1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফের বিক্ষুব্ধ বুদ্ধিজীবীরা

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়
১২ এপ্রিল ২০১৮

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়েই অশান্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ প্রতিবাদে সরব হলেন ক্ষুব্ধ বুদ্ধিজীবীরা, যাঁরা একদিন পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন৷

https://p.dw.com/p/2vvoD
Friedensdemonstration in Kalkuta, Indien
ছবি: DW/S.Bandopadhyay

২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন ওঁরা৷ তার আগে একে একে ঘটে গেছে সিঙ্গুরের কৃষিজমি রক্ষা আন্দোলন, নন্দীগ্রামে রাসায়নিক কারখানাবিরোধী আন্দোলন এবংসেইসব আন্দোলন দমন করতে তখনকার বাম শাসকরা যে কঠোর ভূমিকা নিয়েছিল, তারই প্রতিবাদে ছিল সেই পরিবর্তনের ডাক৷ ওঁদের সবার মুখের ছবি দিয়ে বড় বড় হোর্ডিং পড়েছিল শহরে, গঞ্জে৷ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের বিতর্কে প্রতি সন্ধ্যায় ওঁরা সরব হতেন বাম অপশাসনের অবসান ঘটানোর দাবিতে৷ তখন রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের যে বাম-বিরোধী মনোভাব, তারই প্রতিভূ ছিলেন যেন ওঁরা৷

৭ বছর পর ওঁরাই ফের জনতার দরবারে৷ বুধবার কলকাতার প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে জানালেন, সম্প্রতি পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের যে ব্যাপক সন্ত্রাস, যেভাবে বিরোধী প্রার্থীদের হুমকি দিয়ে, মারধর করে মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হচ্ছে না, তাতে ওঁরা আশঙ্কিত৷ ওঁরা মনে করছেন, গণতন্ত্রের মৌলিক শর্ত ও রীতিনীতি রক্ষিত হচ্ছে না এই সন্ত্রাসের আবহে৷ গায়ক প্রতুল মুখোপাধ্যায়, যাঁকে এই সেদিনও দেখা গেছে তৃণমূল কংগ্রেসের সভামঞ্চে, তিনি উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক সম্মেলনে৷ ছিলেন শিক্ষাবিদ মিরাতুন নাহার, যিনি এই সেদিনও টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে পরিবর্তনের যৌক্তিকতা বোঝাতেন৷

বিভাস চক্রবর্তী

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বুদ্ধিজীবীদের এই বিক্ষোভের কথা জানার পর মন্তব্য করেছেন, ‘‘‌ওঁদের নিশ্চয়ই কেউ ভুল বুঝিয়েছে৷ ওঁদের কাছে সঠিক তথ্য নেই৷ তথ্য দিয়ে ওঁদের বোঝাতে হবে৷''‌ মুখ্যমন্ত্রী তথ্য বলতে এখানে নিশ্চয়ই পরিসংখ্যানের কথা বলেছেন, যা প্রশাসনিকভাবে দেওয়া হচ্ছে যে যতজন তৃণমূল প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, প্রায় ততজন বিরোধী প্রার্থীও নির্বিবাদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন৷ কাজেই সরকারের দাবি, বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দিতে না দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়৷ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী যখন রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রিপোর্ট তলব করেছিলেন, তখন মুখ্য সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিব গিয়ে এই পরিসংখ্যানই তাঁকে দিয়ে আশ্বস্ত করেছিলেন৷ কিন্তু রাজনৈতিক সন্ত্রাস এবং নিগ্রহের ঘটনাও পাশাপাশি ঘটছে, যা আজকের ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে গণমাধ্যম ছাড়াও ছড়িয়ে পড়ছে সোশাল মিডিয়া মারফৎ৷ লোকে সেসব দেখছেন, প্রশ্ন তুলছেন৷

বৃহস্পতিবারের সাংবাদিক সম্মেলনে বুদ্ধিজীবীদের হয়ে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী৷ ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বর্তমান সরকারের ভূমিকায় আপনারা হতাশ, না ক্রুদ্ধ?‌ বিভাসবাবু জানালেন, প্রশ্নটা হতাশ বা ক্রুদ্ধ হওয়ার নয়৷ তার বাইরেও অনেক কিছু আছে৷ যেটা এখন ঘটছে,  পশ্চিমবঙ্গে সেই রাজনৈতিক সন্ত্রাস অনেকদিন ধরেই ঘটে আসছে৷পূর্বতন শাসকও এমন ধারার রাজনীতি করত, হয়ত অন্য কোনও চেহারায়৷ কিন্তু বুদ্ধিজীবীদের খেদ, যেভাবে ন্যায়-নীতি বর্জন করে, সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করার ঘটনা ঘটছে, এটা বাঞ্ছনীয় নয়৷ তাই ওঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উদ্ধারের দাবিতে ওঁরা একটা প্রচার এখন চালিয়ে যাবেন৷

কিন্তু একটা রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রচার করতে গেলে বিকল্প একটা রাজনীতির প্রয়োজন হয়৷ সেক্ষেত্রে ওঁরা কী ভাবছেন?‌ বিভাস চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, ওঁরা কোনও রাজনৈতিক পালাবদল, বা আবার একটা পরিবর্তনের ডাক দিচ্ছেন না৷ কারণ, মানুষের ভোট নিয়েই এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে৷ আবার যখন বদলের সময় আসবে, মানুষই সেটা করবে৷ ঠিক আগেরবার যা হয়েছিল৷ বুদ্ধিজীবীদের কথায় নয়, মানুষ নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকেই সিদ্ধান্ত নেবেন, ভোট দেবেন৷ তবে ওঁদের বিশ্বাস, এখনও মানুষ তৃণমূলকেই ভোট দেবে, তাদেরই ক্ষমতায় রাখবে৷ কিন্তু যে মাত্রাছাড়া সন্ত্রাস চলছে, তা বন্ধ হওয়া দরকার৷