1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফুকুশিমা পারমাণবিক স্থাপনা থেকে পরিবেশ বিপর্যয়

১৫ এপ্রিল ২০১১

ভূমিকম্প ও সুনামি বিধ্বস্ত জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক প্রকল্প থেকে পাম্প করে সাগরে ফেলা হচ্ছে তেজস্ক্রিয় পানি৷ যা পরিবেশের জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকারক৷

https://p.dw.com/p/10tpS
ফুকুশিমা পারমাণবিক স্থাপনাছবি: AP

ভূমিকম্প ও সুনামির পরে ফুকুশিমা পারমাণবিক প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা টোকিও ইলেকট্রিক কোম্পানি বা টেপকো মারাত্মক পারমাণবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কায় পারমাণবিক চুল্লিগুলোকে ঠাণ্ডা করতে সাগরের পানি ঢালতে থাকে৷ পরে তেজস্ক্রিয় পানি পাম্প করে সাগরে ফেলতে থাকে৷ এতে সাগরের পানিতে মারাত্মক তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৭.৫ মিলিয়ন গুণ বেশি৷ তবে এর দুইদিন পরে আবারো তেজস্ক্রিয়তা মেপে দেখা গেছে, পানিতে তেজস্ক্রিয়তার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ মিলিয়ন গুন বেশি৷ অর্থাৎ কিছুটা কমেছে৷

ঘটনার পর থেকেই প্রতিবেশী দেশ চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়া উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে৷ চেরনোবিল পারমাণবিক সঙ্কটের পরে এই প্রথম এইভাবে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানো হচ্ছে৷ চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হং লেই এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘জাপানের প্রতিবেশী দেশ হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই এ ব্যাপারে আমরা আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করছি৷ আমরা আশা করবো জাপান আন্তর্জাতিক আইন মেনে তাদের কাজ করবে এবং সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেবে৷'' তবে টেপকোর বিবৃতিতে বলা হচ্ছে, পরিবেশের ওপরে এই তেজস্ক্রিয় পানি ‘‘তাৎক্ষণিক কোন প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারেনি৷'' তবে সাথে সাথে টেপকো এই কথাও বলেছে যে, যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা ঐ ফাটল বন্ধ করার চেষ্টা করছে৷

সাগরে তেজস্ক্রিয় মিশ্রিত পানি ফেলার ঘটনা নিয়ে সাধারণ মানুষও চিন্তিত৷ জাপানের সাধারণ নাগরিক ইয়োশিয়াকি সাইতো৷ পেশা মাছ ধরা৷ তিনি বললেন,‘‘এটা অত্যন্ত ক্ষতিকারক ব্যাপার৷ সরকারের পক্ষ থেকে যদি স্পষ্ট করে বলা হয়, এটি নিরাপদ, তবেই তা আমাদেরকে এবং আমাদের ভোক্তাদেরকে মাছ খাবার ব্যাপারে নিশ্চয়তা এনে দিতে পারে৷ এটা করে সরকার আমাদেরকে সহায়তা করতে পারে৷ আর আমরা ভোক্তাদের বলতে পারি৷''

এদিকে বলা হচ্ছে, জাপানের ঐ প্রাকৃতিক বিপর্যয় মানবিক এবং অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি করবে আর সাথে সাথে যে অর্থনৈতিক ক্ষতির মোকাবিলা করতে হবে তা প্রায় ৩শ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের৷ বিশ্বে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে এটিই সর্ববৃহৎ ক্ষতি৷ বুধবার বেশ কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোলযোগপূর্ণ পারমাণবিক প্রকল্প থেকে ক্ষতিকারক তেজস্ক্রিয়তাযুক্ত পানি কাছাকাছি একটি জাহাজে তুলে নেয়ার কাজ শুরু করেছে৷ গত ১১ই মার্চ সুনামির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ঐ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পরপর অনেকগুলো বিস্ফোরণ ঘটে৷ এবং আংশিক ‘মেল্টডাউনের' ফলে সেখান থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়াতে শুরু করে৷ ঐ স্থান থেকে অন্তত সাত'শ টন বিষাক্ত পানি সরানো হবে৷ জাপানের প্রধানমন্ত্রী নাওতো কানের এক উপদেষ্টার মতে, তেজস্ক্রিয়তার মূল প্রভাব আগামী ২০ বছর ঐ এলাকায় থাকবে৷

আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি কমিশনের কর্মকর্তা ডেনিস ফ্লোরি ঐ পারমাণবিক দুর্ঘটনা নিয়ে বললেন, ‘‘যে কারিগরি অবস্থার মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা সম্পূর্ণ আলাদা৷ একটা হতে পারে যখন চুল্লিতে পাওয়ার দেওয়া থাকে এবং চুল্লিটি বিস্ফোরিত হয়৷ কিন্তু ফুকুশিমায় চুল্লিটি বন্ধ ছিল৷''

তেজস্ক্রিয় পানি যে ফাটল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সাগরে গিয়ে পড়ছিল, সেটি বন্ধ করতে ‘ওয়াটার গ্লাস' বা সোডিয়াম সিলিকেট ও অন্য একটি রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার হয়েছে বলে পারমাণবিক প্রকল্পের কর্মীরা জানিয়েছেন৷

জাপান বলছে, ফুকুশিমা পারমাণবিক প্রকল্পের কাছাকাছি অঞ্চল থেকে পণ্য উৎপাদনের ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, তার মধ্যে কিছু অঞ্চল থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে৷ তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় ঐ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল৷

সর্বশেষ একটি খবরে জানা গেছে, জাপানে সম্প্রতি বার বার ভূমিকম্পের ফলে এক বিশেষ ধরণের অসুস্থতা দেখা দিয়েছে৷ ১১ই মার্চের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর থেকে শতশত আফ্টারশক বা কম্পনের পরিপ্রেক্ষিতেই একরকম অসুস্থ বোধ করছে মানুষ৷ মাজিরো ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘‘মাথা ঝিম ঝিম করা বা মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ নিয়ে আমাদের কাছে আসা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে৷'' বিশেষজ্ঞরা সেখানে কান, নাক এবং গলা পরীক্ষা করছেন৷ হাসপাতালটির প্রধান চিকিৎসক জানিয়েছেন, ভূমিকম্প অসুস্থতার কারণে এই ধরণের সমস্যাগুলোই দেখা দেয়৷

প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য