1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

Flood, Bangladesh, River Erosion, Climate Change

৩ জুলাই ২০১০

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে বেড়ে চলেছে বন্যা এবং নদী ভাঙনের হার ও ভয়াবহতা৷ ফলে বর্ষাকালে পরিবেশ শরণার্থী হচ্ছে অনেকে৷ অনিশ্চয়তা আর ঝুঁকির মুখে এসব হতভাগা মানুষ৷

https://p.dw.com/p/O9iN
ফাইল ছবিছবি: AP

জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের মানুষের জন্য এক আতঙ্কের বিষয়৷ কারণ সমুদ্রতল ফুলে-ফেঁপে যে আকার ধারণ করার আশঙ্কা রয়েছে তাতে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়বে যেসব দেশ বাংলাদেশ সেগুলোর একটি৷ আর ইতিমধ্যেই সেখানে শুরু হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়া৷

ষড়ঋতুর এই দেশে আজ মূলত তিনটি ঋতুর দেখা মেলে প্রকটভাবে৷ একদিকে গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড খরা৷ দ্বিতীয় শীতকাল৷ যখন হাড় কাঁপানো শীতে জর্জরিত মানুষ৷ আর অন্যদিকে বর্ষার ঘনঘটায় ভয়াবহ বন্যার ছোবল৷

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গ্রাম নওয়াবপুর৷ বর্ষার সময় পরিণত হয় ছোট্ট একটি দ্বীপে৷ পাড় থেকে নৌকাযোগে দ্বীপে পৌঁছতে লাগে টানা দুই ঘণ্টা৷ তবে পানির উপর একটু মাথা জাগিয়ে রেখেছে কিছু বিদ্যুতের থাম আর দীর্ঘাকার গাছের দল৷ ফলে ভরসা পাওয়া যায় যে, ভুল করে অন্তত আমরা সাগরের মধ্যেখানে চলে যায়নি৷ নওয়াবপুরের ওবায়দুর রহমান বললেন, ‘‘আমি যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ি, তখন বন্যার পানি এতোটা বেশি হতো না৷ এটা যেন ক্রমেই বাড়ছে৷'' ২৬ বছর বয়সি রহমান জানান, এখন যে বন্যা মে মাসেই হানা দেয়, আগে এটা দেখার জন্য জুন-জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো৷

আর এই অসময়ের বন্যায় তলিয়ে যায় ধান, গমসহ খেতের সব ফসল৷ ইতিমধ্যে সরকার ঐ অঞ্চলকে দুর্যোগ পীড়িত এলাকা ঘোষণা করেছে৷ এখন সেখানে বাস করে একশ' মতো পরিবার৷ তাদের অনেকেই বন্যা আর নদীর ভাঙনে হারিয়েছে সর্বস্ব৷ তাদের অধিকাংশেরই প্রতিদিনের আয় এক ডলারেরও কম৷ এই হিসাবে, বিশ্বের দরিদ্রতম মানুষ এই বন্যাপীড়িত মানুষরা৷ তবে শুধু বন্যাই তো আর নয়৷ সাথে রয়েছে নদী ভাঙনের করাল গ্রাস৷

Indonesien Helfer suchen nach Überlebenden des Dammbruchs
ফাইল ছবিছবি: AP

একই গ্রামের ফায়জুর রহমান জানান, ‘‘নদী ভাঙন যেন পুরো গ্রামটাকেই উজাড় করে দেয়৷ আর সেই কারণে অন্য কোন গ্রামের মানুষ এই গ্রামের ছেলে-মেয়েদের সাথে তাদের সন্তানদের বিয়ে দেয় না৷'' তবে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বন্যা প্রতিরোধে একটি বাঁধ তৈরির মাধ্যমে৷ সাড়ে তিন মিটার উঁচু এই বাঁধ তৈরিতে সহায়তা করেছে ইউরোপের কিছু দাতা সংস্থা৷

নদী ভাঙনের ফলে ভিটে-মাটি সব খুইয়েছেন আলাল উদ্দিন৷ ফলে অন্য গ্রাম থেকে আশ্রয় নিয়েছেন নওয়াবপুরে৷ দিনমজুর হিসেবে কাজ করে কোন রকমে জীবন চালান আলাল উদ্দিন৷ তিনি বলেন, ‘‘বর্ষা মৌসুমে যখন আমি কাজ করতে বের হই, তখন শুধু একটিই ভয় থাকে যে, আমি কি ফিরে এসে আমার বউ-বাচ্চাকে দেখতে পাবো৷ কারণ যে কোন সময় পানির তোড়ে কিংবা নদী ভাঙনে ভেসে যেতে পারে সবকিছু৷''

বাংলাদেশ দুর্যোগ প্রস্তুতি কেন্দ্র - বিডিপিসি'র পরিচালক দিলরুবা হায়দারের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব সেখানে শুরু হয়েছে বহু আগেই৷ তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে৷ উদ্বাস্তু হচ্ছে অনেক বেশি সংখ্যক হতভাগা মানুষ৷ পরিণত হচ্ছে পরিবেশ শরণার্থীতে৷ তাই এখনই সময় জলবায়ু পরিবর্তন রোধে এগিয়ে আসার৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক