1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাইডেনের শপথে ঐক্যের বার্তা

২১ জানুয়ারি ২০২১

বাইডেনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বিশাল ভিড় ছিল না, তাও কয়েকজন রাস্তায় নেমেছিলেন তাঁর সমর্থনে বা রাগ প্রকাশ করতে

https://p.dw.com/p/3oDcW
অ্যামেরিকার ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হলেন জো বাইডেন। ছবি: Jim Lo Scalzo/UPI Photo/imago images

ডনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেনের মধ্যে ফারাক কোথায় তা শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান ও তার পরের ঘটনাই বলে দিল। কোনো চিত্রনাট্যকারও সম্ভবত এর থেকে ভালোভাবে তা বোঝাতে পারতেন না।

বাইডেন দিন শুরু করেছিলেন চার্চে গিয়ে। সেখানে তাঁর সঙ্গে শুধু তাঁর পরিবারই ছিল না, ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং ন্যান্সি পেলোসির মতো কংগ্রেসে গুরুত্বপূর্ণ ডেমোক্র্যাট নেতারা। ছিলেন রিপাবলিকান নেতা মিটচ ম্যাকনেলও। বোঝা যাচ্ছিল, ডেমোক্র্যাট তো বটেই, রিপাবলিকানদের সহযোগিতাকে কতটা গুরুত্ব দেন বাইডেন।

ট্রাম্প অবশ্য প্রটোকলের তোয়াক্কা করেননি। বাইডেনের শপথে যাননি। সকালেই তিনি ফ্লোরিডা চলে গেছেন। এর আগে ১৮৬৯ সালে অ্যান্ড্রু জনসন তাঁর উত্তরসূরির শপথে যাননি। তিনিই হলেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যাঁকে ১৮৬৮-তে ইমপিচ করা হয়েছিল।

বুধবার ট্রাম্প মেরিন হেলিকপ্টার নিয়ে জয়েন্ট বেস অ্যান্ড্রুজে যান। তারপর শেষবারের মতো এয়ারফোর্স ওয়ানে চেপে ওয়াশিংটন ছাড়েন। যখন তিনি বিমানে উঠছেন, তখন স্পিকারে বাজছে, ফ্রাঙ্ক সিনাত্রার 'মাই ওয়ে'।

দর্শক ছাড়াই

অন্যবারের তুলনায় এবারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান ছিল একেবারেই আলাদা। ক্যাপিটলে দর্শক নেই, অতিথির সংখ্যা কম। সেই জায়গায় ছিল রাশি রাশি জাতীয় পতাকা ও ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা। একে করোনা, তার উপর গত ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে তাণ্ডবের পর আর কোনো ঝুঁকি নেয়া হয়নি। ওয়াশিংটন ডিসি ছিল প্রায় বন্ধ।

খালি একটা জায়গায় অল্প কিছু মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। সেটা হলো হোয়াইট হাউসের কাছে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার প্লাজা। একসময় যা ছিল প্রতিবাদের জায়গা, এদিন তা বদলে গিয়ে হলো উৎসবের স্থল। ডিডাব্লিউর ওয়াশিংটন স্টুডিওর প্রধান ইনেস পোল জানাচ্ছেন, বাইডেন শপথ নেয়ার সময় সেখানে মানুষ চিৎকার করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন।

অল্প কয়েকজন ক্যাপিটলের কাছাকাছি যেতে পেরেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন ড্রিউ রায়ান। তিনি নিউ জার্সি থেকে ওয়াশিংটন এসেছেন। ডিডাব্লিউকে তিনি বললেন, ''বুধবার যা হলো, তা রাজনীতিতে ছোট পদক্ষেপ, কিন্তু আমাদের দেশের জন্য বিশাল ব্যাপার।''

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নার্স জানিয়েছেন, তিনি হোয়াইট হাউসে এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানাচ্ছেন। ট্রাম্প দেশের প্রচুর ক্ষতি করেছেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে তার প্রভাব পড়েছে। তিনি দেশের মানুষের ক্ষতি করে গেছেন। তাঁর বক্তব্য, ''আমি জানি না, এই অবস্থা থেকে আর ফিরতে পারব কি না, তবে আমি জানি, পারলে বাইডেনই পারবেন। তিনি দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন।''

বাইডেনের ভাষণেও

বাইডেনের ভাষণেও দেশকে এক করার প্রসঙ্গ ছিল। বাইডেন বলেছেন, তিনি অ্যামেরিকার সব নাগরিকের প্রেসিডেন্ট। যে সাত কোটি ৪০ লাখ মানুষ ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন, তাঁদেরও প্রেসিডেন্ট তিনি। বাইডেন বলেছেন, অ্যামেরিকার মানুষের মধ্যে যে গভীর বিভাজন তৈরি করা হয়েছে, তিনি তার মোকাবিলা করবেন। নতুন প্রেসিডেন্ট বলেন, ''এক হয়ে আমরা এটা করতে পারি। একে অন্যকে শত্রু হিসাবে নয় বরং প্রতিবেশী হিসাবে দেখুন।'' করোনার বিরুদ্ধেও এক হয়ে লড়াই করার উপর জোর দিয়েছেন বাইডেন। তাঁর আবেদন, ''রাজনীতি ভুলে এক হয়ে আমরা যেন করোনার বিরুদ্ধে লড়তে পারি।''

ট্রাম্পের সমর্থকরা অবশ্য বাইডেনের কথায় প্রভাবিত হচ্ছেন না। টেনেসি থেকে ওয়াশিংটন ডিসি এসেছেন রেন্ডল টেরি। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হিসাবে বাইডেন ভয়ঙ্করভাবে ব্যর্থ হবেন। তাঁর মতে, ট্রাম্প এমনিতে রুক্ষ, কিন্তু তাঁর নীতি ছিল ঠিক। তিনি কর কম করেছেন। কম বিধিনিষেধ চাপিয়েছেন। অ্যামেরিকার মানুষকে কাজ ফিরিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণের সীমান্ত সুরক্ষিত করে অনুপ্রবেশ থামিয়েছেন। বাইডেন যতটা পারবেন, এই সব নীতির পরিবর্তন করবেন। তাতে মার্কিন নাগরিকদের কষ্ট বাড়বে।

ঐক্যে জোর

ট্রাম্প ও বাইডেনের কথার সুরেই প্রচুর প্রভেদ।

ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পলিটিক্সের রাজনৈতিক বিশ্লেষক জে মাইলস কোলম্যান ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''বাইডেন জানিয়েছেন, তিনি সব মার্কিন নাগরিকের প্রেসিডেন্ট। এরকম কথা আমরা গত চার বছরে শুনিনি। প্রোসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথম ভাষণে বাইডেন ঐক্যের উপর জোর দিয়েছেন। এটা হলো তাঁর দীর্ঘ যাত্রার পথে প্রথম পদক্ষেপ। তবে তাঁর হাতে কোনো যাদুদণ্ড নেই। তাই তিনি বলামাত্রই ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে এমন নয়। কিন্তু এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বার্তা, যা ট্রাম্প দেননি।''

এমিলি গর্ডিন ও  জিমেনওস্কি এই রিপোর্ট তৈরিতে সাহায্য করেছেন।

কার্লা ব্লেইকার/জিএইচ