1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলায় সফল হবে আম আদমি পার্টি?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৯ মার্চ ২০২২

পাঞ্জাবে জয়ের পর আম আদমি পার্টির নজর পশ্চিমবঙ্গেও৷ ইতিমধ্যে সংগঠন গোছানোর তোড়জোড় শুরু করেছে তারা৷ বাংলায় কি সফল হবে আপ?

https://p.dw.com/p/48jHI
Aam Aadmi Party is trying to make a footprint in Bengal
ছবি: Payel Samanta/DW

ভারতের রাজনীতিতে নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার নাম আম আদমি পার্টি৷ এতদিন তারা দিল্লিতে সরকার চালাচ্ছিল৷ আধা রাজ্য হলেও দিল্লির শাসন দেশের নজর কেড়েছে৷ সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল পাঞ্জাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ক্ষমতা দখল করেছে৷ এই জয়ে উৎসাহিত নেতৃত্ব অন্য রাজ্যে সংগঠন বিস্তারে তৎপর হয়েছে৷ এই তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গও৷

আম আদমি পার্টির নির্বাচনী প্রতীক ঝাঁটা৷ দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ জনমুখী প্রশাসন আপ-এর মডেল, যা ইতিমধ্যেই তারা দিল্লিতে বাস্তবায়িত করেছে৷ সেখানকার সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মহল্লা ক্লিনিক, বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থা জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছে৷ এই মডেল সামনে রেখে পাঞ্জাবে বিপুল জয় পেয়েছে আপ৷ এখন তাদের নজরে গুজরাত, হিমাচলপ্রদেশের বিধানসভা ভোট৷ পশ্চিমবঙ্গে আগামী বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়তে চায় তারা৷

সেই লক্ষ্যে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে কেজরির দল৷ গত রবিবার তারা কলকাতায় পদার্পণ যাত্রার আয়োজন করেছিল৷ ইতিমধ্যে জেলায় জেলায় সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে৷ মিসড কল দিয়ে সদস্য হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারেন যে কেউ৷ সঙ্গে সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে সদস্যপত্র বা ফর্ম৷ কলকাতা ও জেলায় রীতিমতো ক্যাম্প বসিয়ে সদস্য নেওয়া হচ্ছে৷

আম আদমি পার্টি এখনো গ্রামাঞ্চলে ততটা পরীক্ষিত নয়: নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়

সূত্রের খবর, আম আদমি পার্টির রাজ্য কমিটি গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে৷ খোঁজা হচ্ছে রাজ্য দপ্তরের জন্য নতুন কার্যালয়৷ সবটাই চলছে বেশ নীরবে৷ এর আগের দফায় আপ হইহই করে পশ্চিমবঙ্গে নামলেও মুখ থুবড়ে পড়ে৷ এবার তাদের কতটা সম্ভাবনা? রাজনৈতিক বিশ্লেষক নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, "পাঞ্জাবে জিতলেও আম আদমি পার্টি এখনো গ্রামাঞ্চলে ততটা পরীক্ষিত নয়৷ এটি মূলত নাগরিক অঞ্চলের দল৷ তাই পাঞ্জাবে ভালো ফল করলেও উত্তরাখণ্ডে ব্যর্থ হয়েছে৷ একই কারণে পশ্চিমবঙ্গ তাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম৷”

এ রাজ্যের গত কয়েকটি নির্বাচনে দেখা গিয়েছে, শাসকের বিরুদ্ধে কোনো শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি৷ লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি সেই জায়গা নিলেও পরবর্তীতে তারা জমি হারিয়েছে৷ আম আদমি পার্টি কি সেই জায়গা নিতে পারবে? তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কেজরিওয়ালের সুসম্পর্কের কথা সুবিদিত৷ যদিও আপ-এর উত্তর ২৪ পরগনার নেত্রী তুলিকা অধিকারীর বক্তব্য, "দু'জনের সুসম্পর্ক ব্যক্তিগত স্তরে৷ এর কোন রাজনৈতিক তাৎপর্য নেই৷ আপ পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়বে৷”

যদিও প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কেজরিওয়ালের দলকে আমল দিতে চাইছে না তৃণমূল৷ দলের শীর্ষ নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, "যে কোনো দল যে কোনো রাজ্যে সংগঠন গড়ে তুলতে পারে৷ তবে আপ বাংলায় ফ্যাক্টর হবে না৷ এখানে তৃণমূলের কোনো বিকল্প নেই৷”

পর্যবেক্ষকদের মতে, আম আদমি পার্টি জনকল্যাণের কথা বলে প্রচার চালায় যা তৃণমূল সরকারেরও মূল ফোকাস৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে একগুচ্ছ জনমুখী প্রকল্প চালু করেছেন৷ নীলাদ্রি বলেন, "আপ যে কথা বলে মানুষকে কাছে টানবে, সেই জায়গাটা আগেই তৃণমূল দখল করে রেখেছে৷ এর সঙ্গে রয়েছে নেতৃত্বের প্রশ্ন৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো এত শক্তিশালী একজন নেত্রী রয়েছেন বাংলায়৷ তাঁর বিরুদ্ধে আপ-কে কে নেতৃত্ব দেবেন?”

বিপ্লবের স্লোগান তুলে পশ্চিমবঙ্গে সুবিধা হবে না: তন্ময় ভট্টাচার্য

বিকল্প মুখ তুলে আনা সহজ কাজ নয়৷ ইতিমধ্যেই নেতার খোঁজ শুরু করেছে কেজরিওয়ালের বঙ্গ ব্রিগেড৷ কিন্তু একেবারে শূন্য থেকে শুরু করে তৃণমূলের শক্তিশালী সংগঠনকে কি চ্যালেঞ্জ করা যায়? বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, রাজ্যের মানুষের কাছে নিজেদের প্রতীক চেনাতেই অনেক সময় লেগে যাবে৷ সেক্ষেত্রে ভোটে জেতা খুবই কঠিন৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রামীণ এলাকায় কাজটা আরো চ্যালেঞ্জিং৷

পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, আম আদমি পার্টি কিছুটা জমি দখল করতে পারলে তাতে আখেরে সুবিধা হবে তৃণমূলের৷ গোয়াতে যেভাবে বিরোধী ভোট বিভাজনের সুযোগে বিজেপি ক্ষমতা দখল করতে পেরেছে, বাংলায় তার পুনরাবৃত্তি হতে পারে তৃণমূলের পক্ষে৷ জাতীয় স্তরে আপ বৃদ্ধি পেলে একই ফর্মুলায় বিজেপির সুবিধা৷ পশ্চিমবঙ্গে যদি বাম, কংগ্রেস ও বিজেপির সঙ্গে নতুন একটি শক্তি বিরোধী পরিসরে উপস্থিত হয়, তা হলে ভোট ভাগাভাগি হবে৷

আম আদমি পার্টির আহ্বায়ক কেজরিওয়াল বলেছেন, মানুষের কল্যাণ করলেই বিপ্লব হবে৷ মিছিলে আওয়াজ উঠেছে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ'৷ বামপন্থীদের চেনা স্লোগান কি তবে চুরি হয়ে যাবে? এই প্রশ্নে সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের আক্রমণাত্মক জবাব, ‘‘বিজেপির আর একটা মুখ আপ৷ যেখানে বিজেপি দুর্বল, সেখানে তাদের সাফল্য৷ তাই বিপ্লবের স্লোগান তুলে পশ্চিমবঙ্গে সুবিধা হবে না৷ এদের জনমোহিনী রাজনীতিতে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিই হয়, সেটা মানুষ বুঝতে পারবে৷”