1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে খাদ্যে ভেজাল ধরতে অভিনব উদ্ভাবন

১৪ নভেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এক ধরনের লিটমাস স্ট্রিপ উদ্ভাবন করেছেন, যার মাধ্যমে একজন ক্রেতা নিজেই খাদ্যে ফরমালিন আছে কিনা, তা পরীক্ষা করে নিতে পারবেন৷

https://p.dw.com/p/38CpY
Verschiedenfarbiger Blumenkohl
ছবি: Imago/Frank Sorge

ভেজালের সমস্যা

উন্নয়নশীল দেশের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ৷ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার এ দেশে খাদ্য নিরাপত্তা একটি বড় ইস্যু৷ বেশি লাভের আশায় বিক্রেতারাখাদ্যে ভেজাল মেশাতেও পিছপাহন না৷ বাজারে যেসব খাবার, সবজি ও মৌসুমী ফল পাওয়া যায়, তার প্রায় সবগুলোতেই মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে৷ অনেকে আবার ফরমালিন মিশ্রিত বরফ বা পানি দিয়ে মাছ সংরক্ষণ করেন, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর৷ সাধারণ ক্রেতা হিসেবে গোলাম মোর্তুজা বলেন, ‘‘আমরা তো বাজার থেকে মালামাল কিনে ব্যবহার করি৷ কিন্তু কোন মাল বাজারে কীভাবে আসে, সেটা তো আমরা জানি না৷ তাই আমরা না জেনেই ভেজাল খেয়ে ফেলছি৷''

ভেজাল ধরার হাতিয়ার

আশার কথা হলো, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গবেষকরা তিন বছরের প্রচেষ্টায় এক ধরনের লিটমাস স্ট্রিপ উদ্ভাবন করেছেন, যার মাধ্যমে একজন ক্রেতা নিজেই খাদ্যে ফরমালিন আছে কিনা, তা পরীক্ষা করে নিতে পারবেন৷ বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক ড. মহিদুস সামাদ বলেন, ‘‘আমি যখন বাংলাদেশে প্রথম আসলাম, তখন দেখলাম এখানে খাবারে অনেক ভেজাল৷ তখন চিন্তা করলাম, বাইরে থেকে আমি যে শিক্ষা নিয়েছি, সেখান থেকে আমি কোনো কিট তৈরি করতে পারি কিনা, যেটা ফরমালিন শনাক্ত করতে পারে৷ আমার এখনো মনে আছে, আমি যখন এখানে ২০১৩-এ ফিরে আসলাম, তখন আমায় প্রশ্ন করা হয়েছিল, আমি কী করবো৷ আমি বলেছিলাম, একটা পেপার বেসড কিট বের করতে চাই, যেটা ফরমালিন শনাক্ত করতে পারে এবং যা খাদ্য নিরাপত্তায় সাহায্য করবে৷ ''

খাদ্যে ভেজাল ধরতে নতুন উদ্ভাবন

যে খাবারে ফরমালিনের উপস্থিতি যত বেশি থাকবে, লিটমাস পেপারটি তত বেশি গাঢ় বেগুনি রং ধারণ করবে৷ এতে করে সহজেই খাদ্যে বিষের আধিক্য শনাক্ত করা যাবে৷ বুয়েটের গবেষক সাকিব ফেরদৌস বলেন, ‘‘আমাদের উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ খুঁজে বের করা, যা ফরমালিনের সাথে বিক্রিয়া করবে৷ বিক্রিয়ার ফলে সেটা এমন একটা রং ধারণ করবে, যা স্বচ্ছ পানিতে আমরা আলাদা করতে পারবো৷''

কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মহিদুস সামাদের তত্ত্বাবধানে চলে এ গবেষণা কার্যক্রম৷ মোট ৫৫টি খাবারের উপর গবেষণার ফলাফল ও অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন তাঁরা৷ বুয়েটের প্রভাষক মো. নাজীবুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ ছিল দুটি৷ এর মধ্যে এক, সহজ হতে হবে এবং দুই, স্বল্পমূল্যের হতে হবে৷ এর জন্য আমরা যে মাধ্যমটা বেছে নিয়েছি, সেটা হলো পেপার৷ পেপার ব্যবহারের ফলে আমাদের খরচ কমে যাচ্ছে৷ আমরা হিসেব করে দেখেছি যে, এটা অল্প খরচে তৈরি করা যাবে, যা একজন বাংলাদেশি নাগরিক খুব সহজে কিনে ব্যবহার করতে পারবেন৷'' 

বাণিজ্যিক বিপণন

অসামান্য এই উদ্ভাবনটির উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে এনেছেন গবেষকরা৷ দেশীয় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রেনেটা সাধারণ মানুষের হাতে লিটমাস স্ট্রিপ পৌঁছে দিতে এরই মধ্যে উৎপাদন কাজ শুরু করেছে৷ কোম্পানির সিনিয়র ডেপুটি ম্যানেজার এম রীনাত রিজভী বলেন, ‘‘যখন আমরা দেখলাম যে, এমন একটা আবিষ্কার বুয়েট করছে, তখনই আমরা এর ব্যাপারে আগ্রহী হলাম৷ এ ধরনের বড় একটা কাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে পেরে আমরা নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করছি৷''

বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক ড. মহিদুস সামাদ বলেন, ‘‘একসময় যখন আমরা খাবারে ব্যবহারের জন্য ফরমালিনকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো, তখন এই প্রডাক্টের আর প্রয়োজন থাকবে না৷ আমি একজন উদ্ভাবক হিসেবে সেই দিনটিরই অপেক্ষায় আছি, যেদিন আমার এই প্রডাক্ট আর বাংলাদেশে ব্যবহার করতে হবে না, আমরা নিশ্চিত হবো যে, খাবারে আর ফরমালিন নাই৷''

বলা বাহুল্য, এমন খবর শুনে সাধারণ মানুষ খুশি হবেন৷ আশরাফুজ্জামান নামে এক ক্রেতা বলেন,‘‘ফরমালিনমুক্ত মাছ পাওয়া আসলে ভাগ্যের ব্যাপার৷ শুনলাম ফরমালিনচিহ্নিত করার স্ট্রিপ বের হচ্ছে৷ যদি তাই হয়, তাহলে আমরা স্ট্রিপ দিয়ে যাচাই-বাছাই করে মাছ কিনতে পারবো৷ এটা আমাদের সবার জন্য মঙ্গল হবে৷''

পূর্ণাভা লিমিটেডের সিনিয়র ডেপুটি ম্যানেজার এম রীনাত রিজভী বলেন, ‘‘এটা আমরা অনেক গুরুত্বের সাথে দেখছি৷ আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে এর চূড়ান্ত একটা ভার্সন বাংলাদেশের জনগণের হাতে পৌঁছে দিতে এবং সেটা সারা বাংলাদেশে৷''

এই স্ট্রিপ সাধারণের হাতে পৌঁছালে, কেনার আগেই খাবার পরীক্ষা করে নেয়া সম্ভব হবে৷ ফলে খাদ্যে রাসায়নিকের পরিমাণ কমে আসবে৷

সাখাওয়াৎ লিটন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য