1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রবাসী নারীদের ফোন ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে

ডয়চে ভেলের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলাম মূলত রাজনীতি, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, শরণার্থী এবং অভিবাসন সম্পর্কিত ইস্যু কভার করেন৷ পাশাপাশি জার্মানি ও ইউরোপে জীবনযাপনের নানা দিকও তুলে ধরেন তিনি৷
আরাফাতুল ইসলাম
২৯ নভেম্বর ২০১৯

সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা ভিডিওতে জানিয়ে দেশে ফিরতে পেরেছেন আরেক নারী৷ এই নিয়ে একাধিক নারী এভাবে ফিরতে পেরেছেন দেশে৷ আরো অনেকে ফেরার আগ্রহ জানিয়েছেন ভিডিওতে৷ বিষয়টি যেমন আশাবাদী করে, তেমনি উদ্বেগও জাগায়৷

https://p.dw.com/p/3Tw6a
Bangladesch Dhaka Arbeiterinnen kehhren aus Saudi-Arabien zurück
ফাইল ফটোছবি: DW/S. Hossain

গত জুনের কথা৷ বন শহরে এইচঅ্যান্ডএমের একটি দোকানে কেনাকাটা করছিলাম৷ হঠাৎ বোরকা পরা এক ভদ্রমহিলার দিকে চোখ গেল৷ মধ্যপ্রাচ্যের এক পরিবারের দুই সন্তানকে সামলাচ্ছিলেন তিনি৷ কিন্তু চেহারা দেখে মনে হলো বাংলাদেশি

মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকদের দুরবস্থার কথা মাঝেমাঝেই শুনি৷ মনে মনে ইচ্ছাও আছে এরকম কারো সাক্ষাৎকার নেয়ার৷ তাই সুযোগ পেয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম৷ বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মী হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে এসেছেন তিনি৷ সেখানে যে পরিবারে তিনি কাজ করেন, সেই পরিবারের সদস্যরা জার্মানিতে এসেছেন চিকিৎসার জন্য৷ তাদের সঙ্গে করে বাংলাদেশি সেই নারীকেও তারা নিয়ে এসেছেন৷ 

মধ্যপ্রাচ্যে নারী শ্রমিকদের জীবন কেমন, সেটা তাঁর কাছ থেকে জানার চেষ্টা করেছিলাম৷ কিন্তু তাঁর হাতে সময় বেশি ছিল না৷ বললাম, মোবাইলে কথা বলা যেতে পারে৷ তিনি একটি নম্বর লিখে নিতে বললেন৷ আমার কার্ডও নিলেন৷ পাশাপাশি জানালেন, ফোনটা তাঁর সঙ্গে নেই৷ জার্মানিতে আনতে পারেননি৷ তবে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে যদি সুযোগ পান, যোগাযোগ করবেন৷

সেই নারীর সঙ্গে অল্প সময়ের আলাপচারিতায় বুঝতে পেরেছি যে তাঁর বলার অনেক কিছুই আছে৷ কিন্তু মন খুলে কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে তিনি নেই৷ আর পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ খুঁজছেন তিনি৷

সেই নারীর সঙ্গে পরে আর যোগাযোগ হয়নি৷ ফলে তিনি পরবর্তীতে ফোন ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছেন কিনা জানা হয়নি৷ তবে গত কয়েক সপ্তাহের কয়েকটি ঘটনায় দেখেছি সৌদি আরবে শ্রমিক হিসেবে যাওয়া একাধিক বাংলাদেশি নারী ফোনের মাধ্যমে নির্যাতনের কথা জানাতে পারায় দেশে ফিরতে পেরেছেন৷ আরো কয়েকজন ফেরার আগ্রহ দেখিয়েছেন৷

সৌদি আরবে কাজ করতে যাওয়া প্রবাসী নারীরা নিয়মিত দেশে থাকা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের কতটা সুযোগ পান আমার জানা নেই৷ তাদের প্রকাশিত যে ভিডিওগুলো দেখেছি, তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট, তা হচ্ছে, লুকিয়ে ভিডিও করে নির্যাতনের কথা জানাতে হয়েছে তাদের৷ আর এ থেকে পরিষ্কার, যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ফোন ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে বিধিনিষেধ রয়েছে৷

আমি মনে করি, সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীরা যাতে সপ্তাহে অন্তত একদিন এক ঘণ্টার জন্য ভিডিও কলের মাধ্যমে দেশে থাকা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করা দরকার৷ এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ নেয়া জরুরি৷ শ্রমিক পাঠানোর শর্তাবলীতে ভিডিও কলের বিষয়টি জুড়ে দেয়া যেতে পারে৷ সেক্ষেত্রে যদি কোনো নারী কোনো সপ্তাহে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ না করেন, তাহলে তাঁর অবস্থা জানার জন্য কর্তৃপক্ষের সহায়তা নেয়ার পথ সুগম হবে৷ আর এতে করে নির্যাতন বা অন্য কোনো সমস্যার মধ্যে কেউ থাকলে তিনিও সহজে সাহায্যের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন৷ 

Arafatul Islam Kommentarbild App
আরাফাতুল ইসলাম, ডয়চে ভেলে

খেয়াল রাখতে হবে, ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে প্রবাসী নারী শ্রমিকদের দেশে ফেরার কথা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক আকারে প্রচার হয়েছে৷ ফলে ভবিষ্যতে হয়ত অনেক সৌদি পরিবারে থাকা প্রবাসী নারীদের পক্ষে ফোন ব্যবহার আরো দুরূহ হয়ে পড়বে৷ এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের সক্রিয়তা তাই জরুরি৷

আরো একটি বিষয় আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়৷ তা হচ্ছে, সৌদি আরবে কোনো নারীকে গৃহকর্মী হিসেবে পাঠানোর আগে বাংলাদেশে তাদের অন্তত ছয় মাসের একটি প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে৷ সেই প্রশিক্ষণে আরবি ভাষা শেখানোর পাশাপাশি সৌদি রান্নাবান্না এবং সৌদি সমাজ সম্পর্কে তাদের ধারণা দেয়া যেতে পারে৷ একইসঙ্গে বিপদে পড়লে সহায়তা পাওয়ার উপায়গুলো সম্পর্কেও তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে৷ এতে করে সেদেশে তাদের জীবন আরো নিরাপদ হবে বলে আমার বিশ্বাস৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷