্দের সুতোর কাজ অক্ষত রেখে অষ্টাদশ শতাব্দীর শৈলি অনুযায়ী পাখাটি তৈরি করেছিলাম৷’’

অনেক বিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ডের জন্যও তিনি কাজ করেছেন৷ যেমন লুই ভুইতঁ-র তৎকালীন প্রধান ডিজাইনার মার্ক জেকবস এক বিজ্ঞাপনের জন্য একটি হাতপাখা তৈরি করিয়েছিলেন৷ আন বলেন, ‘‘এটা আবলুস কাঠ দিয়ে তৈরি৷ সেলাইয়ের কাজ লাক্সারি ব্র্যান্ডের প্রতীকের কথা মনে করিয়ে দেবে৷ এই মডেলে সবকিছুই সেলাই করা হয়েছে, কারণ মার্ক জেকবস কোনো আঠা চান নি৷ তিনি হাতপাখা খুব পছন্দ করতেন৷’’

তবে কার্ল লাগারফেল্ডের সঙ্গে সহযোগিতার স্মৃতি আন উগের জন্য সবচেয়ে স্মরণীয়৷ জার্মানির এই ফ্যাশন ডিজাইনার সবচেয়ে পরিচিত হাতপাখা ব্যবহারকারীদের অন্যতম৷ আন উগে বলেন, ‘‘তিনি যখন আমার কাছে আসতেন, তখন তাঁর মাথায় নির্দিষ্ট কোনো আইডিয়া থাকতো না৷ আমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে তিনি আঁকতে শুরু করতেন৷ সেগুলির বাস্তব রূপ দেওয়া কখনো কখনো বেশ কঠিন হতো৷ কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জই আমাকে রোমাঞ্চ দিয়েছে৷ লাগারফেল্ডের সঙ্গে কাজ করতে আমার খুব ভালো লেগেছে৷’’

নিজস্ব পেশা চালিয়ে যাওয়া আন উগের জন্য একটা মিশন৷ কারণ এই পেশা লোপ পেতে বসেছে৷ আন বলেন, ‘‘আমি নিজের জ্ঞান সানন্দে বিতরণ করতে চাই, যাতে সেটি হারিয়ে না যায়৷ এটা আমার হৃদয়ে জমে আছে৷ ফ্রান্সে এই পেশাকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সরকারি স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে৷ এই ধারা হারিয়ে গেলে আমার মনে খুব কষ্ট হবে৷’’

প্যারিসের শেষ হাতপাখা শিল্পী এক ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক সম্পদ বাঁচিয়ে রাখার জন্য সংগ্রাম করে চলেছেন৷ ‘সাভোয়া ভিভ্র’ বা বেঁচে থাকার ফরাসি আদর্শের অংশ সেই হাতপাখা৷

কাটিয়া ল্যার্শ/এসবি