1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রান্তিক নারীদের হাতিয়ার কোডিং

৯ জুন ২০১৭

দারিদ্র, হতাশা তরুণ প্রজন্মকে বিপথে ঠেলে দিতে পারে৷ দক্ষিণ আফ্রিকার এক নারী সপরিবারে এমন তরুণ-তরুণীদের কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখিয়ে আশার আলো দেবার উদ্যোগ নিয়েছেন৷ তাঁর অভিনব কর্মসূচির ফলও পাওয়া যাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/2eN7P
ছবি: DW

দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন শহরের উপকণ্ঠে ভোর ৬টা নাগাদ মিয়া পরিবার প্রাতরাশ সারছে৷ ব্যস্ততার কারণে সকলকে একসঙ্গে পাওয়া যায় না৷ পরিবারের সব সদস্য প্রায় সব সময় অনলাইন থাকে – এমনকি খাওয়াদাওয়ার সময়েও৷ অন্য কোনো পরিবারের বাবা-মা সাধারণত এমনটা পছন্দ করেন না৷ তবে বারাটাং মিয়া-র কাছে এটা দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পরিবার প্রযুক্তির বড় ভক্ত৷ টেলিফোন ছাড়া আমি বাঁচতেই পারি না৷ গুগল-এর মাধ্যমে পরিবারের কথাবার্তা হয়৷''

বারাটাং মিয়া প্রযুক্তি ছাড়া সত্যি বাঁচতে পারেন না৷ তিনি ‘গার্লহাইপ' সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা৷ ‘গার্লহাইপ' দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখায়৷ বারাটাং-এর সবচেয়ে ছোট মেয়ে টাটো এখনো স্কুলে যায়৷ পরিবারের বাকি সদস্যরা এই সংগঠনের জন্য কাজ করে৷ কেপটাউনে সৃজনশীল মানুষদের পাড়া উডসস্টক-এ সংগঠনের দপ্তর৷ বারাটাং-এর আরেক কন্যা টোকো মায়ের সঙ্গে মিটিং-এর জন্য প্রস্তুত৷ ‘গার্লহাইপ'-এর শিক্ষা কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ আরও বেশি নারীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত পেশায় যোগ দিতে উৎসাহ দেওয়া এই সংগঠনের লক্ষ্য৷ বারাটাং মিয়া প্রোগ্রামিং নিয়ে কথা বললেই উৎসাহে মেতে ওঠেন৷ তিনি বলেন, ‘‘মাত্র এক ঘণ্টায় আমাকে কোডিং শেখানো হয়েছিল৷ মুগ্ধ হয়ে তখন বুঝেছিলাম সবার, প্রত্যেক শিশুর এটা শেখা উচিত৷ নারীবাদী হিসেবে মনে হয়েছিলো, এ ক্ষেত্রে নারীদের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত৷''

বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা শেষ করে ২০০৩ সালে বারাটাং মিয়া ‘গার্লহাইপ' প্রতিষ্ঠা করেন৷ নিজের মেয়ে টোকো প্রথম ছাত্রীদের মধ্যে ছিল৷ ১০ বছর ধরে সে তার মাকে প্রশিক্ষণের কাজে সাহায্য করে আসছে৷ সে বলে, ‘‘১১ বছর বয়সে আমি প্রথম ওয়েবসাইট কোড করেছিলাম৷ সেটা ছিল এইচটিএমএল৷ তখনই নেশা হয়ে গেল৷ তখন থেকেই সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছি৷''

এর মধ্যে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করছে৷ একইসঙ্গে ‘গার্লহাইপ' সংগঠনের দূত ও পরিচালকের দায়িত্বও সামলাচ্ছে৷ গোটা পরিবার এই উদ্যোগে শামিল হয়েছে৷ এমনকি বারাটাং-এর ছেলে লেবো-ও সেখানে কাজ করে৷ ১৬ বছর বয়সে সে স্কুল ত্যাগ করে৷ তার মা তাকে বাড়িতেই পড়াতেন৷ আজ সে সফটওয়্যার ডেভেলাপার হয়ে উঠেছে এবং নিজের শিক্ষাকেন্দ্রে সে প্রোগ্রামিং শেখায়৷ বিভিন্ন টাউনশিপে বেকার যুবক-যুবতীদের শিক্ষা দেয় সে৷

লেবো আজ মা আর বোনের তৈরি নতুন খসড়া নিয়ে সন্তুষ্ট নয়৷ তবে সবে পেশার সঙ্গে পরিবারের প্রতি আবেগ আলাদা রাখতে শিখেছে৷ একাসি কোড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সে বলে, ‘‘কাজ সংক্রান্ত বিষয় আমি ঘরে আনি না৷ বাড়িতে সে আমার মা৷ মায়ের মতো অনেক আচরণের কারণে আমি তার উপর রাগ করি, যেমনটা স্বাভাবিক৷ কাজের জায়গায় কাজের সম্পর্ক থাকে৷''

দুপুরের দিকে বারাটাং শহর ছেড়ে ফিলিপি টাউনশিপে যান৷ সেখানে কমিউনিটি সেন্টারে পড়ান তিনি৷ ‘গার্লহাইপ' ৬টি স্কুলে দুপুরে প্রোগ্রামিং-এর ক্লাস আয়োজন করে৷ চাঁদা ও প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা হয়৷ বছরে গড়ে প্রায় ৫০০ তরুণী প্রোগ্রামিং শেখেন৷ আজ বারাটাং মিয়া এইচটিএমএল শেখাচ্ছেন৷ তিনি মেয়েদের সামনে আরও সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে চান৷ তবে কাজটা সবসময় সহজ নয়৷ বারাটাং মিয়া বলেন, ‘‘মেয়েদের সবসময়ে বোঝাতে হয়, যে কোডিং তাদের জীবন বদলে দেবে৷ কারণ এখনো যথেষ্ট সংখ্যক ‘রোল মডেল' নেই, দ্রুত ফলাফলের আশাও নেই৷''

বারাটাং মিয়া প্রকৃতির কোলে থাকতে খুব ভালবাসেন৷ সেখানে তিনি আধ্যাত্মিক ভারসাম্য খুঁজে পান৷ ২০২০ সালের মধ্যে তিনি দু'লাখ মেয়েকে প্রোগ্রামিং শেখানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন৷

ইয়ুলিয়া ইয়াকি/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান