1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশের বিদ্যুৎবিহীন স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব

১৯ অক্টোবর ২০১০

খুদে শিক্ষার্থীরা কাজ করছে খুদে কম্পিউটারে৷ মনিটর জুড়ে আঁকাআকি৷ কেউ আঁকছে লালসবুজ পতাকা৷ কেউবা চেষ্টা করছে নিজের গ্রামটাকেই ডিজিটাল পর্দায় মেলে ধরতে৷

https://p.dw.com/p/PhcS
ক্লাসমেট পিসিতে নাম লেখাছবি: Munir Hasan

না, কোন প্রতিযোগিতায় নামেনি শিক্ষার্থীরা৷ বরং মাউস চালনা শিখতেই এই আঁকাআকি৷

শিক্ষার্থীরা যেটি ব্যবহার করছে, সেটিকে শুধু কম্পিউটার বললে কম বলা হবে৷ কেননা এগুলোর আকার আকৃতি নেহাতই ছোট, মাত্র ৭ ইঞ্চি তার মনিটর৷ আসল নাম, ক্লাসমেট পিসি৷

হিরনপুর স্কুল

ইন্টেলের দেয়া এরকম দশটি ক্লাসমেট পিসি দিয়ে কম্পিউটার ল্যাব সাজানো হয়েছে তেনুয়া হাইস্কুলে৷ নেত্রকোণার হিরনপুর গ্রামে এই স্কুলের অবস্থান৷ সেখানে নেই কোন বিদ্যুৎ, নেই গাড়ি নিয়ে চলার সার্বক্ষণিক পথ৷ কিন্তু তারপরও তেনুয়ায় শিক্ষার্থীর ভিড় লেগেই থাকে৷ এককথায় প্রায় একশ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে স্কুলে৷

আকর্ষণ ক্লাসমেট

বুঝতেই পারছেন, শিক্ষার্থীদের মূল আকর্ষণ ঐ ক্লাসমেট পিসি৷ স্কুলে সেগুলো চালানোর সুযোগ থাকে৷ তাই, এই সুযোগটা লুফে নেয় শিক্ষার্থীরা৷ কিন্তু কিভাবে চলে কম্পিউটারগুলো? কেননা বিদ্যুৎ কিন্তু নেই সেখানে৷

সৌরশক্তিতে চলে ক্লাইমেট পিসি

উত্তরটা সোজা৷ সৌরশক্তিতে চলে এসব খুদে কম্পিউটার৷ ৩০০ ওয়াট ক্ষমতার সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে, তেনুয়া স্কুলের ছাদে৷ সঙ্গে রয়েছে ব্যাটারি ব্যাকআপের ব্যবস্থা৷ তা দিয়ে অনায়াসে চালানো যায় দশটি ক্লাসমেট পিসি৷ কেননা, এদের চাহিদা খুব কম৷ মাত্র ১৫ থেকে ১৮ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করেই চলে ইন্টেলের এই উপহার৷

FLASH-GALERIE Solarbetriebene Computer in Bangladesch
তেনুয়া হাইস্কুলে কম্পিউটার ল্যাবছবি: Munir Hasan

সম্প্রতি এই স্কুল ঘুরে এসেছেন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মুনির হাসান৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানালেন এভাবে, যে অসাধারণ কাজটি এই কম্পিউটারগুলো করেছে, তা হচ্ছে স্কুলের সব শিক্ষার্থীকে ক্লাসে ফিরিয়ে এনেছে৷ একান্ত অসুস্থ না হলে এখন আর কোন শিক্ষার্থী স্কুল বাদ দেয়না৷

অফিস রাইটার

তেনুয়া স্কুলের শিক্ষার্থীরা কম্পিউটারে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা এক্সেল শেখেনা৷ ইন্টেলের প্রকল্পে চুরি করা সফটওয়্যার ব্যবহার করা যাবেনা৷ আবার মাইক্রোসফট ওয়ার্ড কেনার মতো সাধ্যিও তাদের নেই৷ তাই, ব্যবহার করা হয় ওপেন অফিস রাইটার৷ সেটি শিখেই শিক্ষার্থীদের আনন্দের শেষ নেই৷

গাইবান্ধায় ইন্টেল ল্যাব

ইন্টেল এরকম আরেকটি ল্যাব তৈরি করে দিয়েছে গাইবান্ধার একটি জুনিয়র গার্লস হাই স্কুলে৷ সেখানেও বিদ্যুৎ নেই, সুতরাং সৌরশক্তিই ভরসা৷ মাত্র পাঁচটি ক্লাসমেট পিসি রয়েছে গাইবান্ধার স্কুলটিতে৷ অবশ্য তা পেয়েই আনন্দে আত্মহারা শিক্ষার্থীরা৷

পাঁচ হাজার স্কুলে বিদ্যুৎ নেই

কিন্তু সমস্যা অন্যত্র৷ এরকম একটা দুটো সৌরশক্তি নির্ভর কম্পিউটার ল্যাব দিয়েতো চলবেনা৷ বাংলাদেশের চাহিদা যে আরো বেশি৷ দেশের অন্তত পাঁচ হাজার স্কুল-মাদ্রাসায় বিদ্যুৎ নেই৷ তাদের কি হবে? মুনির হাসান কাজ করেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক হিসেবে৷ তিনি জানালেন সরকারের চেষ্টার কথা, বিদ্যুৎবিহীন স্কুলগুলোর জন্য আমরা পাইলট প্রকল্প চালু করেছি৷ এজন্য ইন্টেল আমাদের সহায়তা করছে, আসুসের কাছেও আমরা সহায়তা চেয়েছি৷ পরবর্তীতে আমরা সরকার থেকেও সোল্যার নির্ভর কম্পিউটার ল্যাব তৈরির চেষ্টা করবো৷

খরচ কমাবে উবুন্টু

মুনির হাসানের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, একেকটি নেটবুক মানে ক্লাসমেট পিসির পেছনে খরচ হয় ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা৷ এগুলো চালাতে প্রয়োজনীয় সোলার প্যানেল সিস্টেমের দাম ১ লাখ সত্তর হাজার টাকা৷ তবে এই খরচ আরো কমানো সম্ভব৷ এজন্য ব্যবহার করতে হবে উবুন্টু৷

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে গড়তে চায় ডিজিটাল বাংলাদেশ৷ সরকারের এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে গেলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ছড়িয়ে দিতে হবে৷ এই কাজে সহায়ক হতে পারে তেনুয়া মডেল৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য