1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক ব্যবহার করবে মালাউয়ি

২৫ এপ্রিল ২০১৯

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক ব্যবহার শুরু করতে যাচ্ছে আফ্রিকার দেশ মালাউয়ি৷ মশাবাহিত এই রোগ প্রতিরোধে একমাত্র অনুমোদিত ভ্যাকসিন তারা প্রয়োগ করবে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷

https://p.dw.com/p/3HP2v
Medizin Forschung l Weltweit erste Malaria-Impfkampagne l Impfstoff
ছবি: picture alliance/dpa/K.-J. Hildenbrand

মালাউয়ির এক তৃতীয়াংশ শিশুকে এই টিকা দেয়া হবে, যারা ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কম ঝুঁকিতে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে বিশ্বে প্রতিবছর ৪৩৫,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়৷ যার বেশিরভাগই আফ্রিকার ৫ বছরের কমবয়সি শিশু৷

‘‘এটি একটি অসম্পূর্ণ টিকা, তারপরও কয়েক লাখ মানুষের জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনা রয়েছে,'' বলে জানিয়েছেন লিভারপুল স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের জীববিজ্ঞানের প্রধান অ্যালিস্টার ক্রেইগ৷ এই পরীক্ষা কিংবা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই৷ তিনি মনে করেন, ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হওয়ার প্রধান মরসুমে এই প্রতিষেধক ব্যবহারে কয়েক লাখ শিশু অসুস্থ হওয়া কিংবা মারা যাওয়ার হাত রক্ষা পেতে পারে৷ 

‘মসকুইরিক্স' নামের টিকাটি উদ্ভাবন করেছে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন বা জিএসকে৷ ২০১৫ সালে ‘ইউরোপিয়ান মেডিসিন অ্যাজেন্সি' এর অনুমোদন দিয়েছে৷ একটি পরীক্ষায় শিশুদের উপর ৪ বার প্রয়োগে এর ৩০ ভাগ কার্যকারিতার প্রমাণ মিলেছে৷ কিন্তু সময়ের সাথে আবার এর কার্যকারিতা কমে যাওয়ার প্রবণতাও আছে৷ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ব্যথা, জ্বর এবং খিঁচুনি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তিনটি দেশে প্রতিবছর ৩৬০,০০০ শিশুর উপর এই টিকা প্রয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বলে জানিয়েছেন ম্যালেরিয়া প্রকল্পের পরিচালক পেদ্রো অ্যালোনসো৷ টিকাটি অবমুক্ত করার ঘটনাকে ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি৷ বলেন, ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের তুলনায় এই রোগ বহনকারী পরজীবীটির প্রতিষেধকের আবিষ্কার অনেক কঠিন ছিল৷

তবে টিকাটিতে কিছুটা ত্রুটি থাকলেও আরও ভালো কিছুর জন্য আপাতত অপেক্ষার সময় নেই বলে উল্লেখ করেন পেদ্রো৷ ‘‘আমরা জানিনা পরবর্তী প্রতিষেধকটি কবে নাগাদ উদ্ভাবন করা সম্ভব৷ হয়তো তার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষায় থাকতে হবে,'' বলেন তিনি৷   

জিএসকে এবং তার সহযোগীরা ৩০ বছরের প্রচেষ্টায় প্রায় ১০০ কোটি ডলার খরচ করে টিকাটি উদ্ভাবন করেছে৷ চলমান প্রকল্পে তারা ১ কোটি টিকা বিনামূল্যে সরবরাহ করছে৷ পরবর্তীতে বড় ধরণের প্রকল্পের মাধ্যমে বিনিয়োগকৃত অর্থ তুলে আনার পরিকল্পনা চলছে বলে জানিয়েছেন জিএসকের একজন মুখপাত্র৷

সিঙ্গাপুরে মশা তাড়ানোর অভিযান

তবে এই টিকার অর্থায়ন করতে গিয়ে মশারি কিংবা কীটনাশক ব্যবহারের মতো কম খরুচে এবং ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের প্রমাণিত উপায়গুলো সরবরাহে সরকারি ব্যয় যাতে কমে না যায়, সে বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন কয়েকজন বিশেষজ্ঞ৷ ইমপেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনের ম্যালেরিয়া বিশেষজ্ঞ  থমাস চার্চার বলেন, এটা সাহসি পদক্ষেপ, কিন্তু লড়াইয়ের একমাত্র কার্যকরী অস্ত্র নয়৷ তিনি মনে করেন ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে টিকার পাশাপাশি নতুন কীটনাশক উদ্ভাবনও জরুরি৷ 

চ্যালেঞ্জও আছে

টিকা প্রদানের কাজটি খুব একটা সহজ হবে না, বলে মনে করেন ক্রেইগ৷ সময়মত টিকা দিতে নিয়ে আসার জন্য শিশুদের বাবা-মাকে উদ্বুদ্ধ করাটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলেই জানান তিনি৷

তাঁর এই কথার প্রমাণ মিলছে জাতিসংঘের আরেক সংস্থা ইউনিসেফের সোমবারের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে৷ সংস্থাটি বলছে ২০১০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় ১৭ কোটি শিশু হামের টিকার প্রথম ডোজ থেকে বঞ্চিত হয়েছে৷ অর্থাৎ গড়ে ২ কোটির বেশি শিশু বছরে এই টিকা পাচ্ছে না৷ উচ্চআয়ের দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি ২৫,৯৩,০০০ শিশু টিকাটি থেকে বঞ্চিত হয়েছে৷ 

ম্যালেরিয়ার টিকা তৈরিতে জার্মানদের সাফল্য

সংক্রামক এই রোগটি প্রতিরোধে মোট দুটি টিকার প্রয়োজন হয়৷ কিন্তু সেটি ঠিকমত না দেয়াতে হাম প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে উল্লেখ করেছে ইউনিসেফ৷

বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া

একটা সময়ে বাংলাদেশে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ থাকলেও সময়ের সাথে তা এখন অনেকটাই কমে এসেছে৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব দিয়ে ‘ঢাকা ট্রিবিউন' জানিয়েছে, ২০১৮ সালে ১৩টি জেলায় ১০,৫২৩ জন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর খোঁজ পাওয়া গেছে, যা ২০১৫ সালে ছিল ৩৯,৭১৯ জন৷ এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ৩৫,৯৬৮ থেকে ৯,৫৪০-তে নেমে এসেছে৷ কুড়িগ্রাম এবং শেরপুর প্রায় ম্যালেরিয়া মুক্ত হওয়ার পথে৷ গত বছর এই দুই জেলায় মাত্র দুইজন আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে৷

২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ম্যালেরিয়া মুক্ত করার লক্ষ নির্ধারণ করেছে সরকার৷ পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে ৫৯টি জেলা ম্যালেরিয়া মুক্ত হবে৷ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে ২০২৫ সালে আর পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া দূর করার পরিকল্পনা সরকারের৷

এফএস/জেডএইচ (এপি, ঢাকা ট্রিবিউন)