1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশের কৃষকের জন্য কৃষি পদযাত্রা করবেন হাজারো তরুণ

১৯ মার্চ ২০১১

খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য সামগ্রিক কৃষি সংস্কার কর্মসূচির দাবিতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়েছে কৃষি পদযাত্রা৷ আর এই পদযাত্রায় যারা অংশ নিচ্ছেন, তাদের সকলেই তরুণ৷

https://p.dw.com/p/10cTs
সামগ্রিক কৃষি সংস্কার কর্মসূচির দাবিতে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়েছে কৃষি পদযাত্রাছবি: DW/Swapan

দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাবে এই পদযাত্রা৷

বাংলাদেশকে বলা হয় কৃষির দেশ, কৃষকের দেশ৷ সেখানে খুব ভোর বেলা লাঙল নিয়ে মাঠে যান কৃষক৷ সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন, পানি দেন, বপন করেন বীজ, এরপর আস্তে আস্তে রোপিত চারা বড় হয়৷ সবুজ ফসলে ভরে যায় মাঠ৷ কখনোবা আঘাত হানে দুর্যোগ৷ এরপর সেই দুর্যোগের কবলে পড়ে সব হারানো কৃষক আবার আশায় বুক বাঁধেন৷ আবার কাঁধে লাঙল নিয়ে যান মাঠে৷ আবার স্বপ্ন ফলান৷

বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করেন, তাদের বেশির ভাগই কৃষি কাজে নিয়োজিত৷ সেই দেশে মোট দেশজ উৎপাদনে কৃষির অবদান হলো অন্তত ২০ শতাংশ৷ শ্রমশক্তি জরিপ ২০০৫-০৬ অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৫ বছরের ওপরের জনশক্তির ৪৮.১ শতাংশ কৃষিতে নিয়োজিত৷ দেশের মোট গ্রামীণ অধিবাসীর প্রায় ৩৫ শতাংশ শুধু কৃষিশ্রমের ওপর নির্ভরশীল৷ কৃষি গ্রামীণ জীবনযাত্রার প্রধানতম অবলম্বন৷ পরিসংখ্যান অনুসারে, কৃষি- কর্মসংস্থানের বৃহত্তম ক্ষেত্র, তাই দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে কৃষির ভূমিকাই সর্বাধিক৷

জলধারা, ভূমণ্ডল, মাটির ধরন, জোয়ার-ভাটার সক্রিয়তা, শস্য উৎপাদন নকশা এবং ঋতু বিবেচনায় বাংলাদেশকে ৩০টি কৃষি-প্রতিবেশ অঞ্চলে ভাগ করা হয়৷ দেশের কৃষি সমস্যা সম্বন্ধীয় প্রতিটি কৃষি-প্রতিবেশ অঞ্চলের বিভিন্ন ধরণের সমস্যা রয়েছে৷ একটি সমস্যার সাথে আরেকটি সমস্যা নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত৷ এ সব সমস্যার মধ্যে রয়েছে ১. কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার কোনো সংগঠন নেই; ২. কৃষি উপকরণের দুর্মূল্য; ৩. কৃষিতে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের সমস্যা; ৪. অপ্রতুল কৃষি সেবা; ৫. উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্যের অভাব; ৬. জলবায়ু পরিবর্তনসহ মানবসৃষ্ট কারণে কৃষি প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য বিপন্নতা ইত্যাদি৷

Reisfeld mit Vogel
আগামী ২৭ থেকে ২৯ মার্চ দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে কৃষি পদযাত্রা হবেছবি: DW/Swapan

কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, মোট জাতীয় উৎপাদনের বিপুল অবদান এবং সর্বাধিক সংখ্যক কর্মসংস্থানের উৎস হওয়া সত্ত্বেও দেশের সার্বিক চাহিদা ও কৃষির বর্তমান উৎপাদনের মধ্যে এখনো বিপুল পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে৷ বাংলাদেশের গৃহীত কৃষিনীতিতেও এর প্রতিফলন চোখে পড়বে৷ বলে রাখা ভালো, বর্তমান জাতীয় কৃষিনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল ১৯৯৯ সালে৷

আসলে দারিদ্র্য হলো কতগুলি নীতিকাঠামো ও প্রক্রিয়ার অনিবার্য ফল৷ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসতে সরকার ইতোমধ্যে তাদের নির্বাচনী ইশতাহার ও ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে৷ ইতিমধ্যে ভিশন ২০১১ বাস্তবায়নের পথে সরকার একটি পরিকল্পনাও প্রণয়ন করেছে এবং ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নের পথে রয়েছে৷ এরই মধ্যে সরকার ঘোষণা দিয়েছে, ২০১১ সালের পর আর কোন পিআরএসপি বা দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হবে না; এ সরকার ভিশন ২০২১ পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা ও পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে বাজেট তৈরি করবে৷ সরকারের এ সকল উদ্যোগ বিবেচনা করে জনকল্যাণে নীতি-কাঠামোতে বদল আনার জন্য এটি একটি সেরা সময় হতে পারে৷

আর তাই সামগ্রিক কৃষি সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণের জন্য নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের চার হাজার তরুণ এবার মাঠে নেমেছেন৷ তারা আগামী ২৭ মার্চ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে কৃষি পদযাত্রা করবেন৷ এ নিয়েই কথা বলছিলাম এই পদযাত্রার অন্যতম আয়োজক নূরুল আলম মাসুদের সঙ্গে৷ তিনি এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানালেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান প্রধান কৃষি-প্রতিবেশ অঞ্চলে স্থায়িত্বশীল কৃষির সপক্ষে তরুণ স্বেচ্ছাসেবী কর্মীবাহিনী তৈরি৷ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সিভিল সমাজ ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতি প্রদানের মধ্য দিয়ে সামগ্রিক কৃষি সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে জাতীয় ক্ষেত্রে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠাই হলো আমাদের এই পদযাত্রার মূল দুই উদ্দেশ্য৷

মাসুদ জানালেন, ‘একটি ব্যাপক উৎপাদন ক্ষেত্রকে পৃথকীকরণ, পৃথক পৃথক নীতিমালা প্রণয়ন এবং কোনো একটি বিশেষ ক্ষেত্রের ওপর অধিক গুরুত্ব প্রদানের ফলে অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া অথবা আশানুরূপ অগ্রগতি অর্জন না করার আশঙ্কা বিদ্যমান থাকে৷ ফসল খাতের তুলনায় দেশের মৎস্য, পশুসম্পদ বা বনজ খাতের অগ্রগতির বিষয়টি বিবেচনা করলে আশঙ্কাটি আরো জোরদার হয়ে ওঠে৷ জাতীয় কৃষিক্ষেত্রে টেকসই ও কার্যকর উন্নয়ন সম্ভব করে তোলার জন্য কৃষি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যেমন মৎস্য ও পশুসম্পদ, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে একযোগে কাজ করার মধ্য দিয়ে একটি সমন্বিত ও বহুমুখী জাতীয় কৃষি উন্নয়ন কৌশল প্রবর্তন করতে হবে, যার মাধ্যমে কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ক্ষেত্রে আশানুরূপ অগ্রগতি অর্জনকে সম্ভব করে তোলা যাবে৷'

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন