1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রিয়জনের চোখে সাকিব

আবু সাদাত
১ নভেম্বর ২০১৯

সাকিব ‘শূন্যতায়’ ভুগছে বাংলাদেশের ক্রিকেট৷ সেই শূন্যতা এতোটাই বিশাল যে, গত ১২ দিন দেশে আলোচনা এবং সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সাকিব আল হাসান৷ শুরুটা, ২১ অক্টোবর ক্রিকেটারদের আচমকা ১১ দফা দাবির আন্দোলনের মধ্য দিয়ে৷

https://p.dw.com/p/3SKZ6
ছবি: Getty Images/AFP/G. Guercia

নাটকীয় নানা ঘটনার পর, তিন দিনেই শেষ হয় ক্রিকেটারদের সেই আন্দোলন৷ কিন্তু গুমোট ভাবটা রয়েই যায়৷ জাতীয় দলের ক্যাম্পে সাকিবের অনুপস্থিতি জন্ম দেয় নতুন প্রশ্নের৷ ডালপালা মেলতে থাকে নানা রকম শংকা৷ কিন্তু সেই শংকা যে এতোবড় হবে, তা ঘুনাক্ষরেও ভাবতে পারেননি দেশের ক্রিকেটামোদীরা৷

সবাইকে অবাক করে, দুই বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হন সাকিব আল হাসান৷ শুধুমাত্র তথ্য গোপনের কারণে আইসিসির দেয়া এমন শাস্তি হতবাক করে সাকিবের সতীর্থ, সাবেক ক্রিকেটার, সংগঠক থেকে শুরু করে সাধারন ক্রিকেটপ্রেমীদের৷

‘‘সাকিবের বিকল্প এই মুহূর্তে বাংলাদেশে নেই’’

২২ অক্টোবর নাজমুল হাসান পাপনের সেই জ্বালাময়ী সংবাদ সম্মেলন থেকে পাওয়া ইঙ্গিতের কারণেই কিনা সাকিবের এই নিষেধাজ্ঞায় বিসিবির মদদ থাকতে পারে বলে সাকিব ভক্তদের ধারনা৷ তাইতো পাপনের পদত্যাগ দাবীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল-মিটিংও করেছেন শিক্ষার্থীরা৷ আর সাকিবের নিজের জেলা মাগুড়ায় মানব বন্ধন করে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে আইসিসির প্রতি আহবান জানান তার এলাকাবাসী৷

এ নিয়ে কথা হয় সাকিবের ফুপাতো ভাই ও সাবেক জাতীয় ফুটবলার মেহেদী হাসান উজ্জ্বলের সঙ্গে৷ তিনি বলেন, সাকিবের এই নিষেধাজ্ঞায় মুষড়ে পড়েছি আমরা৷ বিশেষ করে ওর মা৷ ছেলের এমন খবরে রীতিমতো ভেঙ্গে পড়েছেন৷ তবে সাকিবের বাবার মন খারাপ থাকলেও, মানসিকভাবে শক্ত আছেন৷

সাকিব এখন ঢাকাতে৷ তবে ফোনে প্রতিদিনই বাবা-মার সঙ্গে কথা বলছেন বলে জানান তার ফুপাতো ভাই৷ আইসিসির এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নতুন করে মিছিল মিটিং কেউ যেন না করে, সে বিষয়ে বাবাকে অনুরোধ করেছেন সাকিব৷

মেহেদী হাসান উজ্জ্বল বলেন, সাকিবের পরিবারে আমরা যারা আছি তাদের এখন মন খারাপ থাকলেও, সবার বিশ্বাস সেরা ফর্ম নিয়েই জাতীয় দলে ফিরবেন সাকিব৷ ছোট বেলা থেকেই ওকে (সাকিব) দেখছি তো, মানসিকভাবে ভীষন শক্তিশালী৷ গতকাল বিকেলে উজ্জলের সঙ্গে এক আলাপ চারিতায় সাকিবের বাবা তাঁর মনে জমে থাকা এক স্বপ্নের কথা বলেন এভাবে, ‘‘দেখবি, সাকিব সাকিব হয়েই ফিরবে৷ আর আল্লাহ যদি সুস্থ রাখেন তবে ২০২৩ সালের বিশ্বকাপে ওর নেতৃত্বেই ফাইনাল খেলবে বাংলাদেশ৷'' 

সাকিবের এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কথা হয় তাঁর ক্রিকেট গুরু নাজমুল আবেদিন ফাহিমের সঙ্গে৷ তিনি বলেন, সাকিব এমন একজন খেলোয়াড়, যিনি দলে থাকলে দলটা ১১ জনের নয়, হয়ে যায় ১২ জনের৷ কারণ তিনি ব্যাটিং এবং বোলিং দুটোতেই সমান পারদর্শী৷ ও না থাকায় আগামী এক বছর বাংলাদেশকে তাই ১১ জন নিয়েই খেলতে হবে৷ আর সাকিবের বিকল্প এই মুহূর্তে বাংলাদেশে নেই

আইসিসির সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলতে চান না সাকিবসহ বাংলাদেশের বেশীরভাগ ক্রিকেটারের মেনটর হিসেবে পরিচিত বিকেএসপির এই ক্রিকেট কোচ৷ তবে, এই অপরাধে এতবড় শাস্তি শুধু একজন ক্রিকেটারের জন্য নয়, গোটা ক্রিকেটের জন্যই ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেন নাজমুল আবেদিন ফাহিম৷

সাকিবের এই ঘটনা থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের শিক্ষা নেয়া উচিত বলে মনে করেন ফাহিম৷ তিনি বলেন, আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে কিন্তু প্রতিবছরই ম্যাচ পাতানো বিষয়ে নানারকম কথা শোনা যায়৷ বিশেষ করে, খেলার আগেই খেলোয়াড়রা জেনে যান ম্যাচের ফলাফল৷ তরুণ ক্রিকেটারদের এই যে অনৈতিক বিষয়গুলোর পরিচয় করিয়ে দেন কর্মকর্তারা৷ সেই শিক্ষাটা কিন্তু তার মধ্যে রয়েই যায়৷ তাই এ বিষয়টিতে আরো বেশি সতর্ক এবং নজড় দিতে হবে বিসিবিকে৷

সাকিব সম্পর্কে নাজমুল আবেদিন আরো বলেন, দেখুন ক্রিকেটই তো জীবনের সবকিছু নয়৷ ও এরই মধ্যে দশ বারো বছর সেরা ক্রিকেটার হিসেবেই দলে খেলছে৷ নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে আরো তিন চার বছর খেলবে৷ তবে, এখান থেকে সাকিব অনেক কিছু শিখবে৷ যেটা ও কাজে লাগাবে দেশের ক্রিকেট উন্নয়নে৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷