1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রতিশোধ নেবে পানি

২০ ডিসেম্বর ২০১০

প্রতিটি দেশের নদী-নালা, খাল-বিলে কৃত্রিম পদার্থ সবসময়ই পাওয়া যাবে৷ বিভিন্ন কল-কারখানা থেকে বর্জ্যপদার্থ ফেলার অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে জলাশয়৷ অথচ সাধারণ মানুষের জন্য, পরিবেশের জন্য তা কত ক্ষতিকর তা কি কখনো কেউ ভেবেছে?

https://p.dw.com/p/QgEy
চীনের এই লেকের পানি দূষণের কারণে সুবজ হয়ে গেছেছবি: picture-alliance/dpa

জনসংখ্যা বাড়ছে পৃথিবীতে, বাড়ছে নগরায়ন একই সঙ্গে প্রকৃতিক বেশ কিছু উপাদানের ওপর পড়ছে অস্বাভাবিক চাপ৷ পানি তার মধ্যে একটি৷ ধারণা করা হচ্ছে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর পাঁচশো কোটি মানুষ শহরে বসবাস করবে৷ গ্রাম ছেড়ে শহরে আসবে মানুষ৷ তাদের জন্য খাবার পানি সরবরাহ করতে হবে৷ নোংরা পানির হাত থেকে তাদের বাঁচাতে হবে৷ পানিবাহিত রোগের হাত থেকে তাদের রক্ষা করতে হবে৷

নদীনালা, হ্রদ এবং সাগরের অব্যাহত দূষণের একটা বড় উৎস মাত্রাধিক সার ব্যবহারের ফলে পানিতে ক্ষতিকর শ্যাওলার পরিমাণ সাঙ্ঘাতিক বেড়ে যাওয়া৷ তবে সবচেয়ে বড় বিপদটি কাজ করছে ধীরে ধীরে, চোখের আড়ালে৷ এবং তা হল - সিনথেটিক নানা পদার্থ অনেক বেশি পরিমাণে পানিতে এসে মিশছে৷ যার ক্ষতিকর প্রভাব প্রজনন ক্ষমতার ওপর পড়বে বলে বলা হচ্ছে৷ এই বিপদের পূর্ণাঙ্গ রূপটা এখনও বিজ্ঞানীদের কাছে পুরোপুরি স্পষ্ট নয়৷

ক্ষতিকর উপাদানগুলো মিশে আছে নানা রকমের কীটনাশকে, বিভিন্ন স্প্রের মধ্যে, ওষুধপত্রে, কল-কারখানার বিভিন্ন রকমের বর্জ্যপদার্থে৷৷ এগুলো বিষের মত কাজ করে৷ দেহের হর্মোন প্রক্রিয়ার ওপর হামলা চালায়৷ মানুষ আর পশুপাখির জন্য এ হলো নিঃশব্দে এগিয়ে আসা এক হুমকি৷ গবেষকরা একের পর এক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন মাছ, সামুদ্রিক পাখি এমন কি পোলার বেয়ারের ওপরও৷ সুইডেনের নামী পানি বিশেষজ্ঞ মালিন ফালকেনমার্ক এ বিষয়ে জানান, ‘‘যে সব কৃত্রিম পদার্থ পাওয়া যাচ্ছে জলাশয়, নদী এবং সমুদ্রে তা আমাদের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক গুরুতর সমস্যা৷ কারণ এই দূষিত পদার্থগুলো প্রজননের ওপর প্রভাব রাখছে৷ আমরা যদি এই হুমকির মোকাবিলা করতে চাই তাহলে এসব দূষিত পদার্থের মূল উৎসকে আমাদের অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে৷ কোন দূষিত পদার্থ যদি পানিতে মিশে যায় তাহলে তা খুব সহজেই নদী নালা বাহিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে৷''

মানুষের শরীর প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হর্মোনের পাশাপাশি কৃত্রিম পদ্ধতিতে তৈরি হর্মোনও বের করে দেয়৷ যেমন মেয়েদের শরীরে জন্মনিরোধক বড়ির মধ্য দিয়ে যে কৃত্রিম হর্মোন ঢোকে, তা আবার বেরিয়ে যায় মলের সঙ্গে৷ কলকারখানার রাসায়নিকের মধ্যেও এমন কোন উপাদান থাকতে পারে যা হর্মোনের মতোই প্রভাব রাখতে পারে৷ পানিতে এই ধরণের পদার্থ দীর্ঘদিন সক্রিয় থাকে৷ সুইজারল্যান্ডের বাজেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী প্যাট্রিসিয়া হোল্ম জানান, ‘‘যেহেতু এইসব পদার্থ কাজ করে হর্মোনের মতই, তাই পরিশেষে ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়ার প্রক্রিয়াটিকে সচল করতে একটিমাত্র মলিকিউল অর্থাৎ অণুই যথেষ্ট৷ এধরণের পদার্থ সামান্যতম পরিমাণে থাকলেও তার প্রভাব পড়তে পারে৷ এছাড়া মানুষের দেহ থেকে যেসব হর্মোন পানিতে গিয়ে পড়ে তার প্রভাব পড়ে বিভিন্ন ধরণের মাছ ও উভচর প্রাণীর ওপর, ঠিক আমাদের হর্মোন প্রক্রিয়ার মতই৷''

এ নিয়ে গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান প্যাট্রিসিয়া হোল্ম৷ এই প্রভাবের মাত্রা ঠিক কতটা তা নিয়ে এখনও পরীক্ষা চলেছে৷ কেননা মানুষের ওপর এই সব কৃত্রিম উপাদানের প্রভাবের বিষয়টি খুবই বিতর্কিত রয়ে গেছে৷ তবে বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ এক্ষেত্রে ভয় পাইয়ে দেয়ার মত৷ জীববিজ্ঞানী হোল্ম বলছেন, ‘‘আমরা এটুকু বলে পারি যে গত পঞ্চাশ বছরে বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে শুক্রাণুর সংখ্যা অনেক কমে গেছে - কোথাও তা অর্ধেকে নেমে এসেছে৷ আমরা লক্ষ্য করছি মেয়েদের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যান্সার বাড়ছে৷ অন্যদিকে পশুর ওপর পরীক্ষা চালিয়ে আমরা দেখেছি যে ইঁদুরের ক্ষেত্রে এস্ট্রোজেন বাড়ার ফলে টিউমার বেশি হচ্ছে৷''

প্যাট্রিশিয়া হোল্ম চান, শুধু জীববিজ্ঞানী বা রাসায়নবিদ নয় আইনজীবী এবং রাজনীতিকরাও এগিয়ে আসুক৷ সমাজে শুরু হোক বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক৷ তিনি বলেন, এই প্রশ্ন করতে হবে আমাদের, যেসব ওষুধ আমরা কিনি তার সবগুলোই কী আমাদের প্রয়োজন? ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হাজার ওষুধ তালিকাভুক্ত৷ প্রতিদিনই তার সংখ্যা বাড়ছে৷ জার্মানিতে প্রতিদিন যত ওষুধ বিক্রি হয় তার এক তৃতীয়াংশই টয়লেটে ফেলে দেওয়া হয়৷ পানির সঙ্গে মিশে যায় এগুলো৷ যারা কিনছেন এই সব ওষুধ বা রাসায়নিক তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করাটা খুবই জরুরি৷ কেননা পানিতে মিশে যাওয়া ক্ষতিকর পদার্থ একদিন পানীয় জল অথবা খাবারের হাত ধরে আমাদের কাছেই আবার ফিরে আসবে৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আবদু্ল্লাহ আল-ফারূক