1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফলিত বিজ্ঞানের লালনকেন্দ্র বন-রাইন-জিগ বিশ্ববিদ্যালয়

১৯ এপ্রিল ২০১০

জার্মানির বিখ্যাত নদী রাইন বিধৌত জিগবুর্গ, জাঙ্কট আউগুস্টিনসহ কয়েকটি শহর জুড়ে বিস্তৃত বন-রাইন-জিগ বিশ্ববিদ্যালয়৷ ফলিত বিজ্ঞানের ২৪টি শাখায় প্রায়োগিক শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়৷

https://p.dw.com/p/N01w
বন-রাইন-জিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো

প্রতি বছরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে ছুটে আসছে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় উচ্চ শিক্ষার জন্য৷

জার্মান ইতিহাসের সাথেই জড়িয়ে রয়েছে বন-রাইন-জিগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস৷ বলছি বন-রাইন-জিগ ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস এর কথা৷ এর ক্যাম্পাস জুড়ে রয়েছে হেনেফ, রাইনবাখ এবং জাঙ্কট আউগুস্টিন, তিনটি শহরে৷

১৯৯০ সালে পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানির মিলন হলে গোটা জার্মানির রাজধানী করা হয় বার্লিনকে৷ ফলে সাবেক পশ্চিম জার্মানির রাজধানী বন হারাতে যাচ্ছিল আগের সব গুরুত্ব আর ঐতিহ্য৷ কেননা বন থেকে বার্লিনে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল অধিকাংশ সরকারি দপ্তর৷ এই প্রেক্ষিতে বনের জৌলুস ধরে রাখতেই ১৯৯৪ সালে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয় দেশটির সাবেক দুই অংশের নেতৃবৃন্দের মধ্যে৷ চুক্তি অনুযায়ী, বনের মান এবং অর্থনৈতিক ধারা অব্যাহত রাখতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার ঘোষণা দেওয়া হয়৷ এসব পদক্ষেপের অন্যতম হচ্ছে ফলিত বিজ্ঞান বিষয়ক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা৷ ১৯৯৫ সালে শুরু হয় তার পথ চলা৷

১৯৯৯ সালের গ্রীষ্মে প্রথমবারের মতো ২৬ জন স্নাতক ছাত্র-ছাত্রী এই শিক্ষায়তন থেকে জার্মান এফএইচ-ডিপ্লোম ডিগ্রি লাভ করেন৷ বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে পাঁচ হাজারেরও বেশি৷ এদের মধ্যে ১২ শতাংশই জার্মানির বাইরে থেকে আসা আন্তর্জাতিক ছাত্র-ছাত্রী৷ রয়েছেন ১২০ জন অধ্যাপক এবং প্রভাষক ২৮০ জন৷ প্রশাসনিক দপ্তর, গ্রন্থাগার এবং ভাষা কেন্দ্রের বিভিন্ন দপ্তরে কাজ করছেন ১২০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী৷ আর রাইন-জিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে বিশ্বের প্রায় ৩০ টি দেশের মোট ৫০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক৷

এই স্বনামধন্য শিক্ষায়তনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শুধুমাত্র চাকরি খোঁজা কিংবা চাকরি পাওয়ার উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হয় না, বরং তারা নিজেরাই যেন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে সেই শিক্ষাই দেওয়া হয় তাদেরকে৷ আরেকটু সহজ করে বলা যায়, বিজ্ঞানের প্রায়োগিক দিকটিই সবচেয়ে বেশি করে তুলে ধরা হয় এখানে৷ যাতে করে, লেখা-পড়া শেষ করেই ছাত্র-ছাত্রীরা গড়ে তুলতে পারে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান৷ অর্থাৎ পুরোপুরি কর্মমুখী এবং উদ্যোক্তা গড়ে তোলার শিক্ষা দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল লক্ষ্য৷

International Media Studies Studierende des Masterprogramms
বিশ্ববিদ্যালয়টির ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের একাংশ (ফাইল ছবি)ছবি: DW

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরম্যাটিক ডিপার্টমেন্টে পড়েন বাংলাদেশি ছাত্র হাসান আল বান্না৷ কোন ধরণের বৃত্তি ছাড়াই নিজের খরচে তিনি লেখাপড়া করছেন বন-রাইন-জিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ তাঁর এই সাহসী অভিযানের পেছনে অনুপ্রেরণা কী ছিল, এই প্রশ্নের উত্তরে হাসান জানান, তাঁর মা এবং চাচার অনুপ্রেরণাই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে তাঁর জার্মানিতে লেখাপড়া করতে আসার ক্ষেত্রে৷

এই বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশেষ করে জার্মানিতে লেখাপড়া করতে আসার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, কম্পিউটার বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষার জন্য জার্মানি অত্যন্ত উপযোগী এবং এখানে শিক্ষা ব্যয়ও তুলনামূলকভাবে বেশ কম৷ জার্মানিতে পড়তে আসার ক্ষেত্রে হাসানকে যে ধরণের সমস্যায় পড়তে হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দেশের অ্যাকাউন্টে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা রাখা৷ বাংলাদেশে মাত্র দু'টি ব্যাংকেই এমন অ্যাকাউন্ট করার সুবিধা আছে, যা জার্মান দূতাবাসের চাহিদার সাথে মেলে৷

হাসানের মন্তব্য, ‘‘জার্মানি আসার পর আমি সবচেয়ে অভিভূত হয়েছি যে, জার্মানরা খুবই হেল্পফুল৷ তীব্র শীতের মধ্যে ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমান বন্দরে পৌঁছে আমি যখন বুঝছিলাম না কোনদিকে এবং কিভাবে যেতে পারি, তখন এক জার্মান ভদ্রলোক ট্রেনের টিকেট করা থেকে কিভাবে কোথায় ট্রেন পেতে পারি সবকিছুই বাতলে দিয়েছেন আমাকে৷''

জার্মানিতে লেখাপড়া করতে ইচ্ছুক বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য হাসানের পরামর্শ, ‘‘কেউ এখানে পড়তে আসতে চাইলে, সরাসরি ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে আবেদন করা উচিত৷'' কোন এজেন্টের সাহায্য নেওয়ার আদৌ কোন প্রয়োজন নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি৷

প্রতিবেদক : হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক