1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বদলের বার্তা পশ্চিমবঙ্গের বাম শিবিরে

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা৯ জুন ২০১৪

অবশেষে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলস্তরের বামপন্থি কর্মীরা৷ প্রকাশ কারাট থেকে শুরু করে রাজ্যস্তরে বুদ্ধ-বিমান, সবার অপসারণ দাবি করেছেন তাঁরা৷

https://p.dw.com/p/1CEJP
পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থি আন্দোলনের ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম নেতৃত্ব বদলের দাবি উঠল!ছবি: DW/P. Tewari

ভারতের মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টি অর্থাৎ সিপিআইএম দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রধান দুই মুখ প্রকাশ কারাট এবং সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থি নেতাদের মতবিরোধ দীর্ঘদিনের৷ সেই যবে থেকে কেন্দ্রে বহুদলীয় জোট সরকারের সর্বসম্মত প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও প্রয়াত জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রিত্বে বাদ সেধেছিলেন এঁরা দুজন৷ তার পর থেকে নানা ইস্যুতে বারবার প্রকাশ হয়ে পড়েছে সিপিএম পলিটব্যুরোর তথাকথিত কারাট লাইনের সঙ্গে মূলত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বেঙ্গল লাইনের তীব্র মতপার্থক্য৷ যদিও সাংগঠনিক শৃঙ্খলাবদ্ধতার কারণে এই বিরোধ কখনও দলীয় কোন্দলের চেহারা নেয়নি৷

কিন্তু এবার সরাসরি কারাট লাইন নিয়ে প্রশ্ন উঠল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর বৈঠকে৷ এই প্রথম জানতে চাওয়া হল, সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তথাকথিত তৃতীয় ফ্রন্ট তৈরির কোনও সম্ভাবনা না থাকা সত্ত্বেও প্রতিবার কেন তৃতীয় শক্তির ধুয়ো তুলে নির্বাচনি লড়াইয়ের অভিমুখ নষ্ট করা হয়! অবশ্য শুধু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নয়, দলের মধ্যে জোরদার বিরোধিতার আওয়াজ উঠল রাজ্য এবং জেলাস্তরের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও, লক্ষ্য হলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বামফ্রন্ট সভাপতি বিমান বসু এবং বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র৷ পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থি আন্দোলনের ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম নেতৃত্ব বদলের দাবি উঠল!

Indien Wahlen Prakash Karat
প্রকাশ কারাটছবি: Dibyanshu SarkarAFP/Getty Images

২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে শোচনীয় হার এবং ৩৪ বছর পর রাজ্যে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর যে ব্যাপক হতাশা ছড়িয়েছিল, তাও সামলে ওঠার চেষ্টা করছিলেন সাধারণ বাম কর্মী-সমর্থকরা৷ কিন্তু সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে বামফ্রন্ট৷ ৪২টি লোকসভা আসনে প্রার্থী দিয়ে মাত্র দুটিতে জিততে পেরেছেন বামপ্রার্থীরা৷ পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে একটা আলোচনা তখন থেকেই শুরু হয়েছিল যে, এমন ভরাডুবির কী কারণ হতে পারে৷ একটা বড় কারণ অবশ্যই এই রাজ্যে বিজেপির রাজনৈতিক জমি পাওয়া৷ ভোটের আগে ধারণা ছিল, বিজেপির ভোট বাড়লে তা আসবে মূলত বামবিরোধী, তথাকথিত দক্ষিণপন্থী ভোটব্যাংক থেকে৷ সুতরাং খারাপ ফল করবে তৃণমূল এবং কংগ্রেস, কিন্তু বাম ভোট অক্ষত থাকবে৷

Westbengalen Wahlen
৪২টি লোকসভা আসনে প্রার্থী দিয়ে মাত্র দুটিতে জিততে পেরেছেন বামপ্রার্থীরাছবি: DW/P. Mani Tewari

কিন্তু কার্যত হল তার ঠিক উল্টো৷ বিজেপির সম্ভাব্য হিন্দুত্ববাদী হুমকির মুখে এই রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিম ভোট সঙ্ঘবদ্ধ হল, না, চিরাচরিত নিয়মে বামপন্থীদের পতাকার নীচে নয়, বরং তৃণমূল কংগ্রেসের শিবিরে৷ অন্যদিকে নিম্নবর্গীয় অনুন্নত শ্রেণির হিন্দুদের যে ভোট বামপন্থীরা এতদিন পেয়ে আসছিল, তা ব্যাপকহারে চলে গেল বিজেপির দিকে৷ ফলে বামেদের ভোটব্যাঙ্কে ধস নামল৷ অথচ ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পরের তিন বছরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এমন কোনও সাফল্যের নজির রাখতে পারেনি, যা তাদের পক্ষে জনসমর্থনকে আরও জোরদার করতে পারত৷ সুতরাং ভোটের ফলে এটাই বরং পরিস্কার হল যে, এ রাজ্যের মানুষের আস্থা এবং বিশ্বাস তো আগেই হারিয়েছিল বামপন্থীরা, এবার তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক বিরোধী হওয়ার যোগ্যতাও তারা হারিয়েছে৷

এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর বৈঠক ডেকে হারের কারণ পর্যালোচনা করার সাংগঠনিক ভড়ংই সম্ভবত ক্ষিপ্ত করে তোলে বাম কর্মীদের৷ প্রথম পোস্টার পড়ে বাঁকুড়া জেলায় দলের দফতরের বাইরে৷ নেতাদের পরামর্শ দেওয়া হয় – এসি লাগানো গাড়ি ছেড়ে, রোদের মধ্যে পায়ে হেঁটে ঘোরার জন্য৷ সিপিএমের জেলা এবং রাজ্য নেতৃত্ব কিন্তু এই পোস্টারের কথা প্রথমে অস্বীকার করে৷ রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু চিরাচরিত ভঙ্গিতে, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন৷ এর পর পোস্টার পড়ে বিতাড়িত নেতা ও প্রাক্তন সাংসদ লক্ষণ শেঠের পূর্ব মেদিনীপুরে৷ তাতে উচ্চতর নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কথা বলার পাশাপাশি আরও গুরুতর অভিযোগ তোলা হয় যে, দলের একাংশ তলে তলে হাত মিলিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে৷

Sita Ram Yachuri
সীতারাম ইয়েচুরিছবি: UNI

এর পর সরাসরি রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর বৈঠকেই অভিযোগ তোলেন শমীক লাহিড়ি, নেপালদেব ভট্টাচার্যের মতো নেতারা৷ এবং অভিযোগ আনেন বামফ্রন্টের প্রাক্তন মন্ত্রী মানব মুখোপাধ্যায়৷ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বামফ্রন্ট সভাপতি বিমান বসু এবং রাজ্য বিধানসভায় বামফ্রন্টের নেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের বিরুদ্ধে৷ এদিকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য গত বিধানসভায় দলের বিপর্যয়ের পর যেমন দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন, এবারও তাই করেছেন৷ কিন্তু যথারীতি তাঁর দায়িত্ব ছাড়ার ইচ্ছা দলীয় অনুমোদন পায়নি৷ অন্যদিকে বিমান বসুও লোকসভা ভোটে ফ্রন্টের খারাপ ফলাফলের দায় স্বীকার করেছেন৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এসব সাংগঠনিক ছলাকলায় সাধারণ কর্মীদের আস্থা ফেরানো যাচ্ছে না৷ এমনকি যে নেতারা বর্তমান নেতৃত্বের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তাদের আদৌ সেই নৈতিক বৈধতা আছে কিনা, সেই প্রশ্ন বরং উঠছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য