1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা কেমন?

২১ জুন ২০১৭

বাক বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিশ্বসূচকে বাংলাদেশের অবস্থান উদ্বেগজনক বলে মনে করেন দেশের প্রথমসারির সংবাদপত্র ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের কয়েকজন সাংবাদিক৷ তাঁরা জানান, সাংবাদিকতা করতে গিয়ে নানান চাপের মুখোমুখি হতে হয়৷

https://p.dw.com/p/2f6Zh
ছবি: DW/K. Danetzki

২০১৫ সালের ১০ আগস্ট৷ বেলা  ১১টা ১৫ মিনিটে ‘আমার জীবন শঙ্কা তথা মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন' শিরোনামে একটি স্ট্যাটাস দেন দৈনিক বাংলা ৭১-এর সম্পাদক ও প্রকাশক প্রবীর সিকদার, সেখানে তিনি যে তিন জনের নাম প্রকাশ করেন তাঁদের একজন ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন৷ ওই লেখার কারণে ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় গোয়েন্দা পুলিশ সাংবাদিক প্রবীরকে তাঁদের কার্যালয়ে ধরে নিয়ে যায়৷ তখন তাঁকে আটক না করার কথা বলা হলেও রাতে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ফরিদপুরে৷ পরে জানা যায়, ফেসবুকে লেখার মাধ্যমে মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন জেলার এপিপি স্বপন পাল৷ পরের দিন আদালত প্রবীর সিকদারকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়৷

<iframe src="https://www.facebook.com/plugins/video.php?href=https%3A%2F%2Fwww.facebook.com%2Fdwbengali%2Fvideos%2F10154595583615978%2F&show_text=0&width=560" width="560" height="315" style="border:none;overflow:hidden" scrolling="no" frameborder="0" allowTransparency="true" allowFullScreen="true"></iframe>

গেল ১১ জুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে ‘একটি অসুস্থ শিশু, বিচারকের ট্রাক ও একটি মামলা' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়, যাতে মানিকগঞ্জে বিচারক মাহবুবুর রহমানের বাড়ি বদলের ট্রাকের কারণে একটি অসুস্থ শিশুকে হাসপাতালে নেওয়ার পথ রুদ্ধ হওয়ার কথা বলেন স্থানীয়রা৷ এই ঘটনা নিয়ে আদালতের এক কর্মচারী ওই শিশুর মামা এবং স্থানীয় এক সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন৷ প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হয়৷ পরে ওই প্রতিবেদনের কারণে প্রতিবেদক গোলাম মুজতবা ধ্রুব'র বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করা হয়৷ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম দাবি করে, যথাযথ ‘ব্যাকরণ' মেনে সংবাদ পরিবেশন করার পরও কোনো কারণ ছাড়াই এ মামলা করা হয়েছে৷

আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার কথা এখন প্রায়ই শোনা যাচ্ছে৷ এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৩ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এই ধারায় মামলা হয়েছে৷ ধারাটি অস্বচ্ছ বলে এরই মধ্যে অনেক সমালোচনা আছে৷ এমনকি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বলেছিলেন যে, এটি পরিবর্তন করার ব্যাপারে কাজ চলছে৷ বর্তমান এই আইনের ৫৭ ধারা অনুযায়ী, কেউ অনলাইনে কোনো লেখায় বা পোস্টে কারো মানহানি হয়েছে বলে মনে করলে তিনি লেখক বা পোস্টকারীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন৷ সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বাক বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ে বারবারই উঠে এসেছে এই ৫৭ ধারার প্রসঙ্গ৷ বৈশ্বিক পর্যায়ে যাঁরা বাক-স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করেন, তাঁরাও বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন৷ আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের হিসেবে গেল বছর বাকস্বাধীনতার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ২ ধাপ পড়েছে৷ এখন সারাবিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬৷

Mizan Vai Interview - MP3-Stereo

এ বিষয়ে দৈনিক প্রথম আলো'র সহ-সম্পাদক মিজানুর রহমান খান ডয়েচে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০০৫-০৬ সালে বিএনপি জামায়াত সরকার যেসব আইন করেছে তার অনেকগুলোই বাকস্বাধীনতার পরিপন্থি৷ তার একটি এই তথ্য প্রযুক্তি আইন৷ পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার এসে সেসব আইন তো বদলায়ইনি, বরং তথ্য প্রযুক্তি আইনটির ৫৭ ধারায় যে শাস্তি তা বাড়িয়েছে৷ এ ধরণের অপরাধ জামিনযোগ্য থেকে অ-জামিনযোগ্য করেছে৷ বিভিন্ন সময়ে আইনমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রী আইনটি সংশোধনের কথা বললেও কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না সরকারের মধ্যে, যা খুবই উদ্বেগজনক৷''

এমনকি নতুন যে ডিজিটাল আইনের কথা বলা হচ্ছে, সেখানেও এই বাকস্বাধীনতার পরিপন্থি কিছু বিষয় থেকে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মিজানুর রহমান৷ তাঁর মতে, এই ধারায় মামলা বা হয়রানির সুবিধা নিচ্ছে সরকারি দলের নেতা, কর্মী ও প্রভাবশালীরাই৷ তিনি বলেন, ‘‘৫৭ ধারা বাতিল হলেও এই ধারার বিষয়গুলো অন্য কোথাও থেকে গেলে এর সুফল পাওয়া যাবে না৷''

একই মত দ্য ডেইলি নিউ এজ-এর সম্পাদক নুরুল কবিরের৷ দেশে সাংবিধানিকভাবেই গণতান্ত্রিক কাঠামো না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এমন একটা সরকার ব্যবস্থা আছে, যেটি সাংবিধানিকভাবেই স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা৷ সরকার প্রধান, নির্বাহী বিভাগ ও আইন ব্যবস্থার প্রধান, যা বিচার ব্যবস্থার ওপর প্রভাব বিস্তারের সামর্থ জোগায়৷ কাঠামোগতভাবেই আমরা একটি অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে আছি৷''

নুরুল কবির মনে করেন, বাক বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রাজনৈতিক কাঠামোর ওপরই নির্ভর করে৷ সরকারের সমর্থনপুষ্ট বিরোধী দল ও সরকারী দল ছাড়া আর কারো রাজনৈতিক তৎপরতা সহ্য করা হয় না৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘এমন ব্যবস্থায় শাসক শ্রেণির মাঝে যে রাজনৈতিক আকাঙ্খার তৈরি হয়, তাতে সমালোচিত হলে আইনি বা বেআইনি বাধার মুখে পড়তে হয় গণমাধ্যমকে৷''

একটি শক্তিশালী বিরোধী দল থাকলে এমন অবস্থার তৈরি হতো না বলে মনে করেন তিনি৷ কিন্তু বিএনপি বাক-স্বাধীনতা বা জনগণের সমস্যার জন্য লড়া তো বহুদূর, নিজেদের সমস্যারই সমাধান করতে পারে না বলে মত নুরুল কবিরের৷

সরকার বা রাজনৈতিক চাপ সামলানোর জন্য সংবাদমাধ্যমের অপেশাদার ব্যবস্থাকেও দায়ী করছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী৷

‘‘যে কোনো সরকারগণমাধ্যমের ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করে যেন তার পক্ষে লেখা হয়৷ সরকারের কর্মকর্তারা চাপ দেন, রাজনৈতিক নেতারা চাপ দেন৷ প্রশ্ন হলো সেই চাপ আপনি নেবেন, না অগ্রাহ্য করবেন'' বলছিলেন তিনি৷ তাঁর মতে, সংবাদ মাধ্যমের মালিকানাসমস্যা একটি বড় সমস্যা৷ 

‘‘অসৎ, দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক থেকে শুরু করে সংবাদপত্র বোঝেন না এমন লোকজন এর মালিক হয়েছেন৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্পাদকের চেয়ারেও বসেছেন৷ চাপটা অগ্রাহ্য করা সম্ভব হয়, তখন যখন এই ধরণের মালিকানা না থাকে৷''

ডয়চে ভেলে আয়োজিত গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে যোগ দিতে আসা বাংলাদেশের এই সিনিয়র সাংবাদিকরা মনে করেন, সরকারের উচিত হবে বাক-স্বাধীনতার যত আইনি বাধা আছে, তা দূর করা৷ একইসঙ্গে দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রভাবশালীদের ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করে ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা বাড়ানোর পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তাঁরা৷

এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷