1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রতিশ্রুতিতেই আটকা বস্তিবাসীদের দাবি

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৪ এপ্রিল ২০২১

স্মার্ট সিটির স্বপ্নে বিভোর কলকাতায় ভোট বস্তিবাসীদের কাছে নিরাপদ ও বৈধ বাসস্থান, পানীয় জল আর বিদ্যুৎ-এর প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসে৷ প্রতিশ্রুতির কিছুটা পালিত হলেও বাকিটা অধরা৷

https://p.dw.com/p/3rZZM
ছবি: Payel Samanta/DW

যুব বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পেয়ে সেবার বদলে গিয়েছিল সল্টলেক৷ সঙ্গে সঙ্গে সুদৃশ্য শহরের বস্তি অদৃশ্য করার কাজে লেগে পড়েছিলেন কর্তাব্যক্তিরা৷ সৌন্দর্য বৃদ্ধির  নামে একাধিক বস্তি বিদেশিদের আড়ালে রাখতে হোর্ডিং-ফেস্টুনে ছেয়ে গিয়েছিল৷ সম্প্রতি বস্তির পরিচয় লুকাতে করা হয়েছে নাম-বদল৷ মানিকতলা মেন রোডের ‘মদের গলি' হয়েছে সারদা পল্লী, ‘পিতলপাড়া' আর ‘মারোয়াড়ি বাগান' হয়ে যায় বিবেকানন্দ পল্লী ও রামকৃষ্ণ পল্লী৷ পুরকর্তারা দাবি করেন, বস্তির হাল অনেকটাই ফিরেছে৷ তাঁরা পূর্ব কলকাতার হাটগাছিয়ার বস্তিকে দেশের প্রথম মডেল বস্তি হিসেবে তুলে ধরেছেন৷ কিন্তু অভিযোগ, বস্তির উন্নয়ন নিয়ে রাজ্যের কোনো নীতি নেই, আইনও নেই৷

পরিকাঠামোগত সমস্যা

বরাবরই বস্তি নিয়ে পরিকাঠামো সংক্রান্ত অভিযোগ ওঠে৷ জল, বিদ্যুৎ, নিকাশি, স্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে কতটা পরিষেবা পান এখানকার বাসিন্দারা? পরিসংখ্যান বলছে, শহরের তিন হাজারেরও বেশি বস্তিতে ১৮ লাখ মানুষ বাস করেন৷ এমন বস্তিও আছে যেখানে ১০-১২ জনে মিলে একটা ২৫০ বর্গফুটের ঘরে থাকেন৷ এক একটা বড় বস্তিতে ১০ হাজারের বেশি মানুষ থাকেন৷ ২৫-৩০ জন মিলে একটা শৌচালয় ব্যবহার করেন৷ ৬০০-৭০০ বস্তিবাসী রাস্তার ধারে একটা জলের কলের উপর নির্ভরশীল৷ যে কারণে অতিমারীতেও দূরত্ব বিধি সঠিকভাবে মানা যায় না৷ ঘটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও৷ স্বাভাবিকভাবে গত ১০ বছরে বাসন্তী কলোনি, ট্যাংরা, তিলজলা, কালিকাপুর, পার্ক সার্কাস, বাগবাজার, মানিকতলায় রুটিনমাফিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ 

‘উন্নয়ন কাজ যথেষ্ট হয়েছে’

কী চাহিদা বস্তিবাসীদের?

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মহেশতলার সন্তোষপুর ষোলোবিঘা বস্তির বাসিন্দাদের রাস্তা, বিদ্যুৎ, জল আর একটা স্কুল চাহিদার তালিকায়৷ এ বস্তির বাসিন্দা, ৪৪ বছরের প্রাণতোষ মণ্ডল (নাম পরিবর্তিত) ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের এলাকা বছরে ন’মাস জলে ডুবে থাকে৷ বিধায়ককে সমস্যার কথা বললে তিনি নগরোন্নয়ন মন্ত্রীকে বলতে বলেন৷ ফলে আমাদের কষ্ট নিয়েই থাকতে হয়৷’’ প্রাণতোষ ১২ টাকা ইউনিটে বিদ্যুৎ ভাড়া নিয়ে থাকেন স্থায়ী বাসিন্দাদের কাছ থেকে৷ সাত-আট হাজার লোকের এই বস্তিতে তার মতো স্বল্প আয়ের লোকেরাই থাকেন৷ রাজমিস্ত্রি, দর্জি, রিকশাচালক, পাতকুয়ো মিস্ত্রি, জরি শ্রমিকের কাজ করেন তারা৷ এখানকার এক বাসিন্দার বলেন, ‘‘আমরা ভোট দিই৷ মিটিং-মিছিল করলে যেতে হয়৷ কিন্তু অনেক সমস্যা থেকেই যায়৷’’ এখানকার বস্তিবাসীদের অভিযোগ, পানীয় জলের জন্য বাড়ির মেয়েদের দূরে যেতে হয়৷ শৌচালয় প্রায় না থাকারই সমান৷ বৃষ্টি হলে বর্জ্য আর জলে ভাসমান রাস্তা দিয়েই মানুষকে যাতায়াত করতে হয়৷ অগ্নিকাণ্ডের নির্শম শিকার শিশুরাও৷ এছাড়া বস্তিবাসীদের জন্য বরাদ্দ ফ্ল্যাট নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে বলেও অভিযোগ আছে৷ যদিও এ বিষয়ে স্থানীয় বিধায়ক দুলাল দাস কোনোমন্তব্য করতে চাননি৷

‘বড় সমস্যা শৌচাগার আর পানীয় জলের’

প্রধানমন্ত্রী বাংলায় এসে বস্তিবাসীর উন্নতির কথা বলেছেন৷ বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা বস্তিকে গুরুত্ব দিতে বলেছেন৷ তবু অবস্থা বদলায় না৷ দলিত ও সংখ্যালঘু উন্নয়ন পরিষদের তরফে ষোলোবিঘায় রাস্তা উঁচু করার কাজ হয়েছে৷ পরিষদের জাতীয় যুব সভাপতি সাবির আলি মল্লিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা পুরোপুরিই আমাদের সামান্য সামর্থ্যে কাজ৷ এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেওয়া হয়েছে৷ শ্রমিক কার্ড দেওয়া হবে৷’’

অন্যান্য বস্তির হাল

কলকাতার বস্তিগুলোর কি কমবেশি একই হাল? কাশীপুর-বেলগাছিয়া বিধানসভার বিদায়ী বিধায়ক মালা সাহা বলেন, ‘‘উন্নয়নের কাজ যথেষ্ট হয়েছে৷ বেলগাছিয়া বস্তিতে অধিকাংশ বাড়িই পাকা৷ যারা জবরদখল করেন, তাঁদেরই বাঁশ, দরমা, ত্রিপলের ঝুপড়ি৷’’ মানিকতলা বস্তি ঘুরে উন্নয়নের চিহ্নমাত্র পাননি বিজেপি প্রার্থী ও জাতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন গোলরক্ষক কল্যাণ চৌবে৷ তিনি বলেন, ‘‘মানিকতলা বিধানসভায় ৪৩টি বস্তি রয়েছে৷ সবচেয়ে বড় সমস্যা শৌচাগার আর পানীয় জলের৷ বাসিন্দারা ছোট ছোট পাত্রে জল জমা করেন, যা বয়ে আনতে পারে ডেঙ্গি৷’’ এছাড়াও রয়েছে উচ্ছেদের সমস্যা৷ দিন কয়েক আগে দমদম ক্যান্টনমেন্টে মেট্রো রেলের জমিতে গড়ে ওঠা বস্তি ঘিরে ধুন্ধুমার হয়৷ মুখ্যমন্ত্রী ভোটের প্রতিশ্রুতিতে বলেছেন, রাজ্যে ২ লক্ষ ৭৯ হাজার পাট্টা দেওয়া হবে৷ দমদমের সিপিএম প্রার্থী পলাশ দাসের বক্তব্য, ‘‘বস্তিবাসীর স্বার্থে এই সরকার কিছুই করেনি৷ রাজ্য সরকার পাট্টা ইস্যুর যে কথা বলছে, সেটা পুরো মিথ্যে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য