1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে মিয়ানমার

১৬ জানুয়ারি ২০১৮

বাংলাদেশ প্রতি সপ্তাহে ১৫ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়ার প্রস্তাব দিলেও মিয়ানমার দেড় হাজার নিতে সম্মত হয়েছে৷ মঙ্গলবার দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে মিয়ানমার৷

https://p.dw.com/p/2qvnj
ছবি: Reuters/A. Abidi

মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক শেষে এই ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তি সই হয়৷ বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব এম শহীদুল হক এবং মিয়ানমারের পক্ষে সে দেশের পররাষ্ট্রসচিব মিন্ট থো চুক্তিতে সই করেন৷

ডয়চে ভেলেকে চুক্তির বিস্তারিত জানান মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান৷ টেলিফোনে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব ছিল মিয়ানমার যেন প্রতি সপ্তাহে ১৫ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়৷ কিন্তু মিয়ানমার বলেছে, এজন্য তাদের প্রস্তুতি নেই৷ তারা সপ্তাহে ১৫শ' করে রোহিঙ্গা ফেরত নিতে সম্মত হয়েছে৷ তিন মাস পরে রিভিউ করে এই সংখ্যা বাড়বে৷ বাড়ানো হবে এমনভাবে যাতে তারা দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে পারে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘২২ জানুয়ারি থেকে প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার যে কথা সংবাদমাধ্যম বলছে তাতে বোঝার ভুল আছে৷ ২৩ নভেম্বরের চুক্তিতে বলা হয়েছে দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে৷ আমরা আগেই ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তির মাধ্যমে তা শুরু করলাম৷ ঠিক কবে থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া শুরু হবে তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছেনা৷’’

ঠিক কবে থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া শুরু হবে তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছেনা: রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জানান, ‘‘এটা বাস্তবায়ন করতে ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে৷ ভেরিফিকেশন ছাড়া মিয়ানমার কাউকে ফেরত নেবেনা৷ তারা এখান থেকে নিয়ে ক্যাম্পে রাখবে৷ সেখানে ভেরিফিকেশন শেষ হওয়ার পর নিজ নিজ গ্রামে ফেরত পাঠাবে৷ আমাদের পক্ষ থেকে একটা ভেরিফিকেশন হয়েছে, তবে তা মিয়ানমারের কাছে পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য হয়নি৷ এবার আমরা দুই পক্ষ মিলে একটা ভেরিফিকেশন ফরম তৈরি করেছি৷ সেই ফরম পূরণ করেই ভেরিফিকেশন হবে৷ বাংলাদেশের পাঁচটি পয়েন্ট থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হবে৷ আর মিয়ানমার দু'টি পয়েন্ট থেকে তাদের রিসিভ করবে৷’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে শহীদুল হক বলেন, ‘‘রোহিঙ্গারা কোনো পণ্য নয় যে আমরা প্যাকেট করে পাঠিয়ে দেব৷ তারা মানুষ৷ তাদের নিরাপত্তা, তাদের অধিকার নিশ্চিত না হলেতো আমরা জোর করে ফেরত পাঠাতে পারি না৷’’

২৩ নভেম্বরের সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, মিয়ানমার ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর ও গত বছরের ২৫ আগস্টের পরে যারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে তাদের ফেরত নেবে৷ ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট পর্যন্ত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে৷ আর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে৷ এছাড়া, আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা ২০১৬ সালের অক্টোবরের আগে থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল৷ এই চার লাখকে এই চুক্তির অধীনে ফেরত নেয়া হবে না৷

মিয়ানমার এরইমধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিয়ে সাময়িক আশ্রয় দেয়ার জন্য একটি কেন্দ্র তৈরির কথা জানিয়েছে৷ তবে রোঙ্গিাদের জ্বালিয়ে দেয়া ঘর বাড়ি এখনো নতুন করে গড়ে তোলা বা মেরামতের কোনো উদ্যোগ নাই৷ তাদের নিরাপত্তা ও নাগরিকত্বের কী হবে তাও স্পষ্ট নয়৷

নির্বাচনে রোহিঙ্গা ইস্যুকে ব্যবহার করা হবে: শহীদুল হক

মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার কাছে এই ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট পরিষ্কার নয়৷ মিয়ানমার ৩০ হাজার জনের জন্য ক্যাম্প করেছে তাঁবু দিয়ে৷ ওখানে রোহিঙ্গারা গিয়ে কী করবে৷ তাদের কি নাগরিকত্ব দেয়া হবে? তাদের নিরাপত্তা কী হবে৷ তারা কি ঘরবাড়ি ফিরে পাবে? রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইসবের কনফিডেন্স বিল্ডিং-এর কাজই এখনো হয় নাই৷’’

তিনি বলেন, ‘‘তারা এখন সপ্তাহে ফেরত নিতে চায় দেড় হাজার, কিন্তু মিয়ানমার থেকে একমাসে এসেছে সাত লাখ৷ এক মাসে যারা আসতে বাধ্য হয়েছে তাদের ফেরত নিতে দুই বছর লাগবে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়৷ আসলে মিয়ানমার সময়ক্ষেপণ করতে চাইছে৷ তারা এটাকে ২০১৯-২০ সাল পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে চায়৷ কারণ নির্বাচনে রোহিঙ্গা ইস্যুকে ব্যবহার করা হবে৷ সামরিক বাহিনী সমর্থিত ইউএসডিপি (ইউনিয়ন সলিডারিটি এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি) যাতে রোহিঙ্গা বিরোধী অবস্থান প্রদর্শন করে এককভাবে ক্ষমতায় যেতে পারে৷’’