1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রকৃতির বিবর্তনের বিমূর্ত ছবি

২৮ মে ২০১৮

মথের পাখা ঝাপটানো, পিঁপড়ার হাঁটা, শামুকের যাওয়ার দাগ বা প্রজাপতির পাখা থেকে মানুষ, পতঙ্গ ও প্রকৃতির বিবর্তনের বিমূর্ত ছবি আঁকেন মাক্সিমিলিয়ান প্র্যুফার৷ প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা থেকে জন্ম নিয়েছে তাঁর শিল্প ও জীবনদর্শন৷

https://p.dw.com/p/2yQvL
ছবি: Maximilian Prüfer

ইংরেজি নাম ‘মথ’, প্রজাপতিরই জাতভাই৷ তারা পাখা নেড়ে নেড়ে ছবি সৃষ্টি করে৷

মথ বস্তুত চাঁদের আলোয় পথ চেনে৷ এখানে তারা ইলেকট্রিকের বাতিকে চাঁদ ভেবে তার চারপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে৷

একটি পতঙ্গের ভ্রম বা ভ্রান্তির ছবিটি ধরে রেখেছেন শিল্পী মাক্সিমিলিয়ান প্র্যুফার৷

মাক্সিমিলিয়ান বললেন: ‘‘ভাবুন, যেন কাগজের উপর একটা মিহি স্তর পাতা রয়েছে, পোকাদের প্রতি নড়াচড়ায় যা সরে গিয়ে কাগজের আসল রংটা বেরিয়ে পড়ছে৷ এবং এই স্তরটা এতোই সংবেদনশীল যে, একটি পিঁপড়ার পায়ের দাগও ফুটিয়ে তোলা যায়৷ এমনকি আমার মাথার একটা চুলও যদি ঐ কাগজের ওপর পড়ে, তাহলে তার ছাপ থেকে যায়৷’’

পিঁপড়ারা দু'টি গোল টিনের বাক্সে ঘুরে চলেছে; নীচে ডানদিকে কিছু পিঁপড়া পালাতে সমর্থ হয়েছে৷

একটি ঢাকনার ওপর শামুকদের ছবি: শামুকের যাত্রাপথ দেখে আমরা কি কিছু বুঝতে পারি? একটি শামুক কোন পথে যায়? গোটা দলটাই বা চলে কীভাবে? তাদের যাওয়ার পথ কি বদলানো যায়? খুব সোজা: পাতটাকে একটু ঢালু করে ধরলেই শামুকরা সেদিকে যাবে৷

মাক্সিমিলিয়ান বললেন, ‘‘এটা হলো এমন একটা মৌলিক নীতি, যা সব জীব বিবর্তন থেকে শিখে গিয়েছে: আমরা সকলেই যতটা সম্ভব কম শক্তি খরচ করতে চাই, সবচেয়ে সোজা পথটা নিতে চাই; শামুকরাও তাই করে৷ এভাবে শামুকদের কোনো একটা দিকে পাঠানো সম্ভব৷’’

মাক্সিমিলিয়ান প্র্যুফার যে জীবগুলিকে নিয়ে কাজ করেন, তাদের স্বভাবতই মানুষের প্রতিনিধি বলেও ধরে নেওয়া যেতে পারে৷ তাঁর মতে, আমরা মানুষরাও সর্বাগ্রে প্রকৃতির অঙ্গ – নিজেদের সৃষ্ট একটি কৃত্রিম জগতে বাস করার ফলে যা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই৷

মাক্সিমিলিয়ান প্রধানত মুক্ত প্রকৃতিতে কাজ করেন; শুধু শীতের অধিকাংশ সময়টা আউগ্সবুর্গে তাঁর নিজের স্টুডিওয় কাটান৷

বিবর্তনের বিমূর্ত ছবি

মাক্সিমিলিয়ানের কাছে প্রকৃতি কোনো রোম্যান্টিক ব্যাপার নয়, বরং ঘড়ির কাঁটার মতো বিভিন্ন যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নিয়মে চলে, ছেলেবেলাতেই যা তাঁকে মুগ্ধ করেছে৷

প্রজাপতিগুলি কোনো পুরনো সংগ্রহের অঙ্গ – মাক্সিমিলিয়ান এগুলো কিনে নিয়েছেন অথবা উপহার হিসেবে পেয়েছেন৷ নয়ত তিনি কোনো জীবের কোনো ক্ষতি করতে চান না – তাঁর কাছে সেটা খুবই জরুরি৷

প্রজাপতির পাখা দিয়ে শিল্পকলা একটু খেলো শোনাতে পারে৷ কিন্তু মাক্সিমিলিয়ান প্র্যুফারের কাছে নয় – কেননা ছবির পিছনে রয়েছে তাঁর চিন্তা৷

মাক্সিমিলিয়ান বলেন, ‘‘যে ছবি এককালে একটি জীবন্ত প্রজাপতির পাখায় ছিল, তা আজ একটি প্রতিলিপি হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ অথচ ছবিটার না আছে কোনো শিল্পী, না কোনো কপিরাইট৷ সাড়ে তেরো কোটি বছরের বিকাশধারার কাহিনি একটি ছবিতে ধরা আছে, যেন বিবর্তনের কোনো বিমূর্ত ছবি৷’’

মাক্সিমিলিয়ান প্র্যুফারের প্রজাপতির ছবিগুলি বর্তমানে মিউনিখে সদবিজ নিলাম সংস্থার কার্যালয়ে প্রদর্শিত হচ্ছে৷

কে আমাদের চালায়? ইচ্ছাশক্তি, কল্পনাশক্তি, নাকি অবচেতন মন? মাক্সিমিলিয়ান প্র্যুফারের ছবিতে যেন তারই কিছু উত্তর লুকিয়ে রয়েছে – দুর্বোধ্য, পড়া যায়, কিন্তু বোঝা যায় না৷

ল্যুডিয়া ফন  ফ্রাইব্যার্গ/এসি